মনসা মেটে। নিজস্ব চিত্র
চার বার ভোটে দাঁড়িয়ে জেতেননি। তবু প্রার্থী হওয়া থেকে বিরত হননি মনসা মেটে। আর এ বার তো তাঁর জন্যই ভোট হচ্ছে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রাম ১ ব্লকে।
জেলা পরিষদের ৫৪ নম্বর আসনে এসইউসি প্রার্থী মনসাবাবুর অভিযোগ, শাসক দলের তরফে প্রার্থিপদ প্রত্যাহারের চাপের মুখে বাড়ি ছেড়েছেন তিনি। ঘরছাড়া হওয়ায় প্রচারও শুরু করতে পারেননি। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক অভেদানন্দ থান্দারের দাবি, ‘‘উনি প্রচার করতেই পারেন। আমরা কাউকে বাধা দিচ্ছি না।’’
আউশগ্রাম ১ ব্লকের সমস্ত গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের দু’টি আসনের মধ্যে একটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তৃণমূল। লড়াই কেবল মনসাবাবুর আসনে। কুড়ুম্বা গ্রামের বামপন্থী পরিবারে বেড়ে ওঠা বছর পঞ্চাশের মানুষটি পুঁজিবাদ উৎখাত করে সমাজতন্ত্র আনার স্বপ্ন দেখেন। কুড়ি বছর বয়স থেকে এসইউসি-র সদস্য। পেশায় খেতমজুর। খেতের কাজ করার সময়টুকু বাদ দিয়ে দলের সর্বক্ষণের কর্মী। স্ত্রী এবং দুই ছেলেও সক্রিয় ভাবে এসইউসি-র সঙ্গে যুক্ত।
এর আগেও দু’বার বিধানসভা ভোটে এবং দু’বার জেলা পরিষদে লড়েন মনসাবাবু। কোনও বারই দশ হাজারের বেশি ভোট পাননি। জেলা পরিষদের একটি বার বাদ দিয়ে তিন বার জামানত জব্দ হয়েছিল। তা হলে ফের লড়াইয়ে কেন?
ফোনে মনসাবাবুর জবাব, ‘‘ভোটে লড়ি কর্মী সংগ্রহের জন্য। দলের আদর্শ সবাইকে জানানোর জন্য।’’ যদিও এ বার মনোনয়ন পর্বের প্রথম দিন থেকেই পরিস্থিতি ‘প্রতিকূল’ ছিল বলে তাঁর দাবি। মারও খান বলে অভিযোগ। প্রৌ়ঢ়ের স্ত্রী মালতি মেটের কথায়, ‘‘মানুষটা ২৭ এপ্রিল থেকে বাড়িছাড়া। ভোট থেকে সরতে চাপ দেওয়া হয়েছে ওঁকে।’’
এসইউসি-র জেলা সম্পাদক অনিরুদ্ধ কুণ্ডুর দাবি, মনসাবাবুর ‘ঘরছাড়া’ হওয়ার কথা প্রশাসনের কর্তাদের বলা হয়েছে। প্রার্থীকে বাড়ি ফেরাতে সুরক্ষার ব্যবস্থা হবে, এমন আশ্বাসও মিলেছে। অনিরুদ্ধবাবু বলেন, ‘‘প্রচারের পরিস্থিতি নেই। মনসাবাবু বাড়ি ফিরলে ওঁকে সামনে রেখে আমরা প্রচার শুরু করব।’’
তৃণমূল পুরোদমে প্রচার শুরু করেছে। মনসাবাবুর বিপক্ষে তৃণমূলের প্রার্থী বিউটি মাজি বলেন, ‘‘উনি কখনই জেতেননি। ওঁকে ধর্তব্যে আনছি না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দৌলতে হওয়া উন্নয়নের কথা প্রচার করছি।’’ বিধায়কের দাবি, ‘‘উন্নয়নের পথে হাঁটছি আমরা। জয় নিশ্চিত।’’
অনিরুদ্ধবাবু বা এসইউসি-র জেলা কমিটির সদস্য দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় জেতা-হারার নিক্তিতে এই লড়াইকে মাপতে নারাজ। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘মানুষ জেনে গিয়েছেন, এখানে ভোট হচ্ছে এসইউসি–র জন্য। নাছোড় মনসাবাবুর সাফল্য এখানেই। এটা কি কম কথা! ’’