উত্তেজনা: শাসক দলের বিধায়ক অখিল গিরির (মাঝখানে সাদা পাঞ্জাবিতে) সঙ্গে ধস্তাধস্তি পুলিশের। শুক্রবার রামনগর-১ বিডিও অফিসের সামনে। নিজস্ব চিত্র।
পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনে নির্ণায়ক বিজেপি! কোথাও তৃণমূলকে ভরসা জোগাল গেরুয়া শিবির, কোথাও আবার বাম ও তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নির্দলের ভরসায় বোর্ড গড়ল বিজেপি-ই। শুক্রবার পূর্ব মেদিনীপুরে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের প্রথম দিনে এমনই ছবি সামনে এসেছে রামনগরে। রামনগর-১ ব্লকের পালধুই-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপির সমর্থনে ভোটাভুটিতে ১০-৭ ব্যবধানে জিতে তৃণমূলের প্রধান ও উপপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। আর তালগাছাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতে ৭-৬ ব্যবধানে বোর্ড গড়েছে বিজেপি-বাম-নির্দলের সম্মিলিত শক্তি।
বিজেপির সমর্থনে বোর্ড গড়ার কথা অবশ্য সরাসরি মানছে না তৃণমূল। দলের রামনগর-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি নিতাইচরণ সারের দাবি, ‘‘বিজেপি ও নির্দল থেকে চারজন আমাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। তাই বোর্ড গঠন করেছি আমরা।’’ আর পালধুই নিয়ে ব্লক তৃণমূল সভাপতির বক্তব্য, ‘‘ওখানে বিরোধীরা শক্তিশালী ছিল। তাই ওরা বোর্ড গড়েছে।’’
তালগাছাড়িতে বোর্ড গড়া নিয়ে বিজেপির স্থানীয় নেতা রমাকান্ত প্রধানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা গণতন্ত্রের জয়। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমরা ‘মডেল’ পঞ্চায়েত গড়ব।’’ আর পালধুইতে কী ঘটেছে, তা বিস্তারিত খোঁজ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তপনকুমার মাইতি।
তালগাছাড়ি ও পালধুই দু’জায়গাতেই বোর্ড গঠন ঘিরে এ দিন ধুন্ধুমার বাধে। সকাল থেকে রামনগর-১ ব্লক অফিস সংলগ্ন তালগাছাড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েত কার্যালয়ে ভিড় করেছিলেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। পরে বিজেপি, বাম ও নির্দল সদস্যেরা পঞ্চায়েত কার্যালয়ে ঢুকতে বাধা পান বলে অভিযোগ। পুলিশ, র্যাফ এলে তাদের সামনেই এলাকার তৃণমূল বিধায়ক অখিল গিরির নেতৃত্বে তৃণমূল কর্মীরা বিজেপি কর্মীদের তাড়া করে এবং স্থানীয় বিজেপি নেতা নিত্যগোপাল দাস-সহ দলের একাধিক কর্মীকে বাঁশ–লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। আহত নিত্যগোপালকে প্রথমে বালিসাই বড় রাঙ্কুয়া হাসপাতাল, পরে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা বিধায়ক অখিলবাবুর অবশ্য দাবি, ‘‘যাতে নির্বিঘ্নে বোর্ড গঠন হয়, সে জন্যই এলাকায় গিয়েছিলাম। হামলার কথা ঠিক নয়। বরং আমাদের কর্মীদের লক্ষ করেই লঙ্কার গুঁড়ো ছোড়া হয়েছে। পুলিশও অসহযোগিতা করেছে।’’
১৩ আসনের ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল জিতেছে ৬টিতে। বাকি ৭টি আসনের ৪টিতে বিজেপি, একটিতে সিপিএম ও দু’টি আসনে নির্দল প্রার্থী জিতেছেন। বিরোধীরাই শেষমেশ এখানে বোর্ড গড়েছেন। নির্দল সদস্য দীপ্তি পুষ্টি প্রধান এবং সিপিএমের রাজকুমার দাস উপপ্রধান হয়েছেন।
ত্রিশঙ্কু পালধুই-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড দখল ঘিরেও উত্তেজনা ছিল। ১৭টি আসনের এই পঞ্চায়েতে তৃণমূল ৭টি, বিজেপি ৫টি, নির্দল ৪টি ও একটি আসনে সিপিএম জিতেছিল। এ দিন বোর্ড গঠনে প্রধান ও উপপ্রধান পদে তৃণমূলের প্রার্থীকে সমর্থন করেছে বিজেপি-নির্দল।