সিন্ডিকেটের চাপে লাটে উঠছে শিল্প, নালিশ দুর্গাপুরে

সিন্ডিকেটের উপদ্রবে ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড় বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতির সঙ্গে বৈঠকে বসে এই ক্ষোভই উগরে দিলেন দুর্গাপুরের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থার কর্তারা। রাজ্যের শাসকদলের ছত্রচ্ছায়ায় চলা সিন্ডিকেট নিয়ে আগেই দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চলে একের পর এক অভিযোগ উঠেছে। দলেরই এক নেতার বিরুদ্ধে নেতৃত্ব এবং পুলিশকে চিঠি দিয়ে ওই অভিযোগ করেছিলেন দুর্গাপুর পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। কারখানা মালিকেরা ভয়ে অভিযোগ করতে চান না বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৪ ০১:৫১
Share:

সিন্ডিকেটের উপদ্রবে ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড় বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতির সঙ্গে বৈঠকে বসে এই ক্ষোভই উগরে দিলেন দুর্গাপুরের বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প সংস্থার কর্তারা।

Advertisement

রাজ্যের শাসকদলের ছত্রচ্ছায়ায় চলা সিন্ডিকেট নিয়ে আগেই দুর্গাপুর-আসানসোল শিল্পাঞ্চলে একের পর এক অভিযোগ উঠেছে। দলেরই এক নেতার বিরুদ্ধে নেতৃত্ব এবং পুলিশকে চিঠি দিয়ে ওই অভিযোগ করেছিলেন দুর্গাপুর পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়। কারখানা মালিকেরা ভয়ে অভিযোগ করতে চান না বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

দুর্গাপুরে জেলা শিল্পকেন্দ্রে বর্ধমান জেলা সভাধিপতি দেবু টুডুর সঙ্গে বৈঠকে বসে মঙ্গলবার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপতিরা কিন্তু সরাসরি অভিযোগ করলেন, সিন্ডিকেটের বাড়বাড়ন্তে তাঁরা নাজেহাল। অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে ব্যবসা ডুববে। ‘দুর্গাপুর স্মল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর সভাপতি কৃপাল সিংহ বলেন, “সিন্ডিকেটের উৎপাতের কথা জানিয়ে জেলা সভাধিপতিকে ব্যবস্থা নেওয়ার আর্জি জানিয়েছি।” আড়ালে-আবডালে কিছু তৃণমূল নেতার নাম বলা হলেও সরাসরি কারও নাম উল্লেখ করেননি তাঁরা। জেলা সভাধিপতি তথা তৃণমূল নেতা দেবুবাবুর আশ্বাস, “প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

Advertisement

গত কয়েক মাসে নানা জেলায় সিন্ডিকেট নিয়ে শাসকদলের নেতা-কর্মীরা বারবার কোন্দলে জড়িয়েছেন। সম্প্রতি পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে সিন্ডিকেট তৈরি করে নির্মীয়মাণ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সীমানা পাঁচিল তৈরির কাজ শুরু করেন এক তৃণমূল নেতা। তা শেষ হওয়ার আগেই ওই নেতা ও তাঁর এক সহযোগীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন সিন্ডিকেটেরই সদস্য কিছু তৃণমূল কর্মী। ঘটনাচক্রে, মঙ্গলবারই উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব নির্দেশ জারি করেছে, দলের কোনও নেতা-কর্মী প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে সিন্ডিকেটের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারবেন না।

কৃপাল সিংহের আক্ষেপ, “বাজার ভাল নয়। আমাদের পুঁজিও কম। তার উপরে সিন্ডিকেটের উপদ্রব। বেশি দামে জিনিসপত্র কেনার জন্য জোর-জবরদস্তি করা হয়।” তাঁর অভিযোগ, ঠিকা শ্রমিক নিয়োগ করা নিয়ে চাপাচাপি বা গাড়ি আটকে তোলা আদায়ের ঘটনা প্রায়ই ঘটায় সিন্ডিকেটগুলি। ক্ষুদ্র শিল্প সংস্থাগুলির সংগঠনের এক সদস্যের বক্তব্য, “এ সব নিয়ে পুলিশে অভিযোগ করতে যাওয়া মানে বাড়তি ঝামেলা ডেকে আনা। পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করলে পরে হুমকি শুনতে হবে। অন্য নানা বাধা-বিপত্তিও আসতে পারে। ব্যবসা করতে গেলে এ ভাবে সরাসরি অভিযোগ জানানো কাজের হয় না।”

ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে লগ্নিকারীরা বলছেন, তাঁদের ব্যবসা তুলনায় ছোট, মুনাফাও কম। সেখানে সিন্ডিকেটের দাবি মেনে জিনিসপত্র কিনলে মুনাফা আরও কমে যায়। সংগঠনের এক সদস্যের প্রশ্ন, “লাভই যদি না হবে, তবে লগ্নি করব কেন?” সংগঠনের সম্পাদক গৌতম রায় বলেন, “জেলা সভাধিপতিকে আমরা সব জানিয়েছি। দেখা যাক, কী হয়!”

জেলা সভাধিপতি অবশ্য দাবি করেন, দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে সাড়ে তিন দশক ধরে সিন্ডিকেট ও তোলাবাজির রেওয়াজ চলে আসছে। গত তিন বছরে তাঁরা তা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করেছেন। দুর্গাপুরের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তীর পাল্টা বক্তব্য, “পুরনো কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নতুন শিল্প নজরে আসছে না। অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে আখেরে রাজ্যেরই ক্ষতি করা হচ্ছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন