West Bengal Panchayat Elections

ভোট পরবর্তী হিংসা অব্যাহত, নিহত আরও ৪

বাঁশদা এলাকাতেও এক নির্দল প্রার্থীর বাড়িতে ভাঙচুর এবং লুঠ করা হয় বলে অভিযোগ। দু’টি ক্ষেত্রেই তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল। তৃণমূল যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৮ ১২:২৬
Share:

নিহত সাবির আলি শেখ।

ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস শুরু রাজ্যে। সোমবার নির্বাচন শেষ হতেই তার সাক্ষী থাকল বিভিন্ন জেলা।

Advertisement

উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় মৃত্যু হল আরও এক যুবকের। ভোটের দিন সন্ধ্যায় যশুর এলাকায় তাঁকে মারধর করা হয়েছিল। ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিলেন উজ্জ্বল শূর নামে এক ব্যক্তি। মঙ্গলবার সকালে বারাসত হাসপাতালে মারা গিয়েছেন তৃণমূল কর্মী সুশীল দাস। বছর পঁয়তাল্লিশের সুশীলবাবুর বাড়ি দক্ষিণ হাবড়ায়। তিনি রাত থেকে বারাসত হাসপাতালের আইসিসিইউতে ভর্তি ছিলেন। উজ্জ্বল এবং সুশীল, দু’জনেই এলাকায় তৃণমূল কর্মী হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। এই দু’জনের মৃত্যুর ঘটনায় বিজেপিকে অভিযুক্ত করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

অন্য দিকে, সোমবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে বোমা বাঁধতে গিয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের পরিবার ও গ্রামবাসীর দাবি, মৃতেরা তৃণমূল কর্মী। তবে তৃণমূল বলছে, মৃতেরা সিপিএম করতেন।

Advertisement

এ দিন সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরেও এক তৃণমূল কর্মীর দেহ উদ্ধার হয়েছে। নিহত যুবকের নাম সাবির আলি শেখ। সোমবার জয়নগর ২ নম্বর ব্লকের কুলতলি থানার চুপরি ঝাগরা গ্রাম পঞ্চায়েতে ভোট লুঠের অভিযোগ ওঠে। এর ফলে ভোটগ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। গভীর রাতে ওই বুথের পাশের একটি খেত থেকে সাবিরের দেহ উদ্ধার হয়েছে। এখনও দুই তৃণমূল কর্মী নিখোঁজ। গোটা ঘটনায় অভিযোগের তির সিপিএম এবং এসইউসিআইয়ের দিকে।

অন্য দিকে, পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের ডিমারি বাজার এলাকায় সোমবার রাতে সিপিএম জেলা কমিটির সদস্য চিত্ত খানের বাড়িতে ভাঙচুর এবং লুঠের অভিযোগ ওঠে। পাশপাশি, বাঁশদা এলাকাতেও এক নির্দল প্রার্থীর বাড়িতে ভাঙচুর এবং লুঠ করা হয় বলে অভিযোগ। দু’টি ক্ষেত্রেই তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল। তৃণমূল যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

হামলার পর চিত্ত খানের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।

সোমবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ডিমারি বাজারে সিপিএম পার্টি অফিসে বসেছিলেন পূর্ব মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য চিত্ত খান। সেই সময় তিনি খবর পান, তাঁর বাড়িতে জনা চল্লিশেক লোক বাইক নিয়ে হামলা চালিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, দোতলা বাড়ির প্রত্যেকটি ঘরে ভাঙচুর চালায় দুষ্কৃতীরা। চিত্তবাবুর ছেলে ডাক্তারি পড়েন। তাঁর ল্যাপটপ-সহ বিভিন্ন নথিপত্র, ইলেক্ট্রনিক্স জিনিসপত্র ভাঙচুর ও লুঠপাট করে। সিপিএম নেতার অভিযোগ, তৃণমূলই এই হামলা চালিয়েছে।

আরও পড়ুন: রক্তে স্নান করল গণতন্ত্রের ভোট, নিহত ১৬

এর আগে পঞ্চায়েতে মনোনয়ন পর্বে চিত্তবাবুর বাড়িতে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। প্রথম বার দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন তুলে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। সেই সময়েও তাঁর বাড়িতে হামলা চালানো হয়। পরে আর এক বার একই কারণে তাঁর বাড়ির বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। চিত্তবাবু পেশায় ডিমারি হাইস্কুলের শিক্ষক। স্ত্রী স্বাস্থ্য দফতরের কর্মী। আর এক ছেলে ডাক্তারি পড়ছেন। কেন হামলা চালানো হল? চিত্তবাবুর কথায়, ‘‘ভোটের দিন এলাকায় মোটরসাইকেল বাহিনী ঘুরে বেড়াচ্ছিল। বিভিন্ন বুথে গিয়ে ছাপ্পা ভোট দিচ্ছিল। তাতে বাধা দেন দলীয় কর্মীরা। সেই কারণেই সন্ধ্যায় আমার বাড়িতে এসে হামলা করে।’’ তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত তমলুক থানা থেকে কোনও পুলিশকর্মী তাঁর বাড়িতে যাননি।

আরও পড়ুন: কমিশন ভাল, দল সহিষ্ণু, বলল তৃণমূল

তবে তৃণমূলের ব্লক আহ্বায়ক শরৎ মেটিয়ার দাবি, ওই ঘটনায় তাঁদের দলের কর্মীরা জড়িত নন। তাঁর কথায়, ‘‘তরঙ্গখালি গ্রামে ভোট দিতে বাধা দিয়েছিল সিপিএম। চিত্ত খানের নেতৃত্বে সিপিএম কর্মীরা ভোটের দিন বিভিন্ন বুথে গোলপাল পাকায়। আমাদের লোকজনকে মারধর করে। সেই ক্ষোভে এলাকার বাসিন্দারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে খবর পেয়েছি।’’

অন্য দিকে, শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের কোলাঘাট থানার বাঁশদা গ্রামে এক নির্দল প্রার্থী শেখ নইমুদ্দিনের বাড়িতে হামলা চালায় দুষ্কৃতীরা। ঘরবাড়ি ভাঙচুরের পাশাপাশি জিনিসপত্র লুঠপাট করা হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় সিপিএমের চার কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সিপিএমের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই ওই ঘটনা ঘটেছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। শরৎবাবুর কথায়, ‘‘বাঁশদায় আমাদের দলীয় কর্মীদের উপর নির্দল প্রার্থীর লোকেরা আক্রমণ করেছিল। তার পর নিজেরাই গণ্ডগোলে জড়িয়ে পড়ে।’’

পাশাপাশি, হুগলির পুরশুড়ার ডিহিবাতপুরে ছাপ্পা ভোট রুখতে গেলে পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগ ওঠে। ওই রাতেই তৃণমূল নেতা-সহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সবংয়ের চাউলকুড়ি, ডেবরার ভবানীপুর এলাকায় সংঘর্ষ। গোয়ালতোড়ের গ্রামে ভোট পরবর্তী তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ, জখম উভয় পক্ষের ৫ জন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন