অপমান মাখছেন না, ফের সোমনাথের বাড়িতে যাবেন বিমান

বিমানবাবুর কথায়, ‘‘বাবা মারা যাওয়ার পরে ছেলের মাথাটা একটু খারাপ হয়েছিল। আমি ওঁর পাল্টা বলব কেন?’’

Advertisement

সন্দীপন চক্রবর্তী

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৫১
Share:

বিমান বসু।

মেয়ে বলেছিলেন, বাবার মরদেহে লাল পতাকা চাই না। পুরনো দলের দফতরেও দেহ নিয়ে যাওয়ার দরকার নেই। ছেলে আঙুল তুলে এক বর্ষীয়ান সিপিএম নেতাকে বলেছিলেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে। তাঁদের সেই মনোভাব এখনও বদলানোর খবর নেই। তবে সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ের মরদেহের আশেপাশে ওই ‘তিক্ততা’র পর্বকে ভুলেই এগোতে চাইছে সিপিএম। বহিষ্কৃত ‘কমরেডে’র স্মরণসভা করতেও তারা উৎসাহী।

Advertisement

রাজা বসন্ত রায় রোডের বাড়িতে সোমবার সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য ও সাংসদ মহম্মদ সেলিমের ‘স্পর্ধা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সোমনাথবাবুর আইনজীবী-পুত্র প্রতাপ চট্টোপাধ্যায়। আর এক পলিটব্যুরো সদস্য বিমান বসুকে সটান বলেছিলেন বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে। ঘরভর্তি লোকের মাঝেই মন্তব্য করেছিলেন, বিমানবাবু ‘লুকিয়ে’ তাঁদের বাড়িতে ঢুকেছেন। তাঁর ক্ষোভের কারণ, ১০ বছর আগে লোকসভার তৎকালীন স্পিকার সোমনাথবাবুকে দল থেকে বহিষ্কারের সময়ে বিমান-সেলিমের কিছু বিবৃতি। সোমনাথবাবুর শেষ যাত্রার মাঝে ওই ঘটনার খবর প্রকাশ্যে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় আম নাগরিক এবং সিপিএমের নিচু তলার কর্মী-সমর্থকদের একাংশও প্রয়াত নেতার পরিবারের পক্ষে দাঁড়াতে শুরু করেছেন। তাঁদের যুক্তি, জীবদ্দশায় সোমনাথবাবুকে যে ‘অসম্মান’ তাঁর প্রিয় দল করেছিল, মৃত্যুর পরে লাল পতাকা দিয়ে বা পার্টি অফিস ঘুরিয়ে তার আর মেরামতি হয় না!

স্বয়ং বিমানবাবু অবশ্য এমন আক্রমণ গায়ে মাখছেন না। বরং, আবহ একটু শান্ত হলে তিনি আবার যেতে চান সোমনাথ-জায়া রেণু চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে। বিমানবাবুর কথায়, ‘‘বাবা মারা যাওয়ার পরে ছেলের মাথাটা একটু খারাপ হয়েছিল। আমি ওঁর পাল্টা বলব কেন?’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘সোমনাথদা আর বৌদির সঙ্গে আমার কত দিনের সম্পর্ক! বৌদির সঙ্গেই কথা হয়েছে কাল। বলেছি, আবার যাব।’’ বাড়িতে গিয়ে সোমবার সোমনাথবাবুর স্ত্রী ও মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। তাঁরও এক কথা— ‘‘কিছু ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সোমনাথদা’র সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কি অস্বীকার করা যায়?’’

Advertisement

জাতীয় স্তরে ইয়েচুরি এবং রাজ্য স্তরে বিমানবাবুরা চেষ্টা করছেন ১৯৭৩ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত দলীয় সদস্য, ১০ বারের সাংসদের স্মরণসভা করার। দলের সদস্য না থাকলেও সম্প্রতি অশোক মিত্রের স্মরণসভা হয়েছিল বামফ্রন্টের উদ্যোগে। তবে প্রশ্ন আছে, অশোকবাবু তো বহিষ্কৃত হননি। বহিষ্কৃত কোনও নেতার স্মরণসভা কি সিপিএম বা বামফ্রন্টে হয়? সিপিএম নেতৃত্বেরই একাংশ পাল্টা যুক্তি দিচ্ছেন, বহিষ্কৃত কোনও নেতাকে শ্রদ্ধা জানাতে কি দলের সাধারণ সম্পাদককে দেখা গিয়েছে স্মরণযোগ্য অতীতে? বহিষ্কৃত কোনও নেতার প্রতি শোক জানিয়ে কি রাজ্য কমিটির বৈঠক মুলতবি হয়েছে? তাঁদেরই বক্তব্য, বিবৃতির বয়ান নিয়ে বিতর্ক হলেও সোমনাথবাবু যে তাদেরই ‘লোক’, তা বোঝাতে শেষ দিনে অন্তত সিপিএম কার্পণ্য করেনি।

সোমনাথবাবুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রদেশ কংগ্রেসও সোমবার কলকাতায় মিছিল ও রাজভবনে যাওয়া স্থগিত রেখেছিল। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন অধীর চৌধুরী, আব্দুল মান্নান, প্রদীপ ভট্টাচার্যেরা। প্রদেশ সভাপতি অধীরবাবুর কথায়, ‘‘দেশের রাজনীতি ও সংসদীয় গণতন্ত্রে সোমনাথবাবু অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি সব সময় সোজা পথে থেকেছেন, রাজনীতির চোরাগলিতে ঢোকেননি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন