দু’বছর আগে বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে শূন্য হাতে ফিরিয়ে দিয়েছি মালদহ। এ বার পঞ্চায়েত ভোটে সেখানেই একরকম দু’হাত ভরিয়ে দিল। তবে একতরফা ভাবে এই জেলার ক্ষমতা এখনও তৃণমূল পায়নি। এখানে সব থেকে বেশি আসন ত্রিশঙ্কু হয়ে রয়েছে।
কোতোয়ালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫৬ নম্বর বুথটিতেও এ বার জিতেছে তৃণমূল। গনি পরিবারের খাস তালুক এই বুথের ফল থেকেই জেলার ভোট চিত্র অনেকটা পরিষ্কার।
জেলার ১৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ৫৮টিতে। বিজেপি ২১টিতে। কংগ্রেসের হাতে গিয়েছে মাত্র ৪টি। ত্রিশঙ্কু হয়ে রয়েছে ৬৩টি পঞ্চায়েত। এই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলো শেষ পর্যন্ত তাঁদের দখলেই যাবে বলে আশাবাদী তৃণমূল নেতারা। কংগ্রেসের কিছু নেতা যদিও দাবি করেছেন, এমন বেশ কিছু পঞ্চায়েত তাঁরাই দখল করবেন। তা যদি হয়ও, মোটের উপরে কংগ্রেসের গড় মালদহে এ বার তৃণমূলের দাপটে চিন্তায় খোদ গনি খানের পরিবারই। গনি খানের ভাগ্নি মৌসম বেনজির নুর এবং ভাই আবু হাসেম খান চৌধুরীর সামনের বছরই নিজেদের লোকসভা আসন ধরে রাখতে ভোটের লড়াইয়ে নামার কথা। কিন্তু দু’জনের সাংসদ এলাকাতেই এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে কংগ্রেস কোথাও কোথাও তৃতীয় স্থানে নেমে গিয়েছে।
কংগ্রেসকে তাই কিছু জায়গায় ধাক্কা দিয়েছে বিজেপিও। গত পঞ্চায়েত ভোটে মালদহে ১৪৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে কংগ্রেস একক ভাবেই ৬৭টি দখল করেছিল। বামেরা দখল করে ৫৫টি, তৃণমূল ১৮টি ও বিজেপি ৬টি। জেলা পরিষদও দখল করেছিল কংগ্রেস। একই ভাবে গত বিধানসভা ভোটেও বামেদের সঙ্গে সমঝোতা করে কংগ্রেস জেলার ১২টি আসনের মধ্যে ৮টিতে জয় পায়। তিনটি জেতে বামেরা। একটি পায় বিজেপি। তৃণমূল খালি হাতে ফেরে। পরে অবশ্য কংগ্রেসের জেলা পরিষদের সভাধিপতি সহ কংগ্রেস ও সিপিএমের ১৯ জনকে দলে টেনে জেলা পরিষদ দখল করে নেয় তৃণমূল। শুধু তাই নয়, ১৩টি পঞ্চায়েত সমিতিও দখল করে তারা। বেশির ভাগ গ্রাম পঞ্চায়েতও তৃণমূলের হাতে চলে যায়।
কিন্তু মনে করা হয়েছিল, স্থানীয় নেতাদের দলে টেনে মালদহে কংগ্রেসের দুর্গে ফাটল ধরাতে পারলেও, মানুষের মন এ ভাবে জয় করতে পারবে না তৃণমূল। কিন্তু জেলার যে সব জায়গা বরাবরই কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি, সেই হবিবপুর, বামনগোলা, পুরাতন মালদহ, গাজোল ও চাঁচল ২ ব্লকের ভোটও তাঁদের হাত থেকে ফস্কে গিয়েছে। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় প্রভাব বাড়িয়েছে বিজেপি। সংখ্যালঘু এলাকায় শক্তি বাড়িয়েছে তৃণমূল।
জেলা কংগ্রেস সভানেত্রী ও সাংসদ মৌসম নুর বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোট নয়, প্রহসন হয়েছে। তবে ফল নিয়ে আমরা পর্যালোচনা করব।’’ পঞ্চায়েত ভোটের সঙ্গে লোকসভা ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই বলেও দাবি তাঁর। আর তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন অবশ্য বলেন, ‘‘মালদহের এই জয় মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের জয়।’’