ফাইল চিত্র।
দুপুরে শিলিগুড়িতে বসেছিল সর্বদল বৈঠক। তার কয়েক ঘণ্টা আগে সিংমারির ঘটনায় বিমল গুরুঙ্গ, আশা গুরুঙ্গের নাম জুড়ে দেওয়া হয়। দায়ের করা হয়েছে খুনের মামলাও। আর বৈঠকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাতলেবাসে নিজের বাড়ি থেকে আন্দোলন আরও তীব্র করার কথা ঘোষণা করেন গুরুঙ্গ।
বৈঠকের পরে অবশ্য আবার শান্তি আলোচনার বার্তাই দিয়েছে রাজ্য। তারা জানিয়েছে, প্রথম বৈঠকে সে ভাবে সাড়া না মিললেও ফের আলোচনার প্রস্তাব পাঠানোর কথা ভাবা হচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরও একটি সর্বদল বৈঠক ডাকা হতে পারে বলেও সরকারি সূত্রে খবর।
শান্তি আলোচনার প্রস্তাব দেওয়ার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাতেও বাহিনী মোতায়েন রাখা নিয়ে আগের অবস্থানে অনড় থাকার ইঙ্গিতই দিয়েছে রাজ্য। স্বরাষ্ট্রসচিব মলয় দে বলেছেন, ‘‘আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফেরানোর প্রক্রিয়া যেমন চলবে, তেমনই অশান্তি রোখার জন্য সব কিছু করা হবে। কারণ, পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখাটা রাজ্যের সাংবিধানিক কর্তব্য।’’
সেই মতো এ দিনও পাহাড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং কলকাতা পুলিশের বিশেষ দল টহলদারি চালিয়েছে। প্রশাসনিক ভাবে কঠোর অবস্থান নিয়ে বন্ধে গরহাজিরার নিয়ে সরকারি প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ জারি হয়েছে। পাহাড়ের পঞ্চায়েতগুলিতে গিয়ে নজরদারি করার জন্য সিভিক ভলান্টিয়ারদের দল পাঠানোর কথাও বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন:সিংমারির ঘটনায় খুনের মামলা গুরুঙ্গের বিরুদ্ধে
কিন্তু এ সব করে যে তাঁদের আন্দোলনের পথ থেকে সরানো যাবে না, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন বিমল গুরুঙ্গ। গত বৃহস্পতিবার তাঁর পাতলেবাসের বাড়িতে তল্লাশি হয়। তার পর থেকেই নিখোঁজ গুরুঙ্গ। এ দিন কিন্তু তিনি পাতলেবাসে দাঁড়িয়েই একটি ইংরেজি চ্যানেলকে সাক্ষাৎকার দেন। সেখানে তিনি জানান, জিটিএ থেকে তাঁরা আজ, শুক্রবার একযোগে পদত্যাগ করবেন। ইস্তফাপত্র পাঠিয়ে দেবেন রাজ্যপালের কাছে। তার পর আন্দোলন আরও তীব্র করা হবে। তিনি স্পষ্ট বলেন, ‘‘আমার হাল কিষেণজির মতো হতে পারে। তবু শেষ দেখে ছাড়ব।’’
মোর্চার একটি অংশের দাবি, পাহাড়ের সর্বদলে জিএনএলএফ ও হরকাবাহাদুরের দলের মতো বিরোধীপক্ষের যোগ দেওয়া এবং সমতলের সর্বদল বাম, কংগ্রেস, বিজেপির বয়কটের পরে গুরুঙ্গ উজ্জীবিত। তাঁর ধারণা, সমতলের দলগুলিও মোর্চাকে পরোক্ষে সমর্থনই করেছে। বেঙ্গালুরু, মুম্বই থেকে শুরু করে উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজ্যে গোর্খাদের সমর্থনে মিছিল হয়েছে। এটাই আন্দোলনকে তীব্র করার
সেরা সুযোগ।
গুরুঙ্গদের জন্য ‘সুখবর’ শুনিয়েছে কেন্দ্রও। পাহাড় পরিস্থিতি সামলাতে দশ কোম্পানি আধা সেনা চেয়েছিল রাজ্য। দু’দফায় তার সাত কোম্পানি এসেছে। এ দিন দিল্লি নবান্নকে জানিয়েছে, তাদের কাছে যা গোয়েন্দা রিপোর্ট তাতে আরও আধা সেনা গেলে পাহাড়ের সাধারণ মানুষ আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়বে। তাই এখন বাড়তি বাহিনী দেওয়া হবে না।
‘সুখবর’ রয়েছে সমতলের দলগুলির ভাষ্যেও। বিজেপির মতো এ দিন সিপিএম-ও ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের উপরে জোর দিয়েছে। ফলে মোর্চা যে বারবার আলোচনায় কেন্দ্রকে সঙ্গী করতে চাইছে, সেই দাবির জোর বাড়ল বলে মনে করছেন গুরুঙ্গরা।
এই অবস্থায় রাজ্যের শান্তির বার্তা শেষ পর্যন্ত কতটা মোর্চার কানে যায়, সেটাই দেখার।