কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে কী ভাবে তিনটি বিধানসভা আসন থেকে ৭৭টিতে এবং দু’টি লোকসভা আসন থেকে ১৮টিতে উঠে এসেছিল বিজেপি, মঙ্গলবার তা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন অমিত শাহ। বছর দেড়েক আগের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আসনসংখ্যা কমলেও ২০২১ সালের চেয়ে ভোট যে ১ শতাংশ বেড়েছিল, তা-ও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু বুধবার দলের অভ্যন্তরীণ কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের মনে করিয়ে দিলেন ঠিক তার বিপরীত কথা! কলকাতা এবং সংলগ্ন শহরতলিতে কোনও বিধানসভা আসনই যে বিজেপির হাতে নেই, সে কথা মনে করিয়ে লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছেন শাহ। বছরের শেষদিনে মহানগরের বিজেপি কর্মীদের উপরে কার্যত চাপ বাড়িয়ে দিয়ে দিল্লি ফিরে গেলেন তিনি।
সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে বুধবার দুপুরে কলকাতা ‘মহানগর কর্মী সম্মেলন’-এর আয়োজন করেছিল বিজেপি। উত্তর কলকাতা, দক্ষিণ কলকাতা, দমদম এবং যাদবপুর সাংগঠনিক জেলার বিজেপি কর্মীরা সেখানে ডাক পেয়েছিলেন। শক্তিকেন্দ্র (পাঁচ-সাতটি বুথ) এবং তদূর্ধ্ব স্তরের পদাধিকারীদের ডাকা হয়েছিল। তাই মণ্ডল এবং জেলা স্তরের নেতা-কর্মীরা সম্মেলনে হাজির ছিলেন। শাহ ছিলেন মূল বক্তা। শুরুতে সমাজমাধ্যমে বিজেপির ওই কর্মী সম্মেলনে নেতাদের ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছিল। শাহ প্রেক্ষাগৃহে পৌঁছোনোর কিছুক্ষণের মধ্যেই তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। অনেকের বক্তব্য, মহানগরের বিজেপি নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে শাহ যে বার্তা দেবেন, তা সরাসরি সকলে জেনে যান, বিজেপি নেতৃত্ব সম্ভবত তা চাননি। তাই সরাসরি সম্প্রচার বন্ধ করা হয়। কিন্তু বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, নিজের ভাষণে আসন সংক্রান্ত লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন শাহ।
চারটি সাংগঠনিক জেলায় (চারটি লোকসভা কেন্দ্র) মোট ২৮টি বিধানসভা আসন রয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, এই আসনগুলির মধ্যে ২০টিতে জয়ের লক্ষ্য নিয়ে বিজেপি-কে ঝাঁপাতে হবে বলে শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন। ২০২১ সালে তো নয়ই, কলকাতা এবং শহরতলির এই আসনগুলিতে তার আগের কোনও বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপি জেতেনি। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের জোড়াসাঁকো এবং শ্যামপুকুর বিধানসভায় তৃণমূলের চেয়ে বিজেপি এগিয়ে ছিল। কিন্তু দক্ষিণ কলকাতা, দমদম এবং যাদবপুরের প্রত্যেকটি বিধানসভা আসনেই বিজেপি পিছিয়ে ছিল। অর্থাৎ, সর্বশেষ নির্বাচনেও এই এলাকার ফলাফল তৃণমূল-২৬, বিজেপি-২। শাহ বুধবার সেই দুই বাড়িয়ে ২০ করার লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন।
তারই প্রেক্ষিতে কলকাতার বিজেপি নেতাদের একাংশের দাবি, ২০২৪ সালের নির্বাচনে কলকাতা ও শহরতলির আসনগুলির মধ্যে বিজেপি মাত্র দু’টিতে এগিয়ে থাকতে পেরেছিল বলে ওই অঞ্চলে বিজেপির শুধু ওই দু’টি আসনেই জেতার ক্ষমতা রয়েছে ভাবলে ভুল হবে। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, উত্তর কলকাতার মানিকতলা বা দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর এবং রাসবিহারী আসনে বিজেপি এর আগে লোকসভা নির্বাচনে এগিয়ে থেকেছে। যাদবপুর লোকসভার সোনারপুর দক্ষিণ বা দমদম লোকসভার রাজারহাট-গোপালপুরেও যে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির এগিয়ে থাকার রেকর্ড রয়েছে, তা-ও মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিজেপির তরফে। মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে অতীতে দমদম লোকসভা আসনে বিজেপি প্রার্থী হিসাবে তপন শিকদারের দু’বার জয়ের কথাও। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে ওই এলাকার যে আসনগুলিতে বিজেপি কোনও না কোনও নির্বাচনে এগিয়ে থাকতে পেরেছে, সেগুলির প্রতিটিতে বিজেপি জিতলেও সংখ্যাটা সাতের বেশি হচ্ছে না। শাহ সেখানে ২০টি আসনের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন!
সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামের কর্মী সম্মেলন শেষ করে শাহ গিয়েছিলেন ঠনঠনিয়া কালীবাড়িতে পুজো দিতে। শাহের সেই যাত্রাপথে কংগ্রেস বিক্ষোভ দেখায়। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকার-সহ সুমন রায়চৌধুরী, আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়দের মতো কংগ্রেস পদাধিকারীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে কলেজ স্ট্রিট এবং সূর্য সেন স্ট্রিটের মোড়ে লোহার ব্যারিকেড করে পুলিশ কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের আটকে দিয়েছিল। ফলে শাহের কনভয়ের সামনে তাঁরা যেতে পারেননি। ব্যারিকেডের ভিতর থেকেই প্ল্যাকার্ড দেখিয়ে এবং স্লোগান তুলে তাঁরা বিক্ষোভ করেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, সেই প্ল্যাকার্ডে বিজেপি-র ‘বাংলা এবং বাঙালি বিরোধিতা’র কথা লেখা ছিল। যা আদতে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের লাইন।
ঠনঠনিয়ায় পুজো দেওয়াই ছিল এই সফরে শাহের শেষ কর্মসূচি। সেখান থেকে তিনি কলকাতা বিমানবন্দরে চলে যান।