এ বছরের শেষেই বিষ্ণুপুর উৎসব

বিষ্ণুপুরকে এক সময় দেশের সঙ্গীত চর্চার রাজধানী বলা হতো। ঔরঙ্গজেবের আমলে দিল্লি থেকে বিষ্ণুপুরে এসেছিলেন উস্তাদ বাহাদুর খান। তাঁর হাত ধরেই রাগসঙ্গীতের বিস্তার মল্লভূমে। ইতিহাস বলে বাহাদুর খানের শিষ্য রামচন্দ্র বা রামশঙ্কর ভট্টাচার্যের হাত ধরে বিষ্ণুপুর ঘরানার শুরু।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ জুন ২০১৭ ০৪:২৯
Share:

ঐতিহ্য: বিষ্ণুপুরের টেরাকোটার মন্দির। ফাইল চিত্র।

দৃশ্য ১: ডিসেম্বরের শীতের সন্ধে। নাটমন্দিরে বসেছে বিষ্ণুপুর ঘরানার শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের আসর।

Advertisement

দৃশ্য ২: অনুষ্ঠান শেষে পর্যটকরা ফিরলেন হোটেলে। সেখানে রয়েছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পদের সঙ্গে বাঙালি খাবারও। বিশেষ করে রাঢ় বাংলার ঘরোয়া পদ। নৈশভোজের ফাঁকে শিল্পীদের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা।

এ ভাবেই দু’টো দিন গানবাজনা, খাওয়াদাওয়া আর বিষ্ণুপুরের ঐতিহাসিক স্থাপত্য কীর্তিগুলো ঘুরে দেখা। নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছাকে সামনে রেখে এ ভাবেই শুরু হতে চলেছে ‘বিষ্ণুপুর উৎসব’। খাজুরাহো ও কোনারক উৎসবের ধাঁচে চলতি বছর থেকেই নভেম্বর শেষ বা ডিসেম্বরের গোড়ায় উৎসবের আসর বসবে বিষ্ণুপুরে।

Advertisement

বিষ্ণুপুরকে এক সময় দেশের সঙ্গীত চর্চার রাজধানী বলা হতো। ঔরঙ্গজেবের আমলে দিল্লি থেকে বিষ্ণুপুরে এসেছিলেন উস্তাদ বাহাদুর খান। তাঁর হাত ধরেই রাগসঙ্গীতের বিস্তার মল্লভূমে। ইতিহাস বলে বাহাদুর খানের শিষ্য রামচন্দ্র বা রামশঙ্কর ভট্টাচার্যের হাত ধরে বিষ্ণুপুর ঘরানার শুরু। তার পর যদু ভট্ট, রাধিকাপ্রসাদ গোস্বামী প্রমুখ এই ঘরানাকে জনপ্রিয়তার শিখরে নিয়ে যান। এখনও সজীব এই সঙ্গীত-ঘরানাকে হাতিয়ার করে বিষ্ণুপুরের আকর্ষণ বাড়াতে চান মুখ্যমন্ত্রী।

বিষ্ণুপুরের টেরাকোটার মন্দির ভারত ছাপিয়ে বিদেশেও চর্চার বিষয়। সঙ্গীত আর মন্দির— এই জোড়া টানে দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক উৎসবে সামিল হবেন বলে নবান্ন আশাবাদী। সরকারি উদ্যোগে বিদেশি পর্যটকদের বিষ্ণুপুরে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। গোটা বিষয়টি কী ভাবে বাস্তবায়িত করা যায় তা নিয়ে একটি রূপরেখা তৈরির জন্য পর্যটন প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।

কিন্তু বিষ্ণুপুরে বিদেশি পর্যটক টেনে আনার মতো উপযুক্ত পরিকাঠামো কি আছে? বেসরকারি পর্যটন সংস্থাগুলির মতে, বিদেশি পর্যটকদের রাত্রিবাস করার মতো উপযুক্ত জায়গা বিষ্ণুপুরে নেই। নেই বিনোদনের ব্যবস্থাও। যে কারণে তারাও অনেক সময়ই বিদেশিদের বিষ্ণুপুরে নিয়ে যেতে পারে না।

এই উৎসব পরিকল্পনার সঙ্গে যাঁরা ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত তাঁদের একাংশের অবশ্য দাবি, ধাপে-ধাপে আরামদায়ক নতুন কিছু পরিকাঠামো গড়ে তোলা হবে। এ বছর বিদেশি পর্যটকদের আরামে যাতে কোনও খামতি না থাকে, তার জন্য উৎসব প্রাঙ্গণের কাছেই তিন-তারা মানের বেশ কয়েকটি তাঁবু খাটানো হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সেই সব তাঁবুতে পর্যটকরা সব রকম পরিষেবাই পাবেন। তৈরি করা হবে একটি অ্যামিনিটি সেন্টারও। অবসর সময়ে সেখানে বসে পর্যটকরা বিষ্ণুপুর সম্পর্কে পড়াশুনো, গান-বাজনা শোনা এমনকী আড্ডাও মারতে পারবেন। এ ছাড়া, বিষ্ণুপুর ট্যুরিস্ট লজটির সংস্কারের কাজেও হাত দেওয়া হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন