ফাইল চিত্র।
দিনভর তল্লাশি চালানো হয়েছে তাঁর দুই বাড়িতে। সিআইডি হানা দিয়েছে তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবে পরিচিত দুই পুলিশ অফিসারের বাড়িতেও। শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে সরব হলেন প্রাক্তন পুলিশকর্ত্রী ভারতী ঘোষ। কোনও কারণ না দেখিয়েই তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে বলে ভারতী জানান হোয়াট্সঅ্যাপ বার্তায়। পরে সেই একই কথা অডিও ক্লিপের মাধ্যমেও ছড়িয়ে দেন তিনি। কলকাতায় ফিরেই তিনি আইনানুগ পদক্ষেপ করবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন মাসখানেক আগে চাকরিতে ইস্তফা দেওয়া এই আইপিএস।
হোয়াট্সঅ্যাপে এবং অডিও বার্তায় ভারতী জানিয়েছেন, তিনি এখন বাংলার বাইরে রয়েছেন এবং তিনি খবর পেয়েছেন যে, দক্ষিণ কলকাতার নাকতলায় তাঁর স্বামীর বাড়িতে সিআইডি হানা দিয়েছে এবং তল্লাশি চালিয়েছে। ভারতী লিখেছেন, ‘‘কোনও কাগজপত্র দেওয়া হয়নি, কেন বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে, তা-ও বলা হয়নি। আমার স্বামীকে একটা ঘরে তালাবন্ধ করে রাখা হয় এবং গোটা বাড়ি তছনছ করা হয়।’’
ভারতী ঘোষের অভিযোগ, কোনও আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হয়নি তাঁর স্বামীকে, ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। তিনি ফেসবুকে পোস্টে এবং অডিও বার্তায় জানিয়েছেন, চাকরিতে ইস্তফা দেওয়ার ঠিক আগেই রাজ্যের পুলিশ বিভাগ তাঁকে ‘শৌর্য’ পুরস্কার এবং রাষ্ট্রপতি পুরস্কার দেওয়ার জন্য সুপারিশ পাঠিয়েছিল। কিন্তু তিনি পুলিশের চাকরি আর করতে চাইছিলেন না বলে ওই পদকের দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন বলে ভারতীর দাবি। যখন তিনি ইস্তফা দেন, তখনও তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ ছিল না বলে ভারতী ঘোষ জানিয়েছেন। ইস্তফা দেওয়ার পরে তাঁর সঙ্গে যা কিছু ঘটছে, তার বিচার করার ভার তিনি জনগণের উপরে ছেড়েছেন।
আরও পড়ুন: ভারতী ঘোষ, ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে বাড়িতে সিআইডি তল্লাশি
এই সিআইডি হানা যে তিনি বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নেবেন না, তা-ও ভারতী জানিয়েছেন। কলকাতায় ফেরার পর তিনি সব রকমের আইনানুগ পদক্ষেপ করবেন বলে ভারতী ঘোষ জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাত দুটো নাগাদ, দক্ষিণ কলকাতায় ভারতীর নাকতলার বাড়িতে হানা দেয় সিআইডির ১০ জনের একটি দল। ভারতীর স্বামী ওই বাড়িতেই আছেন। সিআইডির আর একটি দল তল্লাশি চালাচ্ছে ভারতীর মুকুন্দপুরের বাড়িতে।
ভারতী ঘনিষ্ঠ যে সব পুলিশ অফিসারের বাড়িতে সিআইডি তল্লাশি অভিযানে নেমেছে তাঁদের মধ্যে এক জন হলেন বেলদা থানার ওসি প্রদীপ রথ। তাঁর বিরুদ্ধে আগেও হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি রাখার অভিযোগ উঠেছিল। তল্লাশি চালানোর সময় ওই ওসির বাড়ি থেকে অনেক সোনা আটক করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জেলা পুলিশের এক সূত্র মারফত্ জানা গিয়েছে, ভারতী-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ওই ওসিকে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে সিআইডি সূত্রে খবর। পাশাপাশি, বেলদার একটি সোনার দোকানেও তল্লাশি চালাচ্ছেন সিআইডির আধিকারিকরা। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, সেখান থেকেই সোনার গয়না কিনেছিলেন ওই ওসি। সে সব গয়নার হিসাব ও তালিকা নেওয়া হচ্ছে বলে সিআইডি সূত্রে খবর।
প্রদীপ রথ ছাড়াও মহিষাদলের সিআই শুভঙ্কর দে-র বাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে সিআইডি।
আরও পড়ুন: তাপসের জামিন, নীরব রইল দল
পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারের পদ থেকে গত ২৫ ডিসেম্বর রাতে আচমকাই ব্যারাকপুরে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের তৃতীয় ব্যাটেলিয়নের কম্যান্ডিং অফিসারের পদে বদলি করা হয়েছিল ভারতীকে। তিনি সেই পদে যোগ না দিয়ে সরাসরি চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে দেন। রাজ্য সরকার সেই ইস্তফাপত্র গ্রহণও করে নেয়। নবান্ন শুধু সেখানেই থেমে থাকেনি। প্রাক্তন পুলিশ সুপারের ঘনিষ্ঠ বেশির ভাগ পুলিশ কর্তা বা কর্মীকেই বিভিন্ন জায়গায় বদলি করে দেওয়া হয়।