ক’দিন আগেও বৌদির ঘরে ভাল-মন্দ রান্না হলে বাটি ভরে পৌঁছে যেত ননদের ঘরে। ননদও সেই বাটি খালি ফেরাতেন না। সবই অতীত এখন!
বৌদি রয়ে গিয়েছেন সাবেক সিপিএমে। দাদার আসনটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় তাঁরই দায়িত্ব পড়েছে সেখানে দাঁড়িয়ে জিতে আসার। তাঁর মুখোমুখি ঘাসফুল হাতে ননদ। মনোনয়ন পেশের দিন থেকেই অদৃশ্য পাঁচিল উঠেছে যেন দুই বাড়ির মাঝে। বাটি চালাচালি বন্ধ!
মুর্শিদাবাদে বহরমপুর ব্লকের রাঙামাটি চাঁদপাড়া পঞ্চায়েতে আসন ২১টি। গত ভোটে কংগ্রেস ১০টি, সিপিএম ৯টি, আরএসপি ১টি আসন জিতেছিল। আর ছিলেন এক নির্দল। গোবিন্দপুর (পশ্চিম) মৌজার ৭ নম্বর বুথে জেতেন সিপিএমের আসরাউল শেখ। সেখানেই এ বার দাঁড়িয়েছেন তাঁর স্ত্রী পারভিনা বিবি। পরিবারটির নামডাক আছে গাঁয়ে। তৃণমূল তাই আসরাউলের খুড়তুতো বোন সুম্মাতন বিবিকে লড়াই দিতে নামিয়েছে।
গত পাঁচ বছরে অনেক কিছু পাল্টে গিয়েছে মুর্শিদাবাদে। বাম ও কংগ্রেস কর্মীদের দলবদলের জেরে শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তৃণমূল। গত বার পর্যন্ত যাঁরা ছিলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ, তাঁদের পাশে এখন পরিবারের লোকও নেই। বরং এখনও সিপিএম আঁকড়ে থাকায় অনেকেই মুখ ঘুরিয়েছেন আসরাউল-পারভিনাদের থেকে।
আরও পড়ুন: আচমকাই বিকল সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট
পারভিনার দেওর মাসুদ শেখের অভিযোগ, ‘‘দাদা গত পাঁচ বছরে কোনও উন্নয়ন করেনি। আমাদের পরিবারেরও কোনও উপকারে হয়নি। বিপিএল কার্ড পর্যন্ত করে দেয়নি দাদা। বৌদি জিতলে কোনও উপকার হবে না। তাই বোনের হয়েই প্রচারে নামব ঠিক করেছি।’’ আসরাউলের দাবি, ‘‘গত বার পঞ্চায়েত আমরা পাইনি। তবুও রাস্তাঘাট সংস্কার থেকে পানীয় জলের নলকূপ বসানো— অনেক কাজই করেছি। স্বজনপোষণ করব না বলেই নিজের পরিবারের জন্য বাড়তি কিছু করিনি। বিরোধীরা তা ভুলে যাচ্ছেন।’’ ননদ-বৌদির যে কিছু দিন আগেও বেশ ভাব-ভালবাসা ছিল, তা কিন্তু গোটা এলাকা জানে। দু’জনে মিলে বহরমপুরের দোকানে গিয়ে ইদে-পার্বণে কেনাকাটা, কাজের ফাঁকে আড্ডা-খুনসুটি, সন্ধেয় এক সঙ্গে বসে টিভিতে সিরিয়াল দেখা— কিছুই বাদ ছিল না। তাঁরাই এখন একে অন্যের মুখোমুখি পড়ে গেলে মাথা নিচু করে পালাতে ব্যস্ত।
নিজের গড়ে ক্রমশ হীনবল হয়ে পড়া প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীর নিজের নির্বাচনী এলাকায় পড়ে এই পঞ্চায়েত। সেখানে এই ননদ-বৌদি লড়াই দেখে ‘নেপোয় দই মারা’র হিসেব কষছে কংগ্রেস। দলের অঞ্চল কার্যকরী সভাপতি মহম্মদ কাজেম আলি বলেন, ‘‘ভোট কাটাকাটিতে আমাদেরই লাভ।’’ কে না জানে, ঘরের কাজিয়ায় পড়শিরই সুবিধে। কতটা, তার হিসেব তো পরে হবে!