সুন্দরবনে ফুলের মধু সংগ্রহ করতে চেয়ে চিঠি

বসন্তে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলের ফুল থেকে উৎকৃষ্ট মধু সংগ্রহ করতে চান রাজ্যের মৌমাছি পালকেরা। তার অনুমতি চেয়ে মৌমাছি পালকদের তরফে সম্প্রতি রাজ্যের বন দফতরকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ইচ্ছের কথা জানানো হয়েছে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের কর্তাদেরও।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ মার্চ ২০১৮ ০৩:৪০
Share:

বছরের বিভিন্ন ঋতুতে মধুর জন্য সর্ষে, কালো জিরে, ধনে, লিচুর মতো ফুল তো রয়েছেই। বসন্তে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলের ফুল থেকে উৎকৃষ্ট মধু সংগ্রহ করতে চান রাজ্যের মৌমাছি পালকেরা। তার অনুমতি চেয়ে মৌমাছি পালকদের তরফে সম্প্রতি রাজ্যের বন দফতরকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের ইচ্ছের কথা জানানো হয়েছে রাজ্যের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের কর্তাদেরও।

Advertisement

সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা হয় মূলত দু’ভাবে। প্রথমত, মৌচাক ভেঙে। যা করে থাকেন অনেকেই। দ্বিতীয়ত, পোষ্য মৌমাছি ছেড়ে দিয়ে সরাসরি ফুল থেকে মধু আহরণ। মৌমাছি পালকেরা তাঁদের পোষ্য মৌমাছিদের ছেড়ে দিয়ে ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে আনেন। এক-একটি বাক্সে ২৫-৪০ হাজার শ্রমিক মৌমাছি থাকে। রানি মৌমাছির জন্য গভীর জঙ্গল থেকে মধু সংগ্রহ করে তারাই। পালকদের দাবি, এই মধু পুরোপুরি ‘জৈব’। তাতে শুধু জঙ্গলের নির্দিষ্ট তিন-চারটি ফুলের মধুরই মিশ্রণ থাকে। তাই সেই মধুর এত কদর।

অভিজ্ঞতা থেকে মৌমাছি পালকেরা জানাচ্ছেন, সুন্দরবনের গহন অরণ্যে খলিশা, গরান, কেওড়া, গেঁও-সহ বিভিন্ন গাছ ও বনলতার ফুলে অফুরন্ত মধুর ভাণ্ডার রয়েছে। সেই মধু সংগ্রহ করার পরেও যা থেকে যাবে, তাতে জঙ্গলের প্রাকৃতিক ভারসাম্যের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। সংগ্রহ করার পরেও বন্য কীটপতঙ্গ, পশুপাখির জন্য প্রচুর মধু থেকে যাবে। বরং সংগ্রহ না-করায় প্রতি বছর প্রচুর মধু নষ্ট হয়ে যায়। তাই তাঁরা ফি-বছর শুধু বসন্ত ঋতুতে সেখানকার মধু সংগ্রহ করতে চান। কারণ, দেশে তো বটেই, বিশ্বের বাজারেও সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলের ওই মধুর বিশেষ কদর রয়েছে। বিশেষত খলিশার সাদা এবং গরানের সোনালি মধুর চাহিদা ব্যাপক।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গ মৌমাছি পালক সমিতির সম্পাদক তরুণ হালদার জানান, সরকারের অনুমতি পেলে নিয়মবিধি মেনেই তাঁরা জঙ্গলের ‘কোর’ এলাকার বাইরে থেকে মধু সংগ্রহ করতে চান। প্রয়োজনে তাঁরা সরকারকে রয়্যালটিও দিতে রাজি। বছরখানেক আগে এক বার বন দফতরের অনুমতি পেয়ে তাঁরা মধু সংগ্রহ করেছিলেন এবং বন দফতরকে রয়্যালটিও দিয়েছিলেন। তরুণবাবু জানান, মাতলা, বাঘমারা, হরিণভাঙা, হরিখোলা, কাটোয়াঝুড়ি, বুড়িরডাবরি মধু সংগ্রহের আদর্শ জায়গা। কারা অনুমতি পাবেন, স্থানীয়দের নিয়ে বন দফতরের উদ্যোগে তৈরি ‘যুগ্ম বন পরিচালন কমিটি’ সেই সিদ্ধান্ত নেয়।

খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লা জানান, সুন্দরবন ‘হেরিটেজ অরণ্য’ হিসেবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পেয়েছে। তাই সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার বিষয়ে বেশ কিছু কড়া বিধিনিষেধ মেনেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়। অনেকটা একই কথা জানান বন দফতরের এক শীর্ষ কর্তা। ‘‘মৌমাছি পালকদের আবেদনের কথা জানি। উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে,’’ বলেন ওই কর্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন