ক্যারমবোর্ড উদ্বোধন করছেন অগ্নিমিত্রা পাল। —সংগৃহীত।
কৌতুক করে একদা তৃণমূলের কোনও কোনও নেতা সম্পর্কে বলা হত, প্রস্তরফলকে নিজের নাম খোদাই করানোর জন্য তাঁরা শৌচালয় পর্যন্ত উদ্বোধন করতে চলে যেতে পারেন। যদিও বাস্তবে তা করে দেখানোর ‘কৃতিত্ব’ বিজেপি-র একমেবাদ্বিতীয়ম নেতা দিলীপ ঘোষের দখলে। ২০২২ সালে তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র মেদিনীপুরে একটি শৌচালয় এবং একটি নর্দমা উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন সাংসদ দিলীপ। শনিবার তাঁকে ছাপিয়ে গিয়েছেন তাঁরই দলের বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল।
নিজের বিধানসভা কেন্দ্র আসানসোলে ফিতে কেটে একটি ক্যারমবোর্ড উদ্বোধন করেছেন অগ্নিমিত্রা। কালবিলম্ব না করে সেই ছবি নিয়ে সমাজমাধ্যমে কটাক্ষ করতে শুরু করেছে তৃণমূল। জবাব দিতে গিয়ে তৃণমূলকে পাল্টা কটাক্ষ করেছেন অগ্নিমিত্রাও।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বাক্স বাঁধার মতো করে একটি ক্যারমবোর্ড লাল রিবন দিয়ে বাঁধা। কাঁচি হাতে সেটি কাটতে উদ্যত অগ্নিমিত্রা। যেমন লাল ফিতে কেটে বিবিধ ইমারত বা অন্য কোনও দোকান ইত্যাদির উদ্বোধন করা হয়। বিধায়ককে ঘিরে বেশ কয়েক জন যুবক। জানা গিয়েছে, আসানসোল দক্ষিণের একটি ক্লাবের তরুণদের এলাকার বিধায়ক হিসাবে ওই ক্যারমবোর্ডটি দিয়েছেন তিনি। জেলায় এবং মফস্সলে ক্যারম প্রতিযোগিতা হয়। তার উদ্বোধনে অনেক সময়ে জনপ্রতিনিধিরা যান। কিন্তু ক্যারমবোর্ডের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের এই দৃশ্য বিরল তো বটেই, সম্ভবত নজিরবিহীনও। অন্তত সাম্প্রতিককালে এমন কোনও দৃষ্টান্তের কথা কেউ মনে করতে পারছেন না। অগ্নিমিত্রার ক্যারমবোর্ডের ফিতে কাটার ছবিটি সমাজমাধ্যমে দিয়ে তৃণমূলের আইটি সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য লেখেন, ‘ক্যারমবোর্ডের উদ্বোধন করলেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। ২০২৬-এ ভোটে জিতলে চাইনিজ় চেকার, রুমালচোরের রুমাল, এমনকি লুডোরও উদ্বোধন করবেন আশা করি। অভিনন্দন।’
অগ্নি (মিত্রা) অবশ্য নিবে যাননি। দেবাংশুর সেই পোস্টের স্ক্রিনশট নিয়ে তিনি লেখেন, ‘ভাইটি, ছেলেদের চুরি করতে তো উৎসাহিত করছি না। যেটা তোমাদের দল আর তোমার নেত্রী করে থাকেন। যে চুরির অনুপ্রেরণায় তোমরা বেড়ে উঠছ। যুবকদের হাতে ক্যারমবোর্ড তুলে দিতে পেরে আমার খুব ভাল লেগেছে। এরা শিক্ষিত বেকারদের নিয়ে খেলবে না। এরা হিন্দুদের জীবন নিয়ে খেলবে না। এরা খুনের হোলি খেলবে না। এরা ক্যারম খেলবে। তোমরা এখনও যোগ্য শিক্ষকদের জীবন নিয়ে খেলে চলেছ। তোমাদের সুস্থ চিন্তা করার বোধ শেষ হয়ে গিয়েছে। শুধু মানুষ ঠকানোর কারবার।’ সেখানেই না থেমে অগ্নিমিত্রা লিখেছেন, ‘ও হ্যাঁ, চিড়িয়াখানায় পশু জন্ম নিলেও কার অনুপ্রেরণাতে নেয়? ভুলে যেয়ো না ভাইটি!’
প্রসঙ্গত, কয়েক বছর আগে আলিপুর চিড়িয়াখানার একটি ফলকে লেখা হয়েছিল, ‘পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় আলিপুর চিড়িয়াখানাতেই জন্ম নেওয়া সিংহশাবকদের আজ উন্মুক্ত করলেন...’। তার পরে তৎকালীন দুই মন্ত্রীর নাম। প্রথম জন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। দ্বিতীয় জন সুজিত বসু। অগ্নিমিত্রা নিঃসন্দেহে সেই প্রসঙ্গ তুলে দেবাংশুকে পাল্টা খোঁচা দিয়েছেন।
তবে সমাজমাধ্যমের রমরমার এই সময়ে ছবি নিয়ে বিদ্রুপ, মশকরা নতুন নয়। গত লোকসভা ভোটে বাঁকুড়ার বিজেপি প্রার্থী সুভাষ সরকার প্রচারে বেরিয়ে এক মধ্যবয়সি ভদ্রলোককে চেয়ারে বসিয়ে স্নান করিয়ে দিয়েছিলেন। সুভাষ দাবি করেছিলেন, তাঁর মনে হয়েছিল, ওই ভদ্রলোক প্রচন্ড গরমে স্নান করতে চেয়েছেন। তাই মগে করে জল তুলে তাঁকে স্নান করিয়ে দিয়েছিলেন সুভাষ। সেই ছবি নিয়ে বিস্তর হাসিঠাট্টা চলেছিল সমাজমাধ্যমে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের প্রচারে খড়্গপুর সদরে কলতলায় স্নানরত এক ব্যক্তিকে সাবান মাখিয়ে দিয়েছিলেন অভিনেতা তথা বিজেপি-র প্রার্থী হিরণ চট্টোপাধ্যায়। সাবানের ফেনা-ভর্তি আদুল গায়ে সেই গ্রামবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে পোজ় দিয়ে ছবিও তুলিয়েছিলেন হিরণ। সেই ছবিও হাসির রোল তুলেছিল সমাজমাধ্যমে। আবার দমদমে তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার একটি বোর্ডের ছবি সমাজমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছিল। যে বোর্ডের এক দিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা এবং অন্য দিকে স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ছবি। মাঝে লেখা ‘পচনশীল বর্জ্য’।
আশ্চর্য উদ্বোধনের তালিকায় নবতম সংযোজন অগ্নিমিত্রার প্রদেয় ক্যারমবোর্ড। এ যে আগামী বিধানসভা ভোটের আগে এলাকায় জনসংযোগ, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু সন্দিগ্ধুরা একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্নও তুলছেন— ভোটের ঘুঁটি ঠিক পকেটে পড়বে তো?