জয় নিশ্চিত বলছে শাসক, তবু ভাবনায় গেরুয়া আর আদিবাসী

জঙ্গলমহলের ‘হাসি’র পরীক্ষা

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতেন, ‘‘জঙ্গলমহল হাসছে।’’ সেই মুখ্যমন্ত্রীই এ বার মানছেন, বাঁশপাহাড়ির মতো জঙ্গলমহলের কিছু এলাকায় তাঁদের দলতে প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৮ ০০:০০
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

জঙ্গলমহলের হাসিমুখ ফের দেখতে মরিয়া শাসক। বিরোধীদের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটের ফলে ফিকে হবে শাসকের হাসি।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলতেন, ‘‘জঙ্গলমহল হাসছে।’’ সেই মুখ্যমন্ত্রীই এ বার মানছেন, বাঁশপাহাড়ির মতো জঙ্গলমহলের কিছু এলাকায় তাঁদের দলতে প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি। যদিও পরিসংখ্যান অবশ্য বলছে, বেলপাহাড়ির প্রতিটি ব্লকেই ত্রিস্তরে শাসক দলের প্রার্থী রয়েছে। প্রার্থী থাকলেও তৃণমূলকে ভাবাচ্ছে দলের গোঁজ প্রার্থীরাই। পরিস্থিতি যে এ বার একটু আলাদা তা মানছেন শাসক দলের একাংশ। তৃণমূল সূত্রের খবর, বেলপাহাড়ি থেকে বেলিয়াবেড়া, ঝাড়গ্রাম থেকে গোপীবল্লভপুর কিংবা নয়াগ্রামের মতো প্রত্যন্ত এলাকার আমজনতার মনে ক্ষোভের চোরাস্রোত বইছে। ভোট চাইতে গিয়ে কথা শুনতে হচ্ছে প্রার্থীদের। জঙ্গলমহলে শাসককে চিন্তায় রেখেছে ‘আদিম আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চ’। বেলপাহাড়ি ব্লকে ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট আসন ১২৮টি। সেখানে নির্দল প্রার্থী ১৩২ জন। যার বেশিরভাগই আদিবাসী সমন্বয় মঞ্চের। আদিবাসীদের আত্মমর্যাদার অধিকার ফিরে পাওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ প্রশাসনের দাবিতে ভোটে লড়ছেন সমন্বয় মঞ্চের প্রার্থীরা।

মঞ্চের অন্যতম নেতা ধর্মাল মান্ডির কথায়, ‘‘উন্নয়নের নামে প্রহসন হয়েছে। যাঁদের পাওয়ার কথা ছিল, তাঁরা কিছুই পাননি।’’

Advertisement

এলাকাবাসীর বঞ্চনা আর ক্ষোভকে পুঁজি করে আসরে নেমে পড়েছে বিজেপিও। বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, “পাঁচ বছরে মানুষকে মর্যাদা দেওয়া হয়নি। কাগজে কলমে উন্নয়ন দেখানো হয়েছে। এ বার সেই সব বঞ্চিত মানুষ আমাদের ছত্রছায়ায় এসে দুর্নীতিগ্রস্ত শাসকের বদল চাইছেন।” তাঁর দাবি, ভোটের ফলের পরে তৃণমূলের অমাবস্যা শুরু হবে।

ঝাড়গ্রাম

• মোট আসন: জেলা পরিষদে ১৬, পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৮৭, গ্রাম পঞ্চায়েতে ৮০৬

• মোট প্রার্থী: ২৭৩০, জেলা পরিষদে ৬৯,
পঞ্চায়েত সমিতিতে ৫৮৬, গ্রাম পঞ্চায়েতে ২০৭৫

• বুথ: ১০২৬

• মোট ভোটকর্মী: ৫,৬৫৬

• নিরাপত্তা কর্মী: ইন্সপেক্টর ১০, এএসআই/এসআই ২২২, সশস্ত্র পুলিশ কর্মী ১৩২৩, সিভিক ভলান্টিয়ার ১৫৮০। অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ এসেছে ২ কোম্পানি।

• কন্ট্রোল রুম: ০৩২২১-২২৫১৬১/২৫৭৯১৫

যদিও জেলা তৃণমূলের সভাপতি অজিত মাইতির দাবি, “জঙ্গলমহলে যে বিপুল উন্নয়ন হয়েছে, তা দেখেই ভোটাররা সব আসনে তৃণমূলকে জেতাবেন। বিরোধীরা কিছু করতে পারবে না।”

২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার অধীনে থাকা বর্তমান ঝাড়গ্রাম জেলার ১৬টি জেলা পরিষদ আসনের সব ক’টিতে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের প্রার্থীরা। তত্কালীন ঝাড়গ্রাম মহকুমার বর্তমানে ঝাড়গ্রাম জেলার আটটি পঞ্চায়েত সমিতির ক্ষমতাও দখল করেছিল তৃণমূল। জেলার ৭৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ৭৬টি গ্রাম পঞ্চায়েত শাসকদলের দখলে এসেছিল।

কার্যত বিরোধী শূন্য জঙ্গলমহলে পাঁচ বছরের একশো দিনের কাজ, পঞ্চায়েতের পরিষেবা বিলির ক্ষেত্রে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তবে শাসকদলের একংশের অভিযোগ, গ্রাম গঞ্জের মানুষকে ভুল বুঝিয়ে নতুন করে জঙ্গলমহলে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা হচ্ছে। বেলিয়াবেড়া ব্লকের খাড়বান্ধি অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি হরিপূর্ণ নায়েক বলছেন, “নানা প্রশ্নে এলাকায় কিছু মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তাই মানুষের কাছে গিয়ে অতীতের সন্ত্রাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শান্তি ও উন্নয়নের পক্ষে থাকার আবেদন জানাচ্ছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন