যানজটেই আটকে শহর, বলছেন বাসিন্দারা

সম্প্রতি ‘বর্ধমান’ সংস্করণে ‘আমার শহর’ প্রতিবেদনে আমরা বর্ধমান শহরের কিছু ফেলে আসা ইতিহাস, মুখে-মুখে প্রচলিত গল্প জড়ো করে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। একইসঙ্গে জানতে চেয়েছিলাম আপনাদের প্রতিক্রিয়াও। আমাদের দফতরে পৌঁছনো চিঠিগুলিতে কেউ আরও সাল-তারিখ ধরে তথ্য দিয়ে আমাদের জানার পরিধি বাড়িয়েছেন, কেউ শহরের অন্য নানা সমস্যা সামনে এনেছেন। আজ আপনাদের চিঠির কয়েকটি প্রকাশ করা হল:

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৪ ০১:০১
Share:

সংস্কারের অভাবে বেহাল বাঁকা নদী। ছবি: উদিত সিংহ।

সম্প্রতি ‘বর্ধমান’ সংস্করণে ‘আমার শহর’ প্রতিবেদনে আমরা বর্ধমান শহরের কিছু ফেলে আসা ইতিহাস, মুখে-মুখে প্রচলিত গল্প জড়ো করে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছিলাম। একইসঙ্গে জানতে চেয়েছিলাম আপনাদের প্রতিক্রিয়াও। আমাদের দফতরে পৌঁছনো চিঠিগুলিতে কেউ আরও সাল-তারিখ ধরে তথ্য দিয়ে আমাদের জানার পরিধি বাড়িয়েছেন, কেউ শহরের অন্য নানা সমস্যা সামনে এনেছেন। আজ আপনাদের চিঠির কয়েকটি প্রকাশ করা হল:

Advertisement

অস্থি জমত, তাই অস্থিক

Advertisement

বর্ধমান স্বামী অস্থিক গ্রামে বেশ কয়েকদিন ছিলেন বলে কথিত আছে। গ্রামটির স্থান নাম নিয়ে বর্ধমান বিশেষজ্ঞ সুধীর চন্দ্র দে’-র অনুমান স্তূপীকৃত মৃতদেহের অস্থি জমা হয়ে থাকত ওই স্থানে, সেই থেকেই গ্রামটির নাম ‘অস্থিক’। জেলার লৌকিক দেব-পুজোর সঙ্গেও শহরের যোগ প্রাচীন। এখনও সর্বমঙ্গলা দেবীর পুজো করেন রায়ান ও বেগুড গ্রামের পুরোহিতেরা। মুঘল ইতিহাসের সঙ্গেও শহরের যোগ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, জাহাঙ্গীরের আমলে শহরের নাম ছিল ‘রাঢ়-এ-দেওয়ান।’ শুধু তাই নয় জাহাঙ্গীর বাংলার শাসক মানসিংহকে সরিয়ে কুতুবদ্দিন খান কোকতালাশকে সুবেদার ও ওয়াজির খানকে দেওয়ান করে পাঠান। কোকতালাসের সঙ্গে ১৬০৭ খ্রিস্টাব্দে শের আফগানের যুদ্ধ হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন উপনিবেশিক ইতিহাসের সূত্রে শহরের বিভিন্ন স্থানের নাম বদলেছে। যেমন, বর্তমানে যা বিজয় তোরণ (কার্জন গেট) নামে পরিচিত, সেটির একসময় নাম ছিল ‘স্টার অফ ইন্ডিয়া’।

সর্বজিত্‌ যশ, বর্ধমান ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব কেন্দ্রের সম্পাদক

পার্কিংয়ের জায়গা চাই

রাস্তা ছাড়ুন, অফিস যাব-- হাসপাতালের সামনে রোগীর আত্মীয়দের এমন কথা বলা যায় না। অথচ সমস্যা অস্বীকার করারও উপায় নেই। আমার কর্মস্থলে যেতে হলে ঘোষবাগানের উপর দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু রাস্তার উপর চারটি নার্সিংহোম থাকা সত্ত্বেও গাড়ি পার্কিং-এর কোনও নির্দিষ্ট জায়গা নেই। কার্জন গেট থেকে রাজবাটির দিকে যেতে গেলে দেখা যায় ফুটপাথের উপর জমিয়ে বসেছেন দোকানিরা। শহরের যানজট কমাতে তেমন কোনও উদ্যোগ চোখে পড়ে নি। টোটো গাড়ির রুট এখনও পর্যন্ত তৈরি হল না। শহরের হাজার দশেক রিকশাওয়ালাদের পুনর্বাসন দেওয়ার দাবিও জানাচ্ছি। হঠাত্‌ করে বেশ কিছু বাড়িকে বাণিজ্যিক লাইসেন্স দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের এ দিকে একটু নজর দেওয়া উচিত। একজন নাট্যকর্মী হিসাবে প্রশাসনের কাছে আমাদের দাবি, নাটকের ফ্লেক্স টাঙানোর জন্য একটি জায়গা নির্দিষ্ট দেওয়া হোক।

দেবেশ ঠাকুর, নাট্যকর্মী।

বাঁকা নদী সংস্কার চাই

বেশ কয়েকবছর ধরে শহরের জলা ও জলাশয় দ্রুত সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। সম্প্রতি নার্স আবাসনের কাছে একটি বড় জলা ভরাট করে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ কাজ চালাচ্ছে। বাঁকা নদী সংস্কারও খুবই জরুরি। আমি নিজে বছর দেড়েক আগে বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থার কর্ণধার, বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়কে লিখিত ভাবে বাঁকা নদী সংস্কারের পরিকল্পনা জমা দিয়েছি। কিন্তু পুরসভা বা বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা কারও কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি।শহরকে যানজট মুক্ত করতে জিটি রোড থেকে বাস সরানো হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার বাসগুলি সকাল সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর জিটি রোড দিয়েই যাতায়াত করে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা হলে ভাল হয়।

প্রণবকুমার চক্রবর্তী, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী

শিকড়কে জানতে হবে

বর্ধমান শহরের প্রায় প্রতিটি পাড়াতেই ছড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। নির্দিষ্ট করে বললে ‘অবহেলিত ইতিহাস’। কিন্তু এত সমৃদ্ধ একটি শহরের পর্যটন ব্যবস্থা বলেই প্রায় কিছু নেই। অথচ প্রতি দিনই ভিন জেলা ও ভিন রাজ্য থেকে সাধারণ মানুষ নানা প্রয়োজনে এই শহরে আসেন। কেউ আসেন পড়াশোনা করতে, কেউ চাকরি করতে, কেউ বা চিকিত্‌সার প্রয়োজনে। তাই শহরের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা নানান ঐতিহাসিক নির্দশন ঢেলে সাজিয়ে তুলতে পারলে শহরের অনেক বেকার যুবক রোজগারের পথ খুঁজে পাবে। ‘বর্ধমান’ শব্দটির অর্থ বেড়ে চলা। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই শহর নানা সমস্যায় সঙ্কুচিত হয়ে রয়েছে। অথচ, কিছু রাস্তা সারাই করে, নিকাশি নালা সাফাই করেই প্রশাসন মনে করছে অনেক কাজ করে দিলাম! আগে শহরের শিকড়কে জানতে হবে। তার জন্য পর্যটনের সুনিদিষ্ট পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। কিন্তু সেই সেই বুদ্ধি দেওয়ার লোক কোথায়?

শান্তনু পাঁজা, ব্যবসায়ী

কেমন লাগছে আমার শহর? নিজের শহর নিয়ে
আরও কিছু বলার থাকলে আমাদের জানান।
ই-মেল পাঠান district@abp.in-এ।
subject-এ লিখুন ‘আমার শহর বর্ধমান’।
অথবা চিঠি পাঠান ‘আমার শহর’, বর্ধমান বিভাগ,
জেলা দফতর আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা ৭০০০০১ ঠিকানায়।
প্রতিক্রিয়া জানান এই ফেসবুক পেজেও:

www.facebook.com/anandabazar.abp

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন