Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
TMC

এনপিআর-এ জানাতে হবে মাতৃভাষা, আপত্তি তৃণমূলের

আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশ জুড়ে শুরু হতে চলেছে জনগণনার প্রথম পর্বের কাজ। জনগণনার প্রথম ধাপে মূলত প্রত্যেক নাগরিকের বাড়ি চিহ্নিতকরণ হবে।

এ রাজ্যে এনপিআর করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

এ রাজ্যে এনপিআর করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: পিটিআই।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:১৯
Share: Save:

আধার-ভোটারে সমস্যা নেই। প্যান কার্ড চাইলেই মুখ ভার জনতার। পাইলট পর্বের এই অভিজ্ঞতার জেরে বাধ্য হয়েই জাতীয় জনগণনা পঞ্জি (এনপিআর)-র চূড়ান্ত তালিকা থেকে প্যান কার্ডের নম্বর দেওয়ার বিষয়টি ছেঁটে ফেলল কেন্দ্র। তবে মাতৃভাষা কী তা জানাতে হবে এনপিআর সমীক্ষায়। যা নিয়ে আপত্তি তুলেছে তৃণমূল।

আগামী ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দেশ জুড়ে শুরু হতে চলেছে জনগণনার প্রথম পর্বের কাজ। জনগণনার প্রথম ধাপে মূলত প্রত্যেক নাগরিকের বাড়ি চিহ্নিতকরণ হবে। একই সঙ্গে তথ্য সংগ্রহ করা হবে জাতীয় জনগণনা পঞ্জি (এনপিআর)-র। এপ্রিল থেকে চূড়ান্ত কাজ শুরুর আগে দেশের সব রাজ্যে পাইলট বা প্রি-টেস্টের কাজ চালিয়েছিল রেজিস্টার জেনারেল অ্যান্ড সেন্সাস কমিশনার অব ইন্ডিয়া (আরজিসিসিআই)। প্রায় ৩০ লক্ষ জনগণের মধ্যে এই সমীক্ষা চালানো হয়। তাতে দেখা গিয়েছে, আধার কার্ড বা ভোটার কার্ড দেওয়া ঐচ্ছিক হলেও, তা দিতে বিশেষ কোনও সমস্যা নেই জনগণের। কিন্তু প্যান নম্বর চাইলেই পিছিয়ে যাচ্ছেন অধিকাংশ মানুষ। কারও দাবি, তাঁর কাছে প্যান কার্ড নেই। কেউ আবার বিষয়টি ঐচ্ছিক বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন।

অর্থকরী বিষয় জড়িয়ে থাকায় জনতার মনে প্যান দেওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে বলেই মনে করেছেন অনেকে। যদিও বিশেষজ্ঞদের মতে, যাঁরা করদাতা তাঁদের আধার কার্ডের সঙ্গে প্যান যোগ করা থাকে। সুতরাং কোনও ব্যক্তির আধার নম্বর থাকলেই তার প্যান কার্ড সংক্রান্ত তথ্য চাইলে অনায়াসে জেনে নিতে পারে সরকার।

এনপিআর নিয়ে

• কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে পাইলট পর্বের। ইতিমধ্যেই ৩০ লক্ষ মানুষের থেকে জনগণনা ও এনপিআরের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
• পাইলট পর্বের ভিত্তিতে এনপিআর থেকে বাদ পড়তে চলেছে প্যান দেওয়ার বিষয়টি। কিন্তু জানতে চাওয়া হবে প্রত্যেক নাগরিকের মাতৃভাষা। বিষয়টি পাইলট পর্বের কাজের ভিত্তিতে যোগ করার সিদ্ধান্ত।
• জানাতে হবে বাবা-মায়ের জন্ম তারিখ ও জন্মস্থান। বিরোধীদের মতে, এরই মাধ্যমে এনআরসি করার রাস্তা খুলে রাখতে চাইছে সরকার।
• এনপিআরে তথ্য দেওয়ার বিষয়টি ঐচ্ছিক, আবার ভুল তথ্য দিলে হাজার টাকা জরিমানা করার নিয়ম রয়েছে আইনে। সরকারের যুক্তি, আধার বা ভোটার কার্ড থাকলে কেন দেবেন না নাগরিকেরা। পরস্পরবিরোধী তথ্যে জট আরও পাকিয়েছে।

এমনিতেই এনপিআর নিজেদের রাজ্যে করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল এবং কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলি। তাই বিতর্ক যাতে আর না-বাড়ে সে-জন্য প্যান কার্ডের বিষয়টি চূড়ান্ত প্রশ্নমালার বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিভাজনের বিরুদ্ধেই কবিতা, বলছেন বরুণ

তবে শুরুতে এনপিআর তালিকায় না-থাকলেও কোনও ব্যক্তির মাতৃভাষা কী, তা অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, এতে দেশের কত শতাংশ মানুষ কোন ভাষায় কথা বলেন, তা জানা সম্ভব হবে। ফলে কোনও রাজ্যে কোনও বিশেষ ভাষার মানুষের স্থানান্তর (মাইগ্রেশন) কত হয়েছে, তা ফুটে উঠবে। যে তথ্যের ভিত্তিতে সেই রাজ্যে অন্য কোনও ভাষার স্কুল বা সেই ভাষাকে সরকারি ভাবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ভাষার স্বীকৃতি দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে কি না তা বোঝা যাবে। যদিও তৃণমূলের এক নেতার অভিযোগ, ‘‘পরিকল্পিত ভাবে ভাষার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের লক্ষ্যই হল দেশে কোন রাজ্যে কত বাংলাভাষী মানুষ রয়েছে তা চিহ্নিত করা। আর তাঁরা যদি মুসলমান হন, তখন তাঁদের বাংলাদেশি তকমা দিয়ে তাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেবে মোদী সরকার।’’

এনপিআর প্রশ্নমালার আর একটি বিতর্কিত বিষয় হল বাবা-মায়ের জন্ম-তারিখ ও জন্মস্থান জানানো। বিরোধীদের বক্তব্য, বাবা-মায়ের জন্ম-তারিখ বা জন্মস্থান অনেকেরই জানা থাকে না। তা ছাড়া, কারও বাবা-মা ভারতের বাইরে জন্মে থাকলে তাঁর নাগরিকত্ব ঘিরে প্রশ্ন তৈরি হবে। বিশেষ করে তিনি যদি মুসলিম হন। তখন তাঁর নাম ঢোকানো হবে সন্দেহজনক ভোটার তালিকায়। পরে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) তৈরির সময়ে যাতে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে সহজেই চিহ্নিত করা সম্ভব হয়।

আরও পড়ুন: ‘আজাদি’ চাইছে বিজেপিও, তবে একটু অন্য ভাবে

যদিও কেন্দ্র তথা আরজিসিসিআই-এর কর্তাদের দাবি, এনপিআরের সঙ্গে এনআরসি-র কোনও সম্পর্ক নেই। তা ছাড়া, এনপিআরের মাধ্যমে কোনও সন্দেহজনক ভোটার তালিকা তৈরি করা হবে না। কিন্তু অসমের চিত্র দেখে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন বিরোধীরা।

বিতর্ক তৈরি হয়েছে এনপিআর-এ দেওয়া তথ্য দেওয়া আবশ্যিক না ঐচ্ছিক তা নিয়েও। সরকারের দাবি, এনপিআরে তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। কিন্তু খোদ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘‘কোনও ব্যক্তির কাছে আধার কার্ড থাকলে তাঁর তা জানাতে অসুবিধা কোথায়!’’ বিরোধীদের বক্তব্য, এনপিআর প্রশ্নে সরকার বলছে কোনও ব্যক্তি আধার বা অন্য কোনও তথ্য না-ও জানাতে পারেন। উল্টে দিকে আরজিসিসিআই কর্তারা বলছেন, সব তথ্য দেওয়ার পরে সেই ব্যক্তিকে হলফনামা দিতে হবে তিনি যা তথ্য দিলেন তা সঠিক। সে ক্ষেত্রে ভুল তথ্য দেওয়া বা তথ্য গোপন করা হয়েছে প্রমাণিত হলে হাজার টাকা জরিমানা করা হতে পারে। ফলে ঐচ্ছিক বললেও আদৌও কি কোনও নাগরিক তথ্য দেওয়া এড়িয়ে যেতে পারেন? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই স্বরাষ্ট্র কর্তাদের কাছে। মন্ত্রীর সুরেই তাঁরা বলছেন, ‘‘তথ্য থাকলে দিতে সমস্যা কোথায়!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC NPR
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE