পাঁচ বছরেই গোয়ালতোড়ে শেষ ‘মমতা মডেল’!
পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতা ২ পঞ্চায়েত সমিতির অন্তর্গত গোয়ালতোড় গ্রাম পঞ্চায়েতে ১২টি আসন। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে সব ক’টি আসনেই মহিলাদের প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। জিতেওছিলেন প্রত্যেকে। প্রধান হয়েছিলেন মমতা বিশুই। সেই থেকে এলাকায় এই পঞ্চায়েত হয়ে উঠেছিল ‘মমতা মডেল’। গোয়ালতোড়ের উদাহরণ দিয়ে রাজ্যে মহিলাদের ক্ষমতায়নকে সরকারের অগ্রগতির মাইলফলক হিসাবে তুলে ধরা হয়েছিল। জেলায় এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও মহিলাদের হাতে আস্ত একটা পঞ্চায়েতের শাসনভার তুলে দেওয়ার ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন।
অথচ পাঁচ বছর পরে ছবিটা বদলে গিয়েছে। পঞ্চায়েত পরিচালনা করা ১২ জনের মধ্যে ১১ জনকেই এ বার আর প্রার্থী করা হয়নি। প্রধান মমতাদেবী-সহ টিকিট পাননি কবিতা মাহাতো, সর্বাণী মণ্ডল, ষষ্ঠী মণ্ডল, রিনা কুণ্ডুর মতো অনেকেই। শুধুমাত্র টিকিট পেয়েছেন নীতু দুবে।
কেন টিকিট পেলেন না ১১ জন? কাজের নিরিখেই এই সিদ্ধান্ত? নাকি নেপথ্যে রয়েছে অন্য সমীকরণ?
গোয়ালতোড়ের তৃণমূল নেতা তথা জেলা কিসান খেতমজুর সেলের সভাপতি দুলাল মণ্ডল বলছেন, ‘‘মহিলারা এই পাঁচ বছরে দক্ষতার সঙ্গে পঞ্চায়েত পরিচালনা করেছেন।’’
তা হলে? শাসক দলের অন্দরের খবর, মহিলা পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের অনেকেরই সঙ্গেই বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে স্থানীয় নেতৃত্বের বিরোধ হচ্ছিল। দল যে ভাবে চেয়েছিল সে ভাবে পঞ্চায়েত পরিচালিত না হওয়াতেই আপাতত ‘মমতা মডেল’-এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে না। যদিও তা স্বীকার করতে চাননি কেউ। সরাসরি জবাব এড়িয়ে সকলেরই বক্তব্য, সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। দুলালবাবুর কথায়, ‘‘দলের সিদ্ধান্ত মতো এ বার নতুন কয়েকজন মহিলার সঙ্গে কয়েক জন পুরুষকেও এই গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী করা হয়েছে। সম্পূর্ণ মহিলা পঞ্চায়েত না হোক, সংরক্ষণের ফলে গ্রাম প্রধান তো মহিলাই হবেন!’’
জেলা তৃণমূল সভাপতি অজিত মাইতিও বিবাদের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিবাদের কোনও প্রশ্ন নেই। স্থানীয় নেতৃত্বের কথা মতোই প্রার্থী তালিকা ঠিক হয়েছে।’’ কী বলছেন মমতাদেবী? দলের সিদ্ধান্তকেই প্রাধান্য দিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ইচ্ছে হয়তো ছিল, কিন্তু দলের ঊর্ধে তো কেউ নয়। যিনি আসবেন আমার চেয়েও হয়তো ভাল কাজ করবেন তিনি।’’
বাম আমলে এই জেলারই বেনাচাপড়া ও সাঁকরাইল গ্রাম পঞ্চায়েত একবার করে সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত গ্রাম পঞ্চায়েতের শিরোপা পেয়েছিল। পালাবদলের পরে তালিকায় ঢুকেছিল গোয়ালতোড়ও। পাঁচ বছর পরে পুনরাবৃত্তি হল না।