রাস্তা নেই, জমি বেচে শহরে পাড়ি বাসিন্দাদের

জমির দাম বাজার দরের তুলনায় অনেক কম। তবুও পাওয়া যাচ্ছে না ক্রেতা। শহরের সঙ্গে যোগাযোগের উপযুক্ত রাস্তা না থাকায় এমনই অবস্থা কেতুগ্রামের নবগ্রাম, কাঁকুরহাটি, বেগুনকোলা প্রভৃতি গ্রামে। ভৌগলিক দিক থেকেও গ্রামগুলির অবস্থান অনেকটা দ্বীপের মত। নবগ্রামের একদিকে বয়ে গিয়েছে অজয়। অন্যদিকে রয়েছে কাঁদর।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৪ ০১:২৯
Share:

রাস্তা নেই। খাল পেরিয়ে যাতায়াত নবগ্রামে। —নিজস্ব চিত্র।

জমির দাম বাজার দরের তুলনায় অনেক কম। তবুও পাওয়া যাচ্ছে না ক্রেতা। শহরের সঙ্গে যোগাযোগের উপযুক্ত রাস্তা না থাকায় এমনই অবস্থা কেতুগ্রামের নবগ্রাম, কাঁকুরহাটি, বেগুনকোলা প্রভৃতি গ্রামে।

Advertisement

ভৌগলিক দিক থেকেও গ্রামগুলির অবস্থান অনেকটা দ্বীপের মত। নবগ্রামের একদিকে বয়ে গিয়েছে অজয়। অন্যদিকে রয়েছে কাঁদর। নবগ্রাম ও কাঁকুরহাটি গ্রামের মধ্যে দিয়ে রয়েছে আজিমগঞ্জ ট্রেন লাইন। দু’টি গ্রামের যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম অজয়ের উপর রেলসেতু। আবার কাঁকুরহাটির থেকে বেগুনকোলায় যেতে হলে অজয়ের পাশ দিয়ে গজিয়ে ওঠা আলপথই একমাত্র ভরসা। কিন্তু এই রাস্তায় কোনও গাড়ি চলাচল করতে পারে না।

যোগাযোগের এই অবস্থার ফলে গ্রামগুলির অর্থনৈতিক ভিত্তিও ভেঙে পড়ছে। স্থানীয় বাসিন্দা সাগর পানের ক্ষোভ, “যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকার ফলে পঞ্চায়েত বা ব্লক দফতরে যেতে হলেও কাটোয়া দিয়ে ঘুরে যেতে হয়।” চাষীরা ফসলের দাম পান না। কারণ স্থানীয় বাজারে যেতে হলে অতিরিক্ত পরিবহন খরচের জন্য নষ্ট হয়ে যায় অধিকাংশ ফসল।

Advertisement

নবগ্রাম বা কাঁকুরহাটি গ্রাম থেকে কাটোয়ায় আসতে হলে ভরসা একমাত্র রেলসেতু। বেগুনকোলার বাসিন্দাদের সরাসরি অজয় পেরিয়ে আসতে হয় কাটোয়ায়। বাসিন্দাদের আয়ের কোনও উপায় না থাকাই দলে দলে গ্রাম ছেড়ে শহরের দিকে পাড়ি জমাচ্ছেন তাঁরা। বেগুনকোলা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের স্থায়ী বাড়ি পর্যন্ত নেই। অজয়ের উল্টো দিকে সেচ দফতরের জায়গায় অস্থায়ী ঘরই তাঁদের ঠিকানা। নবগ্রাম, কাঁকুরহাটি ও বেগুনকোলাতে যোগাযোগের এই হাল হওয়ায় থমকে রয়েছে গ্রামগুলির উন্নয়নের কাজও। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, উপযুক্ত রাস্তা না থাকার কারণে গ্রামে আসতে চান না ঠিকাদাররাও। নির্মাণ সামগ্রীর যোগান মেলাও ভার।

যোগযোগের অব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অজয়ের ভাঙন। বৃষ্টি পড়তেই কয়েকদিনের মধ্যে বিঘের পর বিঘে চাষ-জমি তলিয়ে গিয়েছে। ননীচূড়া সাহা, নীলরতন সরকাররা জানান, এখন ছেলেমেয়েরা পড়তে গেলেও রাস্তার কথা ভেবে ভয় লাগে। কেউ অসুস্থ হলেও শহরে দ্রুত পৌঁছবার কোনও উপায় থাকে না।

কেতুগ্রাম জমি নিবন্ধন করণের দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নবগ্রাম মৌজা এবং তাদের পাশের এলাকার জমির বিঘে প্রতি সরকারি দাম এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। কিন্তু এখানে জমির দাম বিঘে প্রতি ৩ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই টাকাতেও জমি কেনার ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। নবগ্রামের বাসিন্দা গোপীচরণ ঠাকুরের আক্ষেপ, “জমি প্রধানত গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যেই কেনা-বেচা হয়। যোগাযোগের ব্যবস্থা খুবই খারাপ হওয়ায় বাইরে থেকে কেউ জমি কিনতে আসেন না। এর ফলে জমির দামও তেমন ওঠে না।”

সম্প্রতি মোটরবাইকে চেপে ওই এলাকা ঘুরে এসেছেন কাটোয়ার মহকুমাশাসক মৃদুল হালদার। তিনি ওই এলাকার উন্নয়ন নিয়ে কেতুগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতি ও নবগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেনে। তাঁর কথায়, “ওই এলাকায় উন্নয়নের জন্য একগুচ্ছ পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।” এলাকা ঘুরে গেছেন অতিরিক্ত জেলাশাসক হৃশিকেষ মুদীও। কেতুগ্রাম২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি দেবাশিস মণ্ডল বলেন, “কাঁকুরহাটি-বেগুনকোলার মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ও নবগ্রামে প্রধানমন্ত্রী গ্রামীণ সড়ক যোজনার রাস্তা তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন