শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে মাতল অন্য রকম দুই স্কুলের পড়ুয়ারাও

আর পাঁচটা স্কুলের পড়ুয়াদের থেকে তারা একটু আলাদা। শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান দেখলে অবশ্য অন্যদের সঙ্গে তাদের কোনও ফারাক নেই। সব স্কুলের পড়ুয়াদের মতো তারাও শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানাল নাচ-গান-আবৃত্তি-নাটকে। প্রতিবন্ধীদের এবং শিশুশ্রমিক ও দুঃস্থ শিশুদের দু’টি স্কুলে এই অনুষ্ঠানের পরে আপ্লুত শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।

Advertisement

অর্পিতা মজুমদার

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:২১
Share:

এ-জোনের স্কুলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। —নিজস্ব চিত্র।

আর পাঁচটা স্কুলের পড়ুয়াদের থেকে তারা একটু আলাদা। শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান দেখলে অবশ্য অন্যদের সঙ্গে তাদের কোনও ফারাক নেই। সব স্কুলের পড়ুয়াদের মতো তারাও শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানাল নাচ-গান-আবৃত্তি-নাটকে। প্রতিবন্ধীদের এবং শিশুশ্রমিক ও দুঃস্থ শিশুদের দু’টি স্কুলে এই অনুষ্ঠানের পরে আপ্লুত শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।

Advertisement

১৯৮৮ সালে বিধাননগরে ৬ জন মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধীকে নিয়ে শুরু হয়েছিল ‘হোপ স্কুল’। এখন শহরের তিন প্রান্তে তিনটি স্কুল চলছে। পড়ুয়া প্রায় তিনশো। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ এ-জোনের স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠান ঘিরে সাজো সাজো রব। ১৭০ জন পড়ুয়ার উৎসাহের অন্ত নেই। অনুষ্ঠান করল ৪০ জন। সৌম্যদীপ চট্টোপাধ্যায়, মায়াঙ্ক কুমারের সিন্থেসাইজার, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, মৃন্ময়ী দে, অগ্নিমিত্রা মণ্ডলদের নাচ মুগ্ধ করে সকলকে। মাধ্যমিকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়েছে রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়। সে এদিন বঙ্গ বাজিয়েছে। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন স্কুলের প্রাক্তনী শুচিস্মিতা বিশ্বাস। তিনি এখন এই স্কুলেরই শিক্ষিকা। প্রধান শিক্ষিকা মৎলুবা বেগম জানান, নিয়মিত অনুদান না আসায় বেতন হয় অনিয়মিত। তবু তাঁরা কেউ এই খুদেদের ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন না। তিনি বলেন, “প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে যে ভাবে এরা এগিয়ে চলেছে, তা শেখার মতো।”

২০০৩ সালে মুচিপাড়ার একটি ক্লাবে বস্তির ৩০টি শিশুকে নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা স্কুল চালু করে। স্টেশন চত্বরে ভবঘুরে শিশুদের নিয়ে চালু হয় আর একটি স্কুল। সেটি অবশ্য রেলের আপত্তিতে কিছু দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। মুচিপাড়ার স্কুলটি ২০০৬ সালে উঠে আসে বিধাননগরের শাস্ত্রী অ্যাভিনিউয়ে। শিক্ষিকা চিন্ময়ী খানের বাড়িতে ক্লাস হত। বছর দুয়েক আগে পাশে রাস্তার ধারে ফাঁকা মাঠে বাঁশ-টালি দিয়ে ঘর বানানো হয়। সেখানেই প্রতি সন্ধ্যায় প্রথম থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা ক্লাস করে। পড়ুয়া জনা ৫০। শিশুশ্রমিক, দুঃস্থ পরিচারিকার ছেলেমেয়ে, এমনকী স্কুলছুটেরাও রয়েছে সেই তালিকায়। কাজকর্ম সেরে এসে পড়ুয়ারা সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্লাস করে। সঙ্গে শেখানো হয় নাটক, নাচ, গান, আবৃত্তি, অঙ্কন। পড়ুয়ারা জানায়, তারা বেশ কয়েক মাস ধরে অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছে। নবম শ্রেণির অশোক সাউ নাটক লিখেছে ‘তিতলির গান শেখা’। সেই নাটকই শিক্ষক দিবসে পরিবেশন করল পরিচারিকার কাজ করা পড়ুয়া রিঙ্কু বিশ্বাস, শম্পা রায়, সানিজা খাতুন-সহ আট জন। নৃত্য পরিবেশন করে তিন জন। আবৃত্তিতে ছিল দু’জন। স্কুলের সম্পাদক সন্ধ্যা কর বলেন, “ওদের উদ্যোগ দেখে আমরাও আপ্লুত।”

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন