‘টাকার খনি’ দখলের অভিপ্রায় সব দলেরই, জিতলেই মধুভাণ্ড!

প্রায় ২৫টি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে প্রতি বছর খরচ হয়। ফলে এমন ‘টাকার খনি’ দখলের অভিপ্রায় সব দলেরই থাকে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:৫৫
Share:

পঞ্চায়েত দখলে এত হিংসা কেন? ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের মনোনয়ন পর্ব দেখে অনেকের মনেই এখন এই প্রশ্ন। লড়াই কি শুধুই রাজনৈতিক, নাকি নেপথ্যে কোনও আর্থিক কারণও রয়েছে। প্রশাসনিক কর্তা এবং রাজনৈতিক দলগুলির বড় অংশের মতে, পঞ্চায়েত আসলে মধুভাণ্ড। প্রায় ২৫টি কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি প্রকল্পে কোটি কোটি টাকা পঞ্চায়েতের মাধ্যমে প্রতি বছর খরচ হয়। ফলে এমন ‘টাকার খনি’ দখলের অভিপ্রায় সব দলেরই থাকে। যেখানে যারা শক্তিশালী সেখানে তারা বিনা ভোটে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত বরাবরই জিতে নিতে চেয়েছে। অতীতে সিপিএমের বিরুদ্ধে বিনা ভোটে পঞ্চায়েত দখলের সেই অভিযোগ এখন শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

Advertisement

পঞ্চায়েত দফতরের তথ্য বলছে, ২০১৩-’১৪ থেকে ২০১৭-’১৮ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে পঞ্চায়েত দফতর বিভিন্ন প্রকল্পে ৫৯ হাজার ২৪৩ কোটি টাকা খরচ করেছে। এই টাকা পুরোটাই খরচ হয়েছে রাজ্যের ৩৩৪৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতে। ৫ বছরে গড়ে একটি গ্রাম পঞ্চায়েত ১৭.৭১ কোটির কাজ করেছে। বছরে যা সাড়ে তিন কোটির বেশি। পঞ্চায়েত দফতরের এক কর্তার কথায়,‘‘বছরে সাড়ে তিন কোটির বেশি একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে খরচ হওয়াটা বড় কথা নয়, এর মধ্যে অন্তত ২ কোটি টাকা এক জন গ্রাম প্রধান নিজের হাতে খরচ করেন। সেটাই আসল মজা।’’

প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, পঞ্চায়েতের ‘মজা’ যাঁরা এক বার পেয়েছেন, তাঁরা কোনও অবস্থাতেই ফের ভোটে গিয়ে জিতে আসার পরীক্ষা দিতে চান না। তার চেয়ে সাত দিনের মার দাঙ্গা করে যদি পঞ্চায়েত বিরোধীশূন্য করে দেওয়া যায় তা হলে তো কথায় নেই।

Advertisement

এ সব তত্ত্ব মানতে নারাজ পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কেন তাঁর দলের বিরুদ্ধে পঞ্চায়েত দখলের অভিযোগ সব চেয়ে বেশি? পঞ্চায়েত মন্ত্রীর জবাব, ‘‘আসলে গ্রামের মানুষ নিজেদের উন্নয়নের ভার নিজেরাই নিতে চান। দখল নয়, উন্নয়নের প্রতিযোগিতা চলছে। নীচের তলায় তৃণমূল ছাড়া আর কেউ নেই তাই মনে হতে পারে আমরাই সব করছি।’’ তা হলে পঞ্চায়েতে দূর্নীতি নেই? সুব্রতবাবু বলেন,‘‘একেবারে নেই সে কথা বলব না। তবে কোথাও কিছু হলে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে।’’

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা প্রাক্তন পঞ্চায়েত মন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত চান। তাঁর এক মন্ত্রী বলছেন বিরোধীশূন্য করলে ৫ কোটি পুরস্কার দেবেন। এতেই তো বোঝা যাচ্ছে টাকার থলি ঝুলিয়ে ভোট-সন্ত্রাস চলছে।’’

পঞ্চায়েত দফতর সূত্র জানাচ্ছে, ১০০ দিনের কাজ, চতুর্দশ অর্থ কমিশন, পঞ্চায়েত সশক্তিকরণের বিশ্ব ব্যাঙ্কের টাকা, নানাবিধ ভাতা প্রাপকের তালিকা তৈরি, বাড়ি দেওয়ার ব্যবস্থা ছাড়াও জল-রাস্তা-বিদ্যুতের কাজ তো রয়েইছে। এ সব ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত প্রধান এবং সদস্যদের ক্ষমতা প্রবল। ১০০ দিনের কাজের জব-কার্ড, বিভিন্ন ভাতার চেক বই, অন্ত্যোদয় যোজনার কার্ডও অনেক পঞ্চায়েত সদস্য নিজেদের কাছে রেখে দেন বলে মাঝে মাঝে পঞ্চায়েত ভবন অভিযোগ আসে। এ সব দিয়েই গ্রামের ভোট নিয়ন্ত্রিত হয় বলে মনে করা হয়। ফলে আর্থিক সুবিধা বিলিয়ে রাজনৈতিক লাভ তোলার এমন পাকাপোক্ত মাধ্যম কোনও দলই হারাতে চায় না। যে যখন শাসক থাকে, তারা তো নয়ই।

সেই সূত্র ধরেই বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘রাস্তায় দাঁড়ানো উন্নয়ন ভোটে সন্ত্রাস করেছে। বিজেপি এ বার সেই উন্নয়ন সন্ত্রাসীদের বাড়িতে নিয়ে যাবে। সেই দিন আসছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন