নীতি আয়োগের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
কেন্দ্র এবং রাজ্যকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে হবে। ‘টিম ইন্ডিয়া’র মতো একসঙ্গে কাজ করলে কোনও লক্ষ্যই পূরণ করা অসম্ভব নয়! শনিবার নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীদের এই বার্তাই দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি জোর দেন, ‘২০৪৭-এ বিকশিত ভারতের জন্য বিকশিত রাজ্য’ গড়ে তোলার উপর! শুধু তা-ই নয়, রাজ্যগুলির পর্যটন নিয়েও নিজের মত প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
নীতি আয়োগের বৈঠকে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত রাজ্যগুলিকে ‘ভবিষ্যতের জন্য তৈরি’ করার কথা বলেছেন মোদী। কী ভাবে সেই উন্নয়ন সম্ভব, তার রূপরেখার ধারণাও দেন তিনি। প্রতিটি রাজ্যে অন্তত একটি করে পর্যটন কেন্দ্র করে গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ‘একটি রাজ্য, একটি বিশ্বব্যাপী পর্যটন কেন্দ্র’, এই ধারণার উপরেই জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশব্যাপী পর্যটন শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সাহায্যও চেয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত মুখ্যমন্ত্রীদের উদ্দেশে মোদী বলেন, ‘‘আমাদের উন্নয়নের গতি আরও বৃদ্ধি করতে হবে। যদি কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলি একসঙ্গে ‘টিম ইন্ডিয়া’র মতো মিলেমিশে কাজ করে, তবে কোনও লক্ষ্যই অসম্ভব নয়।’’ মোদীর কথায়, ‘‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রত্যেক রাজ্যের উচিত অন্তত একটি পর্যটনকেন্দ্র তৈরি করা। তবে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, সেই সব পর্যটনকেন্দ্রে সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধা এবং পরিকাঠামো যেন থাকে।’’
পহেলগাঁও কাণ্ড, তার প্রত্যাঘাত হিসাবে ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’
এবং তার পরে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপড়েনের আবহে এই প্রথম সব রাজ্যের
মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসলেন প্রধানমন্ত্রী। তবে শনিবারের বৈঠকে
উপস্থিত ছিলেন না অবিজেপি শাসিত তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তাঁরা হলেন বাংলার
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কর্নাটকের সিদ্দারামাইয়া এবং কেরলের পিনারাই
বিজয়ন। গত জুলাইয়ে নীতি আয়োগের পরিচালন পরিষদের বৈঠকে যোগ দিয়েও মাঝপথে বেরিয়ে
এসেছিলেন মমতা। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর বলার সময় মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়। নীতি
আয়োগের বৈঠকে তাঁকে বলতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তখনই তিনি ঘোষণা করেন, নীতি আয়োগের আর
কোনও বৈঠকে যোগ দেবেন না। তবে সিদ্দারামাইয়া এবং বিজয়ন কেন বৈঠকে যাননি, তা এখনও
স্পষ্ট নয়।
বৈঠকের যে ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে, তাতে অন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের দেখা গেলেও বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে দেখা যায়নি। বৈঠকে তাঁর যোগ দেওয়া, না-দেওয়া নিয়ে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে। পরে নীতি আয়োগের সিইও বিভিআর সুব্রহ্মণ্যম নীতীশের গরহারিজার কথা নিশ্চিত করেন। তবে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, তিনি শনিবার দুপুরেই দিল্লি পৌঁছেছেন। রবিবার এনডিএ-র একটি বৈঠকেও যোগ দেবেন। তবে নীতি আয়োগের বৈঠকে
তবে শনিবারের বৈঠকে অবিজেপি শাসিত রাজ্যের বেশ কয়েক জন মুখ্যমন্ত্রীকে দেখা গিয়েছে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। গত কয়েক দিন ধরেই ভাষা-যুদ্ধ চলছে কেন্দ্র এবং তাঁর মধ্যে। স্ট্যালিনের অভিযোগ, কেন্দ্র নয়া শিক্ষানীতিকে শিখণ্ডী করে হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়া চেষ্টা করছে। তাঁর রাজ্যে নয়া শিক্ষানীতি চালু করবেন না তিনি। তার পরে কেন্দ্র শিক্ষাখাতে তামিলনাড়ুর প্রাপ্য টাকা আটকে দিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। সেই আবহে নীতি আয়োগের বৈঠকে তাঁর উপস্থিতি তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মত অনেকের। এ ছাড়াও, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, পঞ্জাবের ভগবত মান, তেলঙ্গানার রেবন্ত রেড্ডি, অন্ধ্রপ্রদেশের চন্দ্রবাবু নায়ডুরা ছিলেন বৈঠকে। সকলের সঙ্গেই মোদীকে আলাদা করে কথা বলতে দেখা গিয়েছে।
বৈঠকে কেন্দ্র-রাজ্য মিলেমিশে কাজ করার কথা মোদীর মুখে যেমন শোনা গিয়েছে, তেমনই মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে তাঁর ব্যবহারেও উঠে এসেছে। নীতি আয়োগের বৈঠকে প্রথম থেকেই মোদীকে খোশমেজাজে দেখা যায়। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে তিনি কখনও হাসছেন, কখনও আবার করমর্দন করছেন, আবার কখনও একসঙ্গে চা খাচ্ছেন। অনেকের মতে, কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে ‘দূরত্ব’ও যে নেই, তাই উঠে এসেছে নীতি আয়োগে মোদীর ব্যবহারে।