BHARATI GHOSH

গোপন ডেরা থেকে সরকারি নথি সামনে এনে এ বার সিআইডি-কে চ্যালেঞ্জ ভারতীর!

ভারতীর প্রশ্ন, ‘‘আদালতে তথ্য দেওয়ার আগে কী রেকর্ড দেখে নেয়নি? সেই সময় কি জেলার পুলিশ সুপার ছিলাম, যে তোলাবাজির টাকাতে ওই বাড়ি তৈরি হবে?’’ এমন আরও নানা বিষয়ে বিস্ফোরক তিনি।

Advertisement

সোমনাথ মণ্ডল

শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৮ ১৫:০৬
Share:

নথিকে অস্ত্র করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের চ্যালেঞ্জ ভারতীর। —ফাইল চিত্র।

তোলাবাজির টাকায় নয়, মাদুরদহের জমিতে বাড়ি তৈরি হয়েছিল করমুক্ত টাকাতেই। একটি সরকারি নথিকে ঢাল করে এ বার সিআইডিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন রাজ্যের প্রাক্তন আইপিএস অফিসার ভারতী ঘোষ। তাঁর দাবি, “আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় নথি আমরা হাতে রয়েছে। আদালতে আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করে দেব। সিআইডি দিন গুণতে শুরু করুন।”

Advertisement

এর জবাব সিআইডি-র ডিআইজি (অপারেশনস) নিশাত পারভেজ বলেন, “আগে উনি মামলা করুন। ওঁর হাতে কী প্রমাণ রয়েছে দেখা যাবে। কে, কী বলল এ সব নিয়ে ভাবি না।”

কী সেই নথি? মাদুরদহের একটি জমিকে কেন্দ্র করে বিতর্কের শুরু। ওই জমিতে তোলাবাজির টাকায় বাড়ি তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।

Advertisement

আরও পড়ুন: ভারতীর হিসাব বর্হিভূত সম্পত্তি ৩২০ শতাংশ! নয়া মামলা দায়ের করল সিআইডি

গোপন ডেরা থেকে ভারতীর দাবি, ২০১০ সালের ৩০ অগস্টের সেই নথিতে মাদুরদহের ওই জমির মালিক হিসেবে তৎকালীন ডিএসপি (আইবি) তাঁর নামে রয়েছে। অবশ্য তিনি তখন ডেপুটেশনে রাষ্ট্রপুঞ্জের হয়ে সোমালিয়ায় কর্মরত ছিলেন। তাই তিলজলা থানা এলাকার ওই ‘প্লট’-এর (খতিয়ান নম্বর: ১৩০, তৌজি নম্বর: ২৯৯৮, দাগ নম্বর: ৪১১) জমিতে বাড়ি তৈরির অনুমতির জন্য এম এভি রাজুর নামও উল্লেখ রয়েছে। ওই সরকারি ‘অর্ডার’-এ সই ছিল তৎকালীন রাজ্য সরকারের ডেপুটি সেক্রেটারি আর কে চট্টোপাধ্যায়ের।

ভারতীর প্রশ্ন, ‘‘আদালতে তথ্য দেওয়ার আগে কী রেকর্ড দেখে নেয়নি? সেই সময় কি জেলার পুলিশ সুপার ছিলাম, যে তোলাবাজির টাকাতে ওই বাড়ি তৈরি হবে?’’ তাঁর দাবি, তিনি যে বেতন পেতেন, তা সম্পূর্ণ করমুক্ত। ডেপুটেশনে থাকার সময় মোট আড়াই কোটি টাকা তিনি রোজগার করেছিলেন। বাড়ি তৈরির জন্য সেই সময়ে দেড় কোটি টাকা স্বামীকে পাঠিয়েছিলেন। সেই নথিও নাকি তিনি সিআইডি-কে দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও গোয়েন্দারা আদালতের কাছে তথ্য গোপন করছেন বলে তাঁর অভিযোগ।

আরও পড়ুন: ফের ভারতীর নামে জারি গ্রেফতারি পরোয়ানা

ভারতী ঘোষের হাতিয়ার এই নথিই। —নিজস্ব চিত্র।

পশ্চিম মেদিনীপুরের কোতোয়ালি থানায় সিআইডি-র দায়ের করা এফআইআর-এর প্রেক্ষিতেও তিনি মুখ খুলেছেন। সিআইডি ওই এফআইআর-এ দাবি করে, ভারতীর আয় বহির্ভূত সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় ৩২০ শতাংশ। এই প্রেক্ষিতে ভারতীর দাবি, ওই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। সম্পত্তি হিসাব বর্হিভূত নয়। বিষয়টি প্রমাণ করতে যাতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়, তা নিয়ে আদালতের কাছে ভারতী আর্জি জানাতে চলেছেন বলে জানা গিয়েছে।

আগেই সোনা কেনার নামে প্রতারণার অভিযোগে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন চন্দন মাজি নামে এক ব্যক্তি। সেই মামলার চার্জশিটে ভারতী ঘোষ, তাঁর স্বামী এম এভি রাজু এবং ভারতীর দেহরক্ষী সুজিত মণ্ডল-সহ ৯ জনের নাম রয়েছে। এই মুহূর্তে রাজু সিআইডি হেফাজতে রয়েছেন। মাদুরদহের জমি এবং বাড়ি সংক্রান্ত সব নথিই সিআইডি নিয়ে গিয়েছে। তাঁর স্বামী এম এভি রাজু আদালতে বিচারকের কাছে সিআইডি হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ করেছেন। এর পর আরও চটেছেন ভারতী ঘোষ। তিনি সুপ্রিম কোর্টে দেখে নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

ফেব্রুয়ারি মাস থেকে অন্তর্বতীকালীন জামিনে ছিলেন রাজু। জামিনের মেয়াদ শেষ হয়ে যেতেই হাইকোর্ট থেকে বেরনোর পর তাঁকে গ্রেফতার করেন গোয়েন্দারা। ভারতীর অভিযোগ, রাজুর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেরার নামে তাঁর উপরে নানা ভাবে চাপ সৃষ্টি করা হয়েছে। তাতেই রাজু মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন।

আরও পড়ুন: রাজুর মুখে ভারতী-বন্দনা

চন্দন মাজি নামে দাসপুরের এক ব্যবসায়ীর অভিযোগ, নোটবন্দির সময়ে বেশি টাকা ফেরত দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে ৩৭৫ গ্রাম সোনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরে তাঁকে কোনও টাকা দেওয়া হয়নি। পরে অবশ্য চন্দন মাজিও সিআইডি-র বিরুদ্ধে জোর করে বয়ান নেওয়ার অভিযোগ করেছে। এমনকি হাইকোর্টেও মামলা দায়ের করেছেন।

(দুই চব্বিশ পরগনা, হাওড়া ও হুগলি, নদিয়া-মুর্শিদাবাদ, সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের খবর পেয়ে জান আমাদের রাজ্য বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন