Mahishashura Mardini

বেতারে বীরেন ভদ্রের কণ্ঠ বাজবে মহালয়ার ভোরেই

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ-উৎকর্ষে আকাশবাণীর ওই প্রাচীন অনুষ্ঠানই হল পুজোর আবাহন।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:০৪
Share:

মহালয়ার সকালে তর্পণ। ফাইল চিত্র

মহালয়া থেকে দেবীর বোধনের মধ্যে এক মাস ছ’দিনের ব্যবধান! এমন পরিস্থিতি অভূতপূর্ব না হলেও শেষ কবে ঘটেছিল, ভেবে পাচ্ছেন না প্রবীণ পুরোহিতেরা। তাই এ যাত্রা কিছু অন্য রকম দাবিও শোনা যাচ্ছে। বৃহস্পতিবার মহালয়ার সকালে আকাশবাণীর ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র অনুষ্ঠান পুনঃসম্প্রচারের দাবিতেও সরব পুরোহিত সমাজের একাংশ।

Advertisement

বঙ্গীয় পুরোহিত সম্মিলনীর তরফেই যেমন বলা হচ্ছে, এ বছর স্রেফ মহালয়ার দিনে ওই অনুষ্ঠান হলে চিঁড়ে ভিজবে না। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠ-উৎকর্ষে আকাশবাণীর ওই প্রাচীন অনুষ্ঠানই হল পুজোর আবাহন। তাই পুরোহিতদের অনেকের দাবি, এ বছর আশ্বিনের মল মাস পেরোলে পুজোর প্রাক্কালে মহিষাসুরমর্দিনী-র অনুষ্ঠান আবার সম্প্রচার করা হোক। আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ অবশ্য তাতে রাজি নন।

আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রের প্রোগ্রাম হেড সুব্রত মজুমদার সোমবার বলেন, ‘‘দিল্লির সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে। মহালয়ার দিনেই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র ধ্রুপদী অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করা হবে। পুজো দেরিতে তো কী? এ বছরের পুজোর আগে আর তা দু’বার বাজবে না।’’ প্রবীণ পুরোহিত শম্ভুনাথ স্মৃতিতীর্থও বলছেন, ‘‘কিছু পরম্পরার সঙ্গে দিন-মাহাত্ম্য থাকে। সেই দিক থেকে মহালয়ার দিনেই অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার হওয়া উচিত। দু’বার বাজলে সেই আবেদন নষ্ট হয়।’’ কেন মল মাসের দরুণ পুজো পিছিয়েছে, তার ব্যাখ্যা দিয়ে পুরোহিতমশাই বলছেন, ‘‘এই মল মাস হল

Advertisement

ক্যালেন্ডারের ‘ব্যালান্স শিট’ বা হিসেবের ভারসাম্য। এটা স্বাভাবিক বলেই মানা উচিত।’’

শম্ভুনাথবাবুর মতে, প্রতি বছরই তিথির দিন-ক্ষণ কিছুটা এগিয়ে আসে। কিন্তু সমাজজীবনে পুজো-অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট সময় থাকে। তাই দুর্গাপুজো বা অনুষ্ঠানের তারিখ অস্বাভাবিক ভাবে ভাদ্র-আশ্বিনের সময়সীমা ছাপিয়ে এগিয়ে আসা রুখতে একটা মাসকে মল মাস ধরা হয়। তখন শুভ অনুষ্ঠান চলে না। তাঁর কথায়, ‘‘আড়াই-পৌনে তিন বছর অন্তর একটা করে মল মাস মেলে। আষাঢ়ে বা বৈশাখেও মল মাস পড়তে পারে। এ বার রথ বা জন্মাষ্টমীর দিনক্ষণ এগিয়ে এসেছিল। আষাঢ়ে মল মাস পড়লে পুজোর মতো রথও পিছোবে।’’

সুব্রতবাবু জানান, একেবারে গোড়ায় মহিষাসুরমর্দিনীর অনুষ্ঠান মহালয়ার বদলে ষষ্ঠীর ভোরে হত। এর পরে পিতৃপক্ষের শেষে মহালয়ার তর্পণের ভোরে শুরু হয় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রদের দেবী-আবাহন। তাঁর কথায়, ‘‘মহিষাসুরমর্দিনীর অনুষ্ঠান লোকমুখে ‘মহালয়া’ বলেই পরিচিত। একটা পুণ্য তিথি এবং এই বেতার অনুষ্ঠান সমার্থক। বার বার বাজিয়ে এর কৌলীন্য নষ্ট করা ঠিক নয়।’’ এ বার ১৯৬৬ সালের একটি রেকর্ডিং

বাজবে, বৃহস্পতিবার মহালয়ার ভোরে। গত তিন বছর ধরে ওই রেকর্ডিংই বাজছে।

শ্রোতাদের মনে অবশ্য গেঁথে আছে, বিভিন্ন বছরের রেকর্ডিংয়ের অংশ নিয়ে গ্রথিত ১৯৭২-এর রেকর্ডিং। অনুষ্ঠানটি নানা রদবদলে লাইভ সম্প্রচারের স্মৃতি উসকে ঘুরেফিরে বিভিন্ন রেকর্ডিং বাজান আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ। তবে পুরনো বেতারকর্তাদের মনে আছে, মহিষাসুরমর্দিনী-র গোড়ার পর্ব ছাড়া এক বারই সেটি ষষ্ঠীতে বাজানো হয়েছিল। সেটা ১৯৭০-এর দশকের মাঝামাঝি। উত্তমকুমার, বসন্ত চৌধুরীদের ভাষ্যে ‘দেবীং দুর্গতিহারিণীম’ মহালয়ার সকালে সম্প্রচারে বিতর্ক হয়। ফলে সে বার ষষ্ঠীতে ফিরিয়ে আনা হয় বীরেন ভদ্রদের অনুষ্ঠানটি। এ বার ষষ্ঠীতে উত্তমকুমারের ওই অনুষ্ঠান বাজবে বলে জানাচ্ছেন আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন