ভোটে অশান্তি রুখতে কমিশনের দ্বারস্থ বিজেপি

রাজ্যের দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রের আসন্ন উপনির্বাচনে তৃণমূল যাতে অশান্তি বাধাতে না-পারে, তার জন্য দলের সর্বভারতীয় নেতাদের এনে নির্বাচন কমিশনের উপরে চাপ সৃষ্টির রাস্তা নিল বিজেপি। চৌরঙ্গি ও বসিরহাট (দক্ষিণ) কেন্দ্রে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবি নিয়ে সোমবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুখতার আব্বাস নকভি। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতারা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:৩৯
Share:

রাজ্যের দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রের আসন্ন উপনির্বাচনে তৃণমূল যাতে অশান্তি বাধাতে না-পারে, তার জন্য দলের সর্বভারতীয় নেতাদের এনে নির্বাচন কমিশনের উপরে চাপ সৃষ্টির রাস্তা নিল বিজেপি। চৌরঙ্গি ও বসিরহাট (দক্ষিণ) কেন্দ্রে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবি নিয়ে সোমবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি মুখতার আব্বাস নকভি। সঙ্গে ছিলেন বিজেপির রাজ্য নেতারা।

Advertisement

আর এ দিনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক চিঠি দিয়ে রাজ্য সরকারকে জানিয়ে দিয়েছে, উপনির্বাচনে তারা ৩৮ কোম্পানি আধা-সামরিক বাহিনী পাঠাচ্ছে। তার মধ্যে বসিরহাটে যাবে ২৩ কোম্পানি আর চৌরঙ্গিতে থাকবে ১৫। কাল, বুধবারেই অধিকাংশ জওয়ানের কলকাতায় পৌঁছে যাওয়ার কথা। নবান্নে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই চিঠি পৌঁছনোর পরে এ দিন রাজ্য পুলিশের ডিজি এবং আইজি (আইনশৃঙ্খলা)-সহ পুলিশকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। কমিশনের নির্দেশ মেনে কী ভাবে ওই বাহিনীকে ব্যবহার করা হবে, তা নিয়ে সবিস্তার আলোচনা হয় বৈঠকে।

বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ রবিবারেই চৌরঙ্গি কেন্দ্রে প্রচারসভা করে গিয়েছেন। তার পরের দিনই উপনির্বাচন উপলক্ষে দলের সহ-সভাপতি উড়ে এলেন রাজ্যে। নকভির অভিযোগ, চার মাস আগে লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে ব্যাপক রিগিং ও বুথ দখল হয়েছিল। সেই জন্যই উপনির্বাচন নিয়ে তাঁরা অত্যন্ত সজাগ। বিজেপি মনে করছে, এই মুহূর্তে অপরাধীরাই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করছে এবং দুই কেন্দ্রের উপনির্বাচনে অবাধ ভোটে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে তারাই।

Advertisement

এই নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না তৃণমূল। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরে নকভিদের দরবারের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শনিবার আস্তিন গুটিয়ে দিল্লি থেকে সভাপতি চলে এলেন। তার পরে বললেন, তাড়াতাড়ি নির্বাচন কমিশনে যাও। উর্দি পরা লোক দরকার, নইলে জিততে পারব না!”

শাসক দল যা-ই বলুক, বিজেপি নিজেদের বক্তব্য থেকে এক চুলও সরতে রাজি নয়। রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার সুনীল গুপ্তের কাছে নকভিদের দাবি, প্রতিটি বুথের ২০০ মিটার পরিধির মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। ভোটের তিন দিন আগে থেকে রুট মার্চ করাতে হবে। এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের দায়িত্ব দিতে হবে কমিশনের পর্যবেক্ষকদের হাতে। বিজেপির অভিযোগ, লোকসভা ভোটে এ রাজ্যে পর্যাপ্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী এলেও তাদের ঠিকমতো ব্যবহারই করা হয়নি। ভোটের দিন কার্যত তাদের বসিয়ে রাখা হয়েছিল। বিভিন্ন এলাকায় জওয়ানদের রুট মার্চ কিংবা খানাতল্লাশিতে নামাননি জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা।

লোকসভা ভোটের সময় উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশলকে পক্ষপাতের অভিযোগে সরিয়ে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ভোট মিটে যেতেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে স্বপদে ফিরিয়ে আনেন। পক্ষপাতের অভিযোগ তুলেই উপনির্বাচনের আগে আবার তাঁকে অপসারণের দাবি জানিয়েছে বিজেপি।

সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক গৌতম দেবও এ দিন অভিযোগ করেছেন, বসিরহাট দক্ষিণে ভোট লুঠের জন্য তৃণমূল বাইরে থেকে দুষ্কৃতী জড়ো করছে। তাঁর বক্তব্য, “স্থল ও জলপথে বসিরহাটে ঢোকার ১০টি পয়েন্ট চিহ্নিত করেছি আমরা। ওখানে তৃণমূলের তিন হাজার ছেলে ঢুকলে আমাদের চার হাজার ঢুকবে। তাদের সঙ্গে যদি গুঁতোগুঁতি করতে হয়, সেই জন্য আমাদের অন্য প্রস্তুতি থাকবে।”

তৃণমূলের একটা ‘নতুন রোগ’-এর কথা বলছেন গৌতমবাবু। তিনি এ দিন বলেন, “ওদের নতুন রোগ হয়েছে। কোনও নির্বাচনেই ওরা হারবে না। তা সে স্কুলই হোক বা লোকসভা। আর যদি হারে, তা হলে পরে খুনজখম করে দখল করতেই হবে!” তাঁর অনুযোগ, মমতা ছাড়া গোটা তৃণমূল দলটাই বসিরহাটে তাঁবু গেড়েছে। বিধানসভা ভোটে বামফ্রন্টের ভরাডুবিতেও সেখানে ফ্রন্টের বিধায়ক ছিলেন। কাজেই ওখানে একটা আসন যদি মমতা হারেন, সমস্যা কোথায়? তা হলে কেন এই বেপরোয়া প্রচেষ্টা প্রশ্ন তুলছেন ওই সিপিএম নেতা। তাঁর কথায়, “আসলে বসিরহাট শুধু একটি আসন নয়। পাটীগণিতের সংখ্যা মাত্র নয়। এটা আসলে একটা রসায়ন।”

গৌতমবাবুর ব্যাখ্যা, সারদা কেলেঙ্কারি একটি গুজব এবং মানুষ তা বিশ্বাস করেন না এবং বিজেপি এ রাজ্যে কোনও শক্তিই নয় এই দু’টো বার্তা দিতেই বসিরহাট দক্ষিণ দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছে তৃণমূল।

উপনির্বাচনে অশান্তির আশঙ্কায় সরব কংগ্রেসও। ওই দলের নেতা মানস ভুঁইয়ার কথায়, “রাজ্যের পরিস্থিতি এমনিতেই খারাপ। দুই কেন্দ্রে সমাজবিরোধীরা এখন থেকেই ধেই ধেই করে নাচছে।” তিনি জানান, চৌরঙ্গি ও বসিরহাট দক্ষিণের দুই দায়িত্বপ্রাপ্ত বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী ও আবু তাহের খানকে কমিশনের সিইও-র সঙ্গে দেখা করে শান্তিপূর্ণ ভোটের দাবি জানাতে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন