সিদ্ধার্থের ডানা ছাঁটল দল, বিজেপি পর্যবেক্ষক কৈলাস

নাটকীয় ভাবে পশ্চিমবঙ্গে দলের দায়িত্ব থেকে সিদ্ধার্থনাথ সিংহকে সরিয়ে দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। পরিবর্তে মধ্যপ্রদেশের নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির পর্যবেক্ষক করলেন তিনি। অর্থাৎ, ‘ভাগ মদন ভাগ’, ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ এবং ‘ভাগ মমতা ভাগ’ স্লোগান দিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে বিখ্যাত হয়েছিলেন যিনি, তাঁকেই কার্যত ‘ভাগ সিদ্ধার্থ ভাগ’ বলে দিলেন তাঁরই দলের নেতৃত্ব!

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৮
Share:

নাটকীয় ভাবে পশ্চিমবঙ্গে দলের দায়িত্ব থেকে সিদ্ধার্থনাথ সিংহকে সরিয়ে দিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। পরিবর্তে মধ্যপ্রদেশের নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়কে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির পর্যবেক্ষক করলেন তিনি। অর্থাৎ, ‘ভাগ মদন ভাগ’, ‘ভাগ মুকুল ভাগ’ এবং ‘ভাগ মমতা ভাগ’ স্লোগান দিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে বিখ্যাত হয়েছিলেন যিনি, তাঁকেই কার্যত ‘ভাগ সিদ্ধার্থ ভাগ’ বলে দিলেন তাঁরই দলের নেতৃত্ব!

Advertisement

সিদ্ধার্থকে অবশ্য পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির দায়িত্ব থেকে পুরোপুরি সরানো হয়নি। দলের এই কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাজ্য বিজেপির পর্যবেক্ষক থেকে সহকারী পর্যবেক্ষক হয়েছেন। ওড়িশার নেতা সুরেশ পূজারীকে ওই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধার্থ পেয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের পুরোদস্তুর পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব। যেখানে চার বছরের মধ্যে বড় নির্বাচন নেই।

এক সময় মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের সঙ্গে কৈলাসের ভাল সম্পর্ক ছিল। কিন্তু এখন তাঁদের সম্পর্কে চিড় ধরেছে। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার বাসনা হয়েছে কৈলাসের। ফলে শিবরাজ তাঁকে মধ্যপ্রদেশের বাইরে রাখতে চান। সে কারণেই কৈলাসকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে নিয়ে আসেন অমিতও। কিন্তু তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতার পরিচয় পেয়ে কৈলাসকে বেশ গুরুত্ব দিতে শুরু করেছেন অমিত।

Advertisement

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের যখন এক বছরও বাকি নেই, তখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি লাগাতার আক্রমণাত্মক সিদ্ধার্থের ডানা কেন ছাঁটা হল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিজেপিতে। দলের একাংশের প্রশ্ন, তা হলে কি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মমতা সম্পর্কে নরম মনোভাব নিয়ে চলতে চাইছেন? বিশেষত, সংসদের অধিবেশনের আগে যখন সুষমা-বসুন্ধরা বিতর্কে দল কোণঠাসা, সেই সময় গুরুত্বপূর্ণ বিলগুলি পাশের জন্য মমতাকে পাশে পেতেই কি এই সাংগঠনিক পরিবর্তন?

বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অবশ্য ব্যাখ্যা, মমতাকে বন্ধুত্বের বার্তা দিতে মোটেই এই বদল করা হয়নি। বরং, বাংলায় সংগঠন মজবুত করতেই কৈলাসের মতো দক্ষ সংগঠককে পাঠানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক অতীতে হরিয়ানায় বিজেপি যখন দুর্বল ছিল, তখন সেখানে শূন্য থেকে শুরু করে সাফল্য এনে দেখিয়েছেন দলের এই সাধারণ সম্পাদক। তাই পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটের অনুকূল হাওয়া স্তিমিত হয়ে যাওয়ার পর তাঁকে দিয়েই কৌশল বদলে এখানে দীর্ঘ মেয়াদি সাফল্যের রাস্তা তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বস্তুত, সিদ্ধার্থের বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিন ধরে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে যে অভিযোগ জমা পড়ছিল, তা মূলত সংগঠন তৈরিতে তাঁর অনীহা নিয়েই। সংগঠন তৈরির প্রয়োজন বুঝেই অমিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে বাংলায় পাঠিয়েছিলেন। তিনি দু’দিন ধরে বিজেপি নেতা-কর্মীদের ক্ষোভ শোনেন। কিছু জেলাতেও যান। ফিরে অমিতকে একটি রিপোর্ট পেশ করেন। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘নির্মলাকে যখন বাংলায় পাঠানো হয়েছিল, তখনই বোঝা গিয়েছিল, সিদ্ধার্থের কাজে বা কৌশলে অমিতের পুরোআস্থা নেই।’’

সিদ্ধার্থের অবশ্য দাবি, ‘‘আমার পদের অবনতি হয়েছে, বলা যাবে না। এক জন সাধারণ সম্পাদককে পাঠানোর অর্থ দল বাংলাকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। বাংলার মূল লোক এখনও আমিই থাকছি।’’ কৈলাসের বক্তব্য, ‘‘বাংলা অবশ্যই আমাদের কাছে একটা চ্যালেঞ্জ। সেখানে শহরাঞ্চলে দলের উপস্থিতি থাকলেও গ্রামে সংগঠন দুর্বল। অমিত শাহ এবং নরেন্দ্র মোদীর অনবদ্য নেতৃত্বে পরিশ্রম করে আমরা সেখানে পরিবর্তন আনব।’’ কিন্তু প্রশ্ন হল, বিধানসভা ভোটের আগে কেন্দ্র-রাজ্য সুসম্পর্কের বাতাবরণে তৃণমূলের প্রতি কতটা আক্রমণাত্মক হতে পারবেন কৈলাস? বাংলাকে চিনতেই বা কত দিন সময় নেবেন তিনি? দলের এক নেতার কথায়, ‘‘এর আগে যে নেতাদের পাঠানো হয়েছে, তাঁদেরই বা চিনতে কত দিন সময় লেগেছিল? কৈলাসের মতো অভিজ্ঞ ব্যক্তি বেশি সময় নেবেন না।’’ বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে কৈলাসের সম্পর্ক অনেক দিনের। আর বরুণ গাঁধী, সিদ্ধার্থনাথ সিংহ কিংবা কৈলাস বিজয়বর্গীয়— যিনিই এখানে আমাদের দলের পর্যবেক্ষক হয়েছেন, তিনিই বাংলার জামাই!’’

আগামী মঙ্গলবার কলকাতায় যাচ্ছেন অমিত। তাঁর সঙ্গেই যাচ্ছেন কৈলাস। অমিতের সফরের আগে প্রস্তুতি দেখতে কলকাতায় যাচ্ছেন সিদ্ধার্থ। রাজ্য বিজেপির একাংশের মতে, পশ্চিমবঙ্গে এসে মোদীর মমতা সম্পর্কে সমালোচনা না করা, বাবুল সুপ্রিয়র ঝালমুড়ি-কূটনীতি ইত্যাদির পর দলের তৃণমূল বিরোধিতা নিয়ে মানুষের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। কর্মীদের মনোবলে আঘাত লেগেছে। এই পরিস্থিতিতে হাওড়ার শরৎ সদনে দলীয় কর্মসূচিতে অমিত কী বলেন, তা নিয়ে বাড়তি কৌতূহলী কর্মীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন