গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে দিঘায় জগন্নাথ মন্দির উদ্বোধনে সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষের সফর নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে বিজেপিতে। দলের প্রথম সারির নেতা, মুখপাত্র থেকে বুথ স্তরের কর্মীদের কেউ সমাজমাধ্যমে, কেউ সংবাদমাধ্যমে প্রাক্তন রাজ্য সভাপতির কঠোর নিন্দা এবং সমালোচনায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তবে এই প্রশ্নে দল যে দিলীপের পাশেই আছে, তা শনিবার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। শনিবার রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, প্রকাশ্যে দিলীপকে বেলাগাম আক্রমণ এবং যেখানে খুশি দিলীপের বিরুদ্ধে মুখ খোলাকে দল ‘অনুমোদন’ করছে না। বস্তুত, এই বিষয়ে দল ব্যবস্থা নিতে পারে বলেও জানিয়ে রেখেছেন শমীক।
সাধারণ ভাবে কোনও দলের মুখপাত্রেরা যা বলেন, আনুষ্ঠানিক ভাবে সেটাকেই ‘দলের কথা’ হিসাবে ধরা হয়। সেই অনুযায়ী দিলীপের সমালোচকদের উদ্দেশে শমীক যে বার্তা দিয়েছেন, তা সামগ্রিক ভাবে রাজ্য বিজেপির ‘অভিমত’ বলেই মনে করা হচ্ছে।
সমাজমাধ্যমে যে ভাবে দিলীপের বিরুদ্ধে লেখালিখি শুরু করেছে বিজেপির একটি অংশ, তাদের ‘সতর্ক’ করতে চেয়েছেন শমীক। রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ বলেন, ‘‘যে যাঁর মনের মতো লিখতে পারেন না। যে যাঁর মনের মতো যখন লিখছেন, তখন দলের যেটা করার দল করবে।’’ গোটা ঘটনাক্রমকেই ‘অনভিপ্রেত’ বলে আখ্যা দিয়েছেন শমীক। তাঁর কথায়, ‘‘যেটা হয়েছে, সেটা অনভিপ্রেত। আমাদের মতো দলে এটা কাঙ্ক্ষিত নয়। যা হয়েছে পুরো এপিসোডটাই অনাকাঙ্ক্ষিত। যেতে পারি কিন্তু কেন যাব, এটা নিয়ে বিজেপি চিন্তিত নয়। সমাজমাধ্যমে অধিকাংশ পোস্ট যাঁরা করছেন, তাঁদের অধিকাংশই বিজেপির সক্রিয় কেউ নন। তার পরেও স্বীকার করে নিচ্ছি, যা হয়েছে, সেটা কাঙ্ক্ষিত নয়। পার্টিতে যাঁদের এটা দেখার কথা, তাঁরা বিষয়টি দেখছেন। যা করার তাঁরা করবেন।’’
দিলীপ দিঘা পৌঁছোনোর খানিক ক্ষণের মধ্যেই রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র তরুণজ্যোতি তিওয়ারি ফেসবুকে পোস্ট করে সমালোচনা করেছিলেন। অনতিবিলম্বে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার জানিয়েছিলেন, দিঘায় যাওয়া, মমতার পাশে বসাকে দল অনুমোদন করছে না। তার পরে বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ, ব্যারাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ অর্জুন সিংহ, মুখপাত্র কেয়া ঘোষেরাও দিলীপকে কড়া আক্রমণ করেছেন। নাম না-করলেও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী দিলীপকে কটাক্ষ করেছেন। যাঁরা তাঁকে আক্রমণ করেছেন, তাঁদের পাল্টা ফিরিয়ে দিয়েছেন দিলীপও। মন্দির উদ্বোধনের পরের দিন সকালে দিঘার বালুকাবেলায় হাঁটতে বেরিয়ে দিলীপ বলেন, ‘‘যাঁরা মমতার আঁচলের তলায় থেকে বড় হয়েছেন, তাঁদের কাছ থেকে বিজেপি শিখব না।’’ রাজনৈতিক মহলের অনেকেরই বক্তব্য, নাম না-করলেও দিলীপের ওই মন্তব্যের লক্ষ্য ছিলেন শুভেন্দুই।
দিলীপের কাজকর্ম এবং মন্তব্য নিয়ে শমীককে প্রশ্ন করায় তিনি বলেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি। তিনি বিধায়ক ছিলেন, সাংসদ ছিলেন। পরিসংখ্যানের হিসাবে তিনি রাজ্য বিজেপির সফলতম সভাপতি। দিলীপ ঘোষ কী করবেন, কী বলবেন, তা দিলীপ ঘোষের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। তাঁর বিষয়ে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী যাঁদের চিন্তাভাবনা করার তাঁরাই করবেন। আমার এর থেকে বেশি বলার এক্তিয়ার নেই। তবে পুরো বিষয়ের উপর দল নজর রাখছে।’’
দিলীপকে নিয়ে বিজেপির অন্দরের সাম্প্রতিক কলহ দেখে যখন শাসকদল তৃণমূল মুচকি হাসছে, তখন তাদের উদ্দেশেও বার্তা দিতে চেয়েছেন শমীক। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা কয়েকটা ফেসবুক পোস্ট দেখে আর জয় জগন্নাথ দেখে উদ্বাহু নৃত্য করছেন এই ভেবে যে, বিজেপি অন্তর্কলহে দীর্ণ, তাঁরা ভুল করছেন। কিন্তু যেটা হচ্ছে সেটা নিন্দনীয়। প্রত্যেকের সতর্ক থাকা উচিত, তিনি যত বড় নেতাই হোন।’’