Tapas Paul

তাপস চলে গেলেন, রোজভ্যালি মামলায় গুরুত্ব নিয়েই রয়ে গেল তাঁর বয়ান

সিবিআইয়ের ‘অবিচারের’ উত্তর তিনি দিতে পারবেন, এমনটাই আশা করেছিলেন নায়ক।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৯:০৫
Share:

রোজভ্যালি তদন্তে তাপস পালের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছিল সিবিআই।—ফাইল চিত্র।

২০১৭-র জুলাই মাস। তাপস পাল তখন ভুবনেশ্বরের একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিশেষ কেবিনে ভর্তি। চিকিৎসা চলছে। সেই সময় তাঁর কাছে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার দুই আধিকারিক। সেখানে তাঁরা দেখেছিলেন ভাঙাচোরা এক মানুষকে। বার বার একটাই কথাই বলছিলেন, তাঁর আর কিছু বলার বাকি নেই। নতুন করে দেওয়ার মতো নেই কোনও তথ্যও। ভেঙে পড়া সেই মানুষটাতার প্রায় সাত মাস পর, ২০১৮-র ফেব্রুয়ারিতে কটক হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছিলেন তাপস পাল

Advertisement

বাংলা ছবির জগতের অন্যতম সেরা অভিনেতা তাপস পালকে তদন্তের সুবাদে খুব কাছ থেকে দেখেছিলেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের একাধিক আধিকারিক। তাঁদের মধ্যে বাংলাভাষীও ছিলেন কয়েকজন। যাঁদের অনেকেই নিজেদের যৌবনে ফ্যান ছিলেন ওই অভিনেতার। মঙ্গলবার সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর শোনার পর তাঁদের গলাতেও বেদনার সুর। একজন তো হঠাৎ করেই বলে ফেললেন ভুবনেশ্বরের হাসপাতালের ওই দিনের ঘটনা।

ব্যক্তি তাপস পালকে খুব কাছ থেকে দেখা ওই আধিকারিকদের একজন এখনও মনে করতে পারেন ২০১৬-র ৩০ ডিসেম্বরের কথা। সে দিন নির্ধারিত সময়ের একটু আগেই সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই দফতরে হাজির হয়েছিলেন তাপস পাল। তার আগে বেশ কয়েকবার রোজভ্যালি চিট ফান্ডের তদন্তে সিবিআই তাঁকে ডাকলেও তিনি হাজির হননি। সিবিআই তাঁকে নিজেদের দফতরে হাজিরা দেওয়ার জন্য ওই দিনই শেষ সময় বেঁধে দিয়েছিল। ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘তখন তিনি একজন সাংসদ। দফতরে ঢোকা থেকেই তাঁর শরীরী ভাষায় বার বার ফুটে উঠছিল সেই পরিচয়।” সে দিনের ঘটনা সবিস্তারে বলতে রাজি না হলেও, অন্য এক আধিকারিক ইঙ্গিত দেন, প্রথম থেকেই তিনি তাঁর ব্যবহারে প্রকাশ করে ফেলছিলেন যে, তিনি এক জন সাংসদ। সে দিন তদন্তকারীরাও তাঁদের প্রথামাফিক ঢঙে সেই শরীরী ভাষা অগ্রাহ্য করেছিলেন। আর তাতে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আরও মেজাজ হারাচ্ছিলেন ‘নায়ক’। মৃত্যুর পর তাঁর সম্পর্কে কোনও কথা বলা উচিত নয় বলে এক আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি কোনও ভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না যে, আমরা তাঁকে গ্রেফতার করেছি!”

Advertisement

আরও পড়ুন: বিদ্রোহ, কেলেঙ্কারি সব ছাপিয়ে তাপসের জন্য রয়ে গেল চোখের জল​

এর পরেই তাপস পালকে বিমানে নিয়ে যাওয়া হয় ভুবনেশ্বরে। সেখানেও শুরুর দিকে তিনি বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন যে, দ্রুত তাঁর বন্দিদশা ঘুচবে। তাঁর প্রতি সিবিআইয়ের ‘অবিচারের’ উত্তর তিনি দিতে পারবেন, এমনটাই আশা করেছিলেন। কিন্তু, মাসের পর মাস চলে যায়। কখনও ঝাড়পরা জেল হাসপাতালের বেডে আবার কখনও বেসরকারি হাসপাতালের কেবিনে থাকতে থাকতে নিজের উপরেই বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলেন তৎকালীন কৃষ্ণনগরের সাংসদ।

এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘স্ত্রী, মেয়ে নিয়ম করে তাঁর সঙ্গে দেখা করলেও, দ্রুত শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে তাঁর।’’ আর সেখান থেকেই কোনও একদিন মন্তব্য করেছিলেন, তাঁর সমস্ত পতনের মূলে রাজনীতি। এক সিবিআই আধিকারিক ইঙ্গিত দেন, ‘‘বন্দিদশার শেষ দিকে তিনি বার বার শিল্পী হয়ে রাজনীতির ময়দানে পা দেওয়ার জন্য আক্ষেপ করতেন।”এক আধিকারিক বলেন, ‘‘শুরুর দিকে তদন্তে তিনি সহায়তা না করলেও, পরের দিকে খুবই সাহায্য করেছিলেন।এখন তো তিনি সব আইনেরই ঊর্ধ্বে।”

সিবিআই রোজভ্যালি তদন্তে তাপস পালের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছিল। সেই মামলার বিচার প্রক্রিয়া এখনও শুরুই হয়নি। ওই মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী এ দিন বলেন, ‘‘তাঁর মৃত্যুর সার্টিফিকেট জমা দিয়ে তাপস পালের পরিবার আদালতে আবেদন জানাতে পারে ওই মামলা থেকে নাম বাদ দিতে।” তিনি ব্যাখ্যা করেন,‘‘এর পর আদালত পুলিশকে ওই সার্টিফিকেটের সত্যতা যাচাই করার নির্দেশ দেবে। সত্যতা মিললেই মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়া হবে তাঁর।’’

আরও পড়ুন: তাপস পাল: এক বিষণ্ণ ভালমানুষ থেকে ট্র্যাজিক হিরো​

তবে সিবিআইয়ের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘মামলা থেকে তাঁর নাম বাদ গেলেও, তাঁর দেওয়া বয়ান কিন্তু থেকে যাবে। সেই বয়ান বিচার প্রক্রিয়াতেও গুরুত্বপূর্ণ হিসাবেই বিবেচনা করা হবে।’’

বন্দিদশা ঘুচতেই রাজনীতিকে জীবন থেকে বিদায় জানিয়েছিলেন। কিন্তু জীবন থেকে বিদায় নিয়েও তিনি থেকে যাবেন রোজভ্যালির হাজার হাজার পাতার দস্তাবেজে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন