প্রতীকী ছবি।
রথযাত্রার অনুমতি আদায় করতে বিজেপি এ বার নিজেই যাত্রার দিন কাটছাঁট করে ফেলল। সুপ্রিম কোর্টে জানাল, ৩৯ দিনের যাত্রার কর্মসূচি তারা ২০ দিনে কমিয়ে আনতে রাজি। কারণ, ৯ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গে বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে। লাউডস্পিকারের উপরে নিষেধাজ্ঞা থাকবে।
বিজেপি আজ এ কথা জানানোর পরে এ নিয়ে রাজ্য সরকারের বক্তব্য জানতে চেয়ে নোটিস জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট। একই সঙ্গে বিজেপিকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ, মঙ্গলবারের মধ্যেই রাজ্য সরকারের কাছে রথযাত্রার নতুন কর্মসূচি জমা দিতে হবে তাদের। যাতে তা খতিয়ে দেখেই রাজ্য সরকার তার অবস্থান জানাতে পারে। এই মামলার পরের শুনানি হবে আগামী মঙ্গলবার।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বিজেপির রথযাত্রায় বাধা দিচ্ছে বলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও সরব হয়েছিল। আজ তাই শুনানি শেষ হতেই তার পরিণতি কী হল জানতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, ভূপেন্দ্র যাদবের মতো নেতারা খোঁজ নেন। শুনানির পরেই বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার সুপ্রিম কোর্ট থেকেই কলকাতায় দলীয় নেতাদের ফোন করে নবান্নে নতুন কর্মসূচি পাঠানোর তোড়জোড় শুরু করে দেন।
বিজেপির হয়ে আইনজীবী মুকুল রোহতগি ও কবীরশঙ্কর বসু আর্জি জানান, আগামী মঙ্গলবারই যেন সুপ্রিম কোর্ট চূড়ান্ত ফয়সালা করে। না হলে, তার পরে অনুমতি মিললেও বিজেপির হাতে যাত্রার জন্য বিশেষ সময় থাকবে না। বিজেপির রাজনৈতিক কর্মসূচি আটকানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ‘শত্রুতাপরায়ণ’ বলেও আখ্যা দেন রোহতগি।
বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও রাজ্য সরকার ও বিজেপি নেতাদের কাছে জানতে চান, ‘‘আপনারা নিজেরা বসে কেন আলোচনা করছেন না?’’ রাজ্যের আইনজীবী অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি যুক্তি দেন, ৩১টি গোয়েন্দা রিপোর্ট মুখবন্ধ খামে কলকাতা হাইকোর্টে জমা করা হয়েছিল। তা না দেখেই এক বিচারপতির বেঞ্চ যাত্রার অনুমতি দেয়। তাই ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশ জারি করে এক বিচারপতির বেঞ্চেই মামলা পাঠিয়েছে। সেখানেই গোয়েন্দা রিপোর্ট খতিয়ে দেখে এর ফয়সালা হোক। কারণ বিজেপির রথযাত্রার দু’টি ভাগ রয়েছে। এক, ১৪টি জনসভা। তার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দুই, ৩৯ দিনের তিনটি রথের যাত্রা। তা নিয়ে ৩১টি গোয়েন্দা রিপোর্ট রয়েছে।
রোহতগি ওই সব গোয়েন্দা রিপোর্টকে ‘বোগাস’ বলে উড়িয়ে দেন। রাজ্যের আর এক আইনজীবী আনন্দ গ্রোভার পাল্টা দাবি তোলেন, বিজেপি যদি নতুন কর্মসূচিতে রথযাত্রা করতে চায়, তা হলে নতুন করে গোয়েন্দা রিপোর্টও চাওয়া হোক। বিজেপির জয়প্রকাশ মজুমদার, মুকুল রায়দের সঙ্গে রাজ্যের গোয়েন্দা দফতর, সিআইডি কর্তারাও সুপ্রিম কোর্টে হাজির ছিলেন।
এ দিন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে মামলাটির শুনানির কথা থাকলেও, প্রধান বিচারপতি অনুপস্থিত ছিলেন। তাই শুনানি হয় বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও ও বিচারপতি সঞ্জয় কিষেণ কউলের বেঞ্চে। শুনানির পরিণতি জানতে বিজেপির মুকুল রায়, জয়প্রকাশের পাশাপাশি রাজ্যের গোয়েন্দা ও সিআইডি কর্তারাও সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয়েছিলেন।
বিজেপি নেতাদের মতে, সুপ্রিম কোর্ট যদি মঙ্গলবার অর্থাৎ ১৫ তারিখে রথযাত্রার ছাড়পত্র দিতে রাজ্যকে নির্দেশ দেয়, তার সরকারি নির্দেশ পেতে আরও দু’-তিন দিন সময় লাগবে। ১৯ বা ২০ জানুয়ারির আগে রথযাত্রা শুরু করা মুশকিল হবে। ফলে ৩৯ দিনের প্রস্তাবিত রথযাত্রা কার্যত নমো নমো করেই সেরে ফেলতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা জানান, দিন কমলেও ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রেই ছুঁয়ে যাবে যাত্রা। প্রয়োজনে তিনটির বদলে চারটি বা পাঁচটি রথ রাস্তায় নামবে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য কলকাতায় বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টে পরবর্তী শুনানি আছে। আমাদের বিশ্বাস, ওই দিন হয়তো আদালতের রায় আসবে আমাদের যাত্রা করার জন্য। সে ক্ষেত্রে ১৬ বা ১৭ তারিখের মধ্যে আমরা যাত্রা শুরু করে দেব। ২০ দিনের মধ্যে চারটি যাত্রা করার পরিকল্পনা হয়েছে।’’ প্রাথমিক ভাবে বিজেপি কোচবিহার, তারাপীঠ ও গঙ্গাসাগর থেকে তিনটি যাত্রার পরিকল্পনা করেছিল। এখন চতুর্থ যাত্রাটি হলদিয়া থেকে শুরু করার পরিকল্পনা করেছে তারা। সেই পরিকল্পনা এ দিন নবান্নে জানিয়েও এসেছেন বিজেপির দুই প্রতিনিধি।