মেয়ে সেজে লুঠ, রাতভর খুঁজে ধৃত ৫

রাত তখন বেশ গভীর। জাতীয় সড়ক দিয়ে সাঁ সাঁ করে লরি ছোটাচ্ছিলেন চালক। বিরুডিহা-রাজবাঁধের মাঝামাঝি আসতেই দূরে দেখলেন এক মহিলা ব্যস্ত হয়ে হাত নাড়িয়ে গাড়ি থামাতে বলছেন। কাছে এসে লরি থামাতেই চক্ষু চড়কগাছ। মেয়ে কোথায় এ তো ছেলে। মুহূর্তের মধ্যে আশপাশের ঝোপঝাড় থেকে বেরিয়ে পড়ে আরও জনাকয়েক যুবক। শুরু হয় মারধর, লুঠপাট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাঁকসা শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৫৭
Share:

রাত তখন বেশ গভীর। জাতীয় সড়ক দিয়ে সাঁ সাঁ করে লরি ছোটাচ্ছিলেন চালক। বিরুডিহা-রাজবাঁধের মাঝামাঝি আসতেই দূরে দেখলেন এক মহিলা ব্যস্ত হয়ে হাত নাড়িয়ে গাড়ি থামাতে বলছেন। কাছে এসে লরি থামাতেই চক্ষু চড়কগাছ। মেয়ে কোথায় এ তো ছেলে। মুহূর্তের মধ্যে আশপাশের ঝোপঝাড় থেকে বেরিয়ে পড়ে আরও জনাকয়েক যুবক। শুরু হয় মারধর, লুঠপাট।

Advertisement

বুধবার রাতে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে এমন ছিনতাইয়ের অভিযোগ পেয়ে প্রমাদ গোনে কাঁকসা থানার পুলিশ। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই টহলদার ভ্যান নিয়ে বিরুডিহার দিকে রওনা দেয় তারা। তবে পুলিশের আসার খবর পেয়েই ওই জায়গা ছেড়ে ধাঁ হয়ে যায় ছিনতাইকারীরাও। কিন্তু হাল না ছেড়ে আশপাশের হোটেলে খোঁজখবর শুরু করে পুলিশ। অভিযোগকারী লরি চালকের কাছ থেকে আরও পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনাও শোনে। তারপরে রাতভর অপেক্ষার পরে বৃহস্পতিবার সকালে পানাগড় স্টেশন থেকে ওই দুষ্কৃতীদের পাঁচ জনকে ধরে পুলিশ। তবে পুলিশের হাত ফসকে পালিয়েছে আরও তিন দুষ্কৃতী।

পুলিশ জানায়, ওই লরি চালকের অভিযোগ পেয়ে বিরুডিহা এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলা হয়। কিন্তু পুলিশের গাড়ি দেখেই রেললাইনের ধারের খেতে লুকিয়ে পড়ে ওই ছিনতাইকারীরা। বড় ঘাসে ভরা খেতে ঢুকে টর্চ নিয়ে রাতভর তল্লাশি চালায় পুলিশ। কিন্তু কারও টিকিও মেলেনি। এরপরেই দুষ্কৃতীদের পাকড়াও করতে ছক কষতে শুরু করে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে তাঁরা ঠিক করেন রাতে খেতে লুকিয়ে থাকলেও সকালে নিশ্চয় বোর হবে দুষ্কৃতীরা। সেই মতো বিরুডিহার কাছে পানাগড় রেল স্টেশন ও রাজবাঁধ স্টেশনে মোতায়েন করা হয় পুলিশ কর্মীদের। পুলিশের অনুমান ছিল, সারা রাত ওই এলাকায় খোঁজাখুজির পরে ছিনতাইকারীরা জাতীয় সড়কের দিকে ফিরবে না আর। তাছাড়া দিনের আলোয় ওই এলাকা যথেষ্ট জনবহুলও। ফলে প্রথম লোকাল ঢোকার আগেই সাদা পোশাকে পানাগড় স্টেশন হাজির হয় পুলিশ।

Advertisement

এরপরেই জালে পড়ে পাখি। ভোর হতেই পানগড় স্টেশনের দিকে হেঁটে আসতে থাকে পাঁচ যুবক। তাদের গেখেই সন্দেহ হয় পুলিশের। পুলিশ কর্মীদের দাবি, খুঁটিয়ে দেখতেই চোখে পড়ে ওই পাঁচ যুবকের জামা, প্যান্টে কাদা লেগে রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে ঘাসও। এরপরেই পুলিশের সন্দেহ বেড়ে যায়। কারণ, যে খেতগুলিতে পুলিশ সারারাত খোঁজাখুজি করেছিল সেখানেও কাদা ছিল। এরপরেই ওই পাঁচ জনকে আটক করে কাঁকসা থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করতেই কথায় অসঙ্গতি ধরা পড়ে বলে পুলিশের দাবি।

পুলিশ জেরায় জেনেছে, ধৃত পাঁচ জনেরই বাড়ি বর্ধমানে। তবে ওই চক্রের সঙ্গে যে আরও তিনজন জড়িত ছিল, তাদের ধরতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ আরও জেনেছে, বাসিন্দা শেখ ডালিম এই চক্রের প্রধান। এই ডালিমই কখনও নাইটি পড়ে, আবার কখনও চুড়িদার বা শাড়ি পড়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে লরির চালকদের প্রলোভন দেখিয়ে গাড়ি দাঁড় করাত। আরও দু’জন শেখ ইশরাফুল ও শেখ সানি ছিল তার সঙ্গী। গাড়ি থেকে চালক নামার সঙ্গে সঙ্গেই সবাই মিলে চালককে মারধর শুরু করত। গাড়ির চালকের কাছ থেকে নগদ টাকা, গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি করত এরা। তাছাড়া গাড়িতে কোনও মূল্যবান সামগ্রী থাকলে সেগুলিও চুরি করত।

বৃহস্পতিবার ধৃতদের আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। পুলিশের দাবি, ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই চক্রের সঙ্গে আরও যারা জড়িত তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন