State News

বিজেপির অশালীন মন্তব্যে নয়া মুখ সাংসদ সৌমিত্র

বিজেপিতে কুকথার স্রোত ক্রমে বাড়ছে। বুধবার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন সৌমিত্র খাঁ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:৪৪
Share:

—ফাইল চিত্র।

কুকথা থেকে পিছিয়ে আসা তো দূরের কথা, বিজেপিতে কুকথার স্রোত ক্রমে বাড়ছে। বুধবার সেই তালিকায় নতুন সংযোজন সৌমিত্র খাঁ। পাশাপাশি, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এ দিনও সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসকারীদের গুলি করার নিদানে অনড়। বরং, এ বিষয়ে তৃণমূল, সিপিএমের মতো যে সব দল তাঁর সমালোচনা করেছে, তাদের বিরুদ্ধেও হত্যার অভিযোগ এনেছেন তিনি। একই সঙ্গে সমালোচকদের ‘নির্বোধ’ এবং ‘নিমকহারাম’ বলেও এ দিন কটাক্ষ করেছেন দিলীপ।

Advertisement

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা দেশে ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় ছড়িয়ে পড়েছে ‘হম কাগজ় নেহি দিখায়েঙ্গে’ শীর্ষক একাধিক ভিডিয়ো এবং ‘মিম’। ‘কাগজ আমরা দেখাব না’—এই বক্তব্য নিয়ে সিএএ-র প্রতিবাদে ভিডিয়োয় সরব হয়েছেন একাধিক বাঙালি শিল্পীও। সেই প্রতিবাদীদের মধ্যে সব্যসাচী চক্রবর্তী, স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, রূপম ইসলাম এবং ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়কে ফেসবুকে ‘অশালীন’ ভাষায় আক্রমণ করার অভিযোগ উঠেছে বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্রর বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে পোস্ট করা ওই ভিডিয়োটিতে দেখা যাচ্ছে, সৌমিত্র বলছেন, ‘‘আপনারা লাজলজ্জাহীনের মতো কথা বলছেন। আপনারা ধান্দাবাজ। কোনও প্রোজেক্টের জন্য দৌড়ে যান। বাংলার কয়েক জন শিল্পী আর কলকাতার যাঁরা নিজেদের বুদ্ধিজীবী মনে করছেন, তাঁরা নিজেরা চর্ব্যচূষ্য খাচ্ছেন আর বলছেন, তাঁরা গোটা বাংলার মানুষের কথা বলছেন। আসলে তাঁরা বাংলার মানুষের কথা জানেন না। নোট বাতিল, আধার কার্ড করাতে গ্রামীণ মানুষের সমস্যা হয়নি।’’ আরও কিছু ছাপার অযোগ্য মন্তব্যও ওই ভিডিয়োতে করতে দেখা গিয়েছে সৌমিত্রকে।

Advertisement

আরও পড়ুন: এনপিআর-এ জানাতে হবে মাতৃভাষা, আপত্তি তৃণমূলের

এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা শুরু হওয়ার পর এ দিন সৌমিত্র দাবি করেন, ‘‘তাঁরা মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। তাঁরা ভণ্ড। তাই প্রতিবাদ জানিয়েছি। আমি যে শব্দ ব্যবহার করেছি, তার অন্য মানে করা হচ্ছে।’’ এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে ধৃতিমানবাবু ও স্বস্তিকা বলেন, ‘‘কোনও মন্তব্য করব না।’’ সব্যসাচী ও রূপমকে ফোন করে এবং মেসেজ পাঠিয়ে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

সব্যসাচীদের ভিডিয়ো প্রসঙ্গে দিলীপবাবুরও কটাক্ষ, ‘‘তথাকথিত কমিউনিস্টরা প্রতিবাদ করছেন। অনেকের অবশ্য সত্যিই কাগজ নেই। বিদেশে গিয়ে সোনা চুরি করে ধরা পড়েছেন। কাগজ দেখাতে পারেননি। পরিচয়পত্র না থাকলে এয়ারপোর্টে ঢুকতে দেবে? ট্রেনে উঠলে পরিচয়পত্র না দেখালে গলা ধাক্কা দিয়ে নামিয়ে দেবে। এই নির্বোধগুলি জানেই না, যেখানে যাবেন, সেখানেই আপনাকে... রেশন কার্ড ছাড়া রেশন দেবে আপনাকে? সিনেমার টিকিট কি পিছনের দরজা দিয়ে কাটতেন? নাকি বিনা টিকিটের যাত্রী ছিলেন? এত নেমকহারাম এরা! যত এরা এ সব প্রচার করছে, মানুষ এদের শুইয়ে দিচ্ছে।’’

সরকারি সম্পত্তি ধ্বংসকারীদের গুলি করার কথা তিনি ভেবেচিন্তেই বলেছিলেন বলেও দিলীপবাবু এ দিন ফের জানান। তাঁর পাল্টা আক্রমণ, ‘‘এই রাজ্যে সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় নকশাল আমলে বহু লোককে খুন করেছেন। তাঁর যাঁরা চামচা, বেলচা ছিলেন, এখন বড় বড় নেতা হয়েছেন, তাঁরা এখন আমায় জ্ঞান দিচ্ছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় পাহাড়ে গিয়ে গোর্খাদের চমকেছিলেন। যাঁরা বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন, তাঁদের পুলিশ গুলি করেছিল। ১১ জন মারা গিয়েছিলেন। কমিউনিস্টরা গুলি করে ছ’জন ফরওয়ার্ড ব্লকের লোককে মেরেছিল। মরিচঝাঁপিতে অসহায় উদ্বাস্তু শরণার্থীদের হত্যা করেছিল। তারা আমাকে এখন জ্ঞান দিচ্ছে। কত বড় বেহায়া হলে এমন করতে পারে!’’

তাঁর মন্তব্য কি কখনও কখনও শালীনতার সীমা ছাড়াচ্ছে? দিলীপবাবুর জবাব, ‘‘চোরকে চোর বললে, চরিত্রহীনকে চরিত্রহীন বললে যদি শালীনতার সীমা ছাড়ায়, দিলীপ ঘোষ ওটা বলবে। আর বনে থাকতে হলে বনমানুষ হতে হয়।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘আমার দম আছে। আমার হারাবার কিছু নেই, পাওয়ারও কিছু নেই। যারা অন্যের ধন চুরি করে জীবিকা নির্বাহ করে, যারা পরজীবীর মতো রাজনীতিতে বেঁচে আছে, যে বুদ্ধিজীবীরা পরজীবীর মতো অন্যের ঘাড়ে বসে খাচ্ছেন, তাঁরা কী বললেন, তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না।’’ বিজেপির ভিতর থেকেও দিলীপবাবুর ওই মন্তব্যের নিন্দা সম্পর্কে তাঁর যুক্তি, ‘‘সকলের নার্ভ সমান হয় না। সবাই সব সহ্য করতে পারে না। সংগঠনের কি কেউ বিরোধিতা করেছে? দলের আমিই সভাপতি।’’

দিলীপবাবুর গুলি করা সংক্রান্ত মন্তব্যের জন্য বিধাননগর পূর্ব থানায় এ দিন এফআইআর করেছেন বিজেপি থেকে বহিষ্কৃত অধুনা শিবসেনা নেতা অশোক সরকার। সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই জানিয়েছে, তারা রাজ্যের সব থানায় আজ, বৃহস্পতি ও কাল, শুক্রবার দিলীপবাবুর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের কর্মসূচি নিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন