BJP

‘পুলিশাতঙ্ক’! রাজ্য দফতরে বৈঠক করল না বিজেপি, ফোনালাপে জারি হল বিধিনিষেধ

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা বর্তমানে জাতীয় সম্পাদক পদে থাকা রাহুল সিংহ, মুকুল রায়-সহ বিজেপির গোটা রাজ্য নেতৃত্ব বৈঠকে ছিলেন।

Advertisement

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৮ ২০:১১
Share:

গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।

ফাঁস হওয়া অডিয়ো ক্লিপে শোনা যাচ্ছে পুলিশ ফাঁসানোর ছক। সারদা তদন্তে সিবিআই ঘিরে ফেলার চেষ্টা করছে এ রাজ্যের কয়েক জন খুব উচ্চপদস্থ পুলিশকর্তাকে। বাংলার শাসক দল ক্রমশ সুর চড়াচ্ছে। সিবিআই, ইডি, আয়করের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছে। কিন্তু অভিযোগের আঙুল যে দলের দিকে, সেই বিজেপি-ও যে কম চাপে নেই, তা দলের ‘উদ্বাস্তু’ দশাতেই স্পষ্ট হয়ে গেল বৃহস্পতিবার। ‘পুলিশ-আতঙ্কে’ দলীয় দফতর থেকে বৈঠক সরিয়ে নিতে বাধ্য হল বিজেপি। ফোনে কথা বলার উপরে প্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি হল।

Advertisement

বাংলার জন্য নতুন যে সাংগঠনিক পর্যবেক্ষককে নিয়োগ করেছেন বিজেপির জাতীয় নেতৃত্ব, সেই অরবিন্দ মেনন কলকাতায় এসেছেন। কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পরে বৃহস্পতিবারই বাংলার বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে প্রথম বৈঠকে বসলেন মেনন। কিন্তু সে বৈঠক রাজ্য বিজেপির সদর দফতর ৬ মুরলীধর সেন লেনের অফিসে হল না। বৈঠক হল এলগিন রোডে মুকুল রায়ের বাসভবনে।

রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা বর্তমানে জাতীয় সম্পাদক পদে থাকা রাহুল সিংহ, মুকুল রায়-সহ বিজেপির গোটা রাজ্য নেতৃত্ব বৈঠকে ছিলেন। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে ছিলেন কৈলাস বিজয়বর্গীয়, শিব প্রকাশ। নতুন আসা মেনন তো ছিলেনই। বিজেপি সূত্রের খবর, মূলত ডিসেম্বরের রথযাত্রা কর্মসূচি নিয়েই বিশদে আলোচনা হয় এ দিন। কথা হয় সংগঠন বাড়ানোর বিষয়েও। কিন্তু কী নিয়ে কথা হল বিজেপির এই বৈঠকে, তা নিয়ে খুব বেশি জল্পনা নেই রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে। জল্পনা চলছে বৈঠকের স্থান নির্বাচনকে ঘিরে এবং বৈঠকে কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের একটি বার্তা ঘিরে।

Advertisement

এলগিন রোডের বৈঠকে বিজেপি নেতারা।—নিজস্ব চিত্র।

আরও পড়ুন: রাজ্য নেতাদের সঙ্গে আজ বৈঠক মেননের​

আরও পড়ুন: দুই তৃণমূল সাংসদ ‘কাটমানি’ চেয়েছিলেন! ম্যাথুর মেল সিবিআইয়ের হাতে​

এত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। রাজ্য দফতরের বদলে তা মুকুল রায়ের বাসভবনে কেন? বৈঠকের আগের রাত থেকেই এই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছিল রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে। কিন্তু বিজেপি নেতারা মুখে কুলুপ এঁটে রেখেছিলেন। বৃহস্পতিবার বৈঠক শেষ হওয়ার পরে মুখ খুললেন রাজ্য বিজেপির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু। যা বললেন তিনি, তা বিজেপির উদ্বেগেরই বার্তাবহ। ‘‘রাজ্য দফতরের বদলে অন্যত্র বৈঠক করার বেশ কয়েকটা কারণ রয়েছে। তবে অন্যতম প্রধান কারণ পুলিশ।’’—বললেন সায়ন্তন। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের রাজ্য দফতরটা পুলিশের লোকে ভরে গিয়েছে। নিরাপত্তা দেওয়ার নামে পুলিশ বসিয়ে রাখছে রাজ্য সরকার। কিন্তু তার বাইরেও সাদা পোশাকের অনেক পুলিশকর্মী তথা গোয়েন্দারা ছড়িয়ে থাকছেন পার্টি অফিসে। ফলে খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা বা বৈঠক পার্টি অফিসে বসে করা কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’’

দলীয় দফতরের বদলে এলগিন রোডে বৈঠক করার আরও কয়েকটা কারণ অবশ্য উল্লেখ করছেন বিজেপি নেতারা। মুরলীধর সেন লেনের অফিসে এখন ভিড়ভাট্টা বেড়ে গিয়েছে, তা ছাড়া বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বেশ কিছু ঘরছাড়া কর্মী-সমর্থক পার্টি অফিসে থাকছেন, তাই বড় বৈঠকের জন্য স্থান সঙ্কুলান সব সময়ে দলীয় দফতরে হয়ে উঠছে না। এমন নানা কারণের কথা উল্লেখ করছেন রাজ্য বিজেপির নানা নেতা। কিন্তু প্রত্যেকের কথাতেই ঘুরে ফিরে পুলিশ-প্রসঙ্গ আসছে। রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে যে পুলিশের লোকজন ছড়িয়ে থাকছে সারা ক্ষণ, তা প্রায় প্রত্যেকেই বলছেন।

তবে শুধু রাজ্য নেতৃত্ব নন, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও সমান উদ্বিগ্ন বাংলার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। এ দিনের বৈঠকে কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের একটি নির্দেশই তা স্পষ্ট করে দিয়েছে। কোনও গুরুত্বপূর্ণ কথা ফোনে আলোচনা না করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি এ দিন। ‘‘এখানে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সবার ফোন ট্যাপ হচ্ছে।’’—কৈলাস এ দিনের বৈঠকে এমন কথাই বলেছেন বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। কলকাতা পুলিশকে দিয়ে ফোন ট্যাপ করানো হচ্ছে এবং কাদের ফোন ট্যাপ হচ্ছে, সে তালিকাও তাঁর কাছে রয়েছে বলে কৈলাস বৈঠকে মন্তব্য করেন। বাংলার বিজেপি নেতাদেরকে কৈলাসের পরামর্শ— হোয়াটসঅ্যাপ কলে কথা বলুন।

সম্প্রতি ‘কৈলাস’ এবং ‘মুকুল রায়ের’ মধ্যে ফোনলাপের দু’টি অডিয়ো ক্লিপ ভাইরাল হয়েছে। আনন্দবাজার সে অডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। তবে মুকুল রায় ওই অডিয়ো দু’টির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেননি। একটি অডিয়োয় শোনা গিয়েছিল, কয়েকজন পুলিশকর্তাকে চাপে ফেলার বিষয়ে এবং মতুয়া ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসানোর বিষয়ে আলোচনা করছেন দুই নেতা। অন্যটিতে শোনা গিয়েছিল, তৃণমূলকে বেকায়দায় ফেলতে পারে, এমন কোনও একটি তথ্যচিত্র হাতে পাওয়ার জন্য ম্যাথুকে ২ কোটি টাকা দেওয়ার বিষয়ে দুই নেতার মধ্যে কথা হচ্ছে। অডিয়ো ক্লিপ দু’টি তুমুল হইচই ফেলে রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরে। কৈলাস এবং মুকুলকে ঘিরে বেশ বিতর্কও তৈরি হয়।

সেই কাণ্ডের পরে পুলিশি নজরদারির বিষয়ে কি একটু বেশি সতর্ক হয়ে গেল বিজেপি? দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক দলীয় দফতরে না করে অন্যত্র হল। সে বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক স্পষ্ট নির্দেশ দিলেন, ফোনে কথা নয়, কথা বলুন হোয়াটসঅ্যাপ কলে। বৈঠক শেষে এক বিজেপি নেতা বললেন, ‘‘মনে হচ্ছে নিজের দেশেই উদ্বাস্তু হয়ে গিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন