বেধড়ক মার বিরোধীদের, ছাড় পেল না সাংবাদিকরাও, নীরব প্রশাসন

আদালতের নির্দেশে দিন বাড়ানোর পরেও মনোনয়ন নির্বিঘ্নে হবে না বলে বিরোধীরা বরাবরই বলে আসছিলেন। এ দিনের ঘটনায় সেই আশঙ্কাই জোর পেল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মে ২০১৮ ১৫:৫৫
Share:

সশস্ত্র: সিউড়িতে বিজেপির দলীয় দফতরের গলিতে তাণ্ডব। সোমবার। ছবি: দয়াল সেনগুপ্ত

হাইকোর্টের নির্দেশে হওয়া বাড়তি এক দিনের মনোনয়ন পর্ব রক্তাক্ত হল। সিউড়িতে গুলিতে নিহত হলেন এক জন। বিভিন্ন জেলায় মার খেলেন বিরোধী নেতা ও বিধায়কেরা। কোথাও কোথাও মার খেল শাসক দলও। আর কলকাতার আলিপুর-সহ বহু জেলায় মনোনয়ন পর্বের খবর সংগ্রহে গিয়ে বেধড়ক পিটুনি খেলেন সাংবাদিকেরা। গুরুতর প্রশ্ন উঠল, পুলিশের ভূমিকা এবং নির্বাচন কমিশনের সক্রিয়তা নিয়ে। সব মিলিয়ে এটাই ছিল পঞ্চায়েত ভোটের সোমবারের ছবি।

Advertisement

আদালতের নির্দেশে দিন বাড়ানোর পরেও মনোনয়ন নির্বিঘ্নে হবে না বলে বিরোধীরা বরাবরই বলে আসছিলেন। এ দিনের ঘটনায় সেই আশঙ্কাই জোর পেল। বিরোধী শিবির এটাকে তাদের রাজনৈতিক লাভ বলেই অঙ্ক কষছে। আজ, মঙ্গলবার ফের আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে বিরোধী দলগুলি। শাসক তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, পরিকল্পনা করেই বিরোধীরা এ সব করেছে। মূল উসকানি দিচ্ছে বিজেপি। তারা নির্বাচনে বাধা সৃষ্টি করতে চায়।

মনোনয়ন অবাধ করার জন্য পুলিশকে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। গোলমাল হতে পারে এমন ছ’টি জায়গার কথা উল্লেখও করে দিয়েছিলেন কমিশনার। তার পরেও কেন এমন হল? এক দিনের মনোনয়ন পর্ব কেন নির্বিঘ্ন করা গেল না? সারা দিন কেন দাপিয়ে বেড়াল বাহুবলীরা?

Advertisement

সারা দিন কমিশনের বাইরে ১৪৪ ধারা জারি করে ভিতরে ছিলেন কর্তারা। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার অমরেন্দ্রকুমার সিংহকে বারবার ফোন করেও সাড়া মেলেনি। জবাব দেননি এসএমএস-এরও। তবে কমিশনেরই এক কর্তা বলেন, ‘‘আপনারা যা দেখছেন, আমরাও তাই দেখছি।’’

ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারাও। কথা বলেননি রাজ্য পুলিশের মুখপাত্র এডি়জি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা। নবান্নে গাঁধীজির আদর্শ নিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলেও রক্তাক্ত সোমবার নিয়ে কথা বলতে চাননি মুখ্যসচিব মলয় দে।

এ দিনের সব চেয়ে বড় ঘটনা ঘটে সিউড়ির কড়িধ্যায়। সিউড়ি এক নম্বর ব্লক অফিসের ২০০ মিটারের মধ্যে শাসক ও বিরোধী দলের বোমাবাজি শুরু হয়। তারই মধ্যে চলে এলোপাথাড়ি গুলি। তাতেই দিলদার খান (৩৯) নামে এক ব্যক্তি মারা যান। দিলদার কোন দলের তা নিয়ে বিজেপি এবং তৃণমূলের মধ্যে দিনভর দড়ি টানাটানি চলে। তাঁর পরিবারের কাউকে সরকারি চাকরি দেওয়া ভাবনাচিন্তা চলছে।

এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় মার খেয়েছেন বিরোধী সাংসদ-বিধায়ক ও নেতারা। এঁদের মধ্যে আছেন মালদহ দক্ষিণের সাংসদ আবু হাসেম খান চৌধুরী, বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী। উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার তৃণমূল বিধায়ক রফিকুর রহমানও মধ্যমগ্রামে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নিগৃহীত হয়েছেন। আসানসোলে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের গাড়ি আটকে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তালে গোলে জেলায় জেলায় মনোনয়ন দেওয়ার কাজ হয়েছে সামান্যই।

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় দাবি করেন, এ দিন মনোনয়ন দিতে গিয়ে ৫২৬টি জায়গায় সংঘর্ষ হয়েছে। ৫০০ জনের বেশি দলীয় কর্মী আহত হয়েছেন। ১১টি পার্টি অফিস ভাঙা হয়েছে। কৈলাস জানান, আহত দলীয় কর্মীদের নিয়ে তাঁরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাবেন।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের বক্তব্য, ‘‘আজকের ঘটনার পরে নির্বাচন কমিশনের থাকা না থাকা সমান। বাহুবলীরা দেখিয়ে দিয়েছে আদালত বা কমিশন কারও নির্দেশই তারা মানে না।’’ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরির মন্তব্য, ‘‘নির্বাচনের নামে এই প্রহসনের আর কোনও মানে নেই।’’

দিন যতই রক্তাক্ত হোক, শাসক দলের প্রতিক্রিয়ায় তার কোনও আঁচ মেলেনি। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বরং সব গোলমালের দায় বিরোধীদের উপর চাপানোর সঙ্গে সঙ্গেই দাবি করেন, ‘‘আমরা গণতন্ত্র রক্ষার চেষ্টা করছি। তাই আমাদের পাঁচ জন বিরোধীদের হাতে খুন হয়েছেন।’’ পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘পুলিশ কি গুলি চালাবে? তা হলে তো আবার বলবেন, পুলিশ প্ররোচনা দিচ্ছে। প্রশাসন সক্রিয় বলেই বিগত দিনে যা ঘটেছে তা এখন ঘটতে দিচ্ছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।’’

সন্ধ্যায় নবান্ন থেকে বেরনোর সময় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দিনের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন সাংবাদিকেরা। তাঁর জবাব, ‘‘আমি তো সাংবাদিক সম্মেলন করছি না। কিছু বলার থাকলে নিজেই বলব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন