নিহত কর্মী স্মরণে শহিদ দিবসের ডাক বিজেপির

নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক সংঘর্ষে খুন হয়েছিলেন দলীয় কর্মী শেখ রহিম। তাঁরই স্মরণে আজ, বুধবার শহিদ দিবস পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিজেপি। ঘটনাচক্রে, যার পাঁচ দিন পরেই ২১ জুলাই, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের শহিদ দিবস। বোলপুরের ডাকবাংলো ময়দানে দলের প্রথম ‘শহিদ দিবস’-এর মঞ্চও বাঁধা হয়েছে ইলামবাজার এলাকার নিহত কর্মী রহিমের নামেই।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৪ ০২:৪৩
Share:

১০ জুলাই মুখ্যমন্ত্রীর সভায় ছিলেন শেখ রহিম খুনে মূল অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা জাফারুল ইসলাম। ফাইল চিত্র

নির্বাচনের পরে রাজনৈতিক সংঘর্ষে খুন হয়েছিলেন দলীয় কর্মী শেখ রহিম।

Advertisement

তাঁরই স্মরণে আজ, বুধবার শহিদ দিবস পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিজেপি। ঘটনাচক্রে, যার পাঁচ দিন পরেই ২১ জুলাই, রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের শহিদ দিবস।

বোলপুরের ডাকবাংলো ময়দানে দলের প্রথম ‘শহিদ দিবস’-এর মঞ্চও বাঁধা হয়েছে ইলামবাজার এলাকার নিহত কর্মী রহিমের নামেই।

Advertisement

দলীয় সূত্রে দাবি, বিজেপি করার ‘অপরাধে’ বীরভূমের কানুর গ্রামের ওই কর্মীকে ৭ জুন বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে খুন করেছিল স্থানীয় তৃণমূল কর্মীরা। আগামী বছর থেকে তাই ওই দিনটিকেই তাদের শহিদ দিবস হিসেবে নির্দিষ্ট করতে চায় বিজেপি।

রাজ্য-রাজনীতিতে শহিদ দিবস হিসেবে ২১ জুলাই ইতিমধ্যেই আলাদা তাৎপর্য পেয়েছে। দলীয় কর্মীদের আরও সংহত করতে ৭ জুন-কে শহিদ দিবস হিসেবে বেছে নিয়ে বিজেপি কি তারই পাল্টা জবাব দিতে চাইছে?

দলের এক প্রভাবশালী রাজ্য নেতা বলছেন, “শাসক দলের অবিরাম অত্যাচার-অরাজকতার বিরুদ্ধে ৭ জুন অচিরেই ঐতিহাসিক দিন হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।”

এ দিন, বীরভূমের জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে বোলপুরের ওই মঞ্চে থাকছেন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ, সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার, আসানসোলের সদ্য নির্বাচিত সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়।

গত ১০ জুলাই বোলপুরের ওই মাঠেই প্রশাসনিক সভা করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিন মঞ্চে মমতার পাশেই ছিলেন রহিম খুনে মূল অভিযুক্ত বীরভূম জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (স্বাস্থ্য ও পরিবেশ) তথা ইলামবাজার ব্লক তৃণমূলের সভাপতি জাফারুল ইসলাম। বিজেপি-র বীরভূম জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের কথায়, “দিনে দুপুরে যে রহিমকে খুন করে গেল সেই কিনা মুখ্যমন্ত্রীর পাশে মঞ্চে ঠাঁই পেল। পাল্টা সভা করার জন্য তাই বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠটাই বেছে নিয়েছি আমরা।”

রাহুল বলেন, “বোলপুরে দলের প্রথম শহিদ দিবসের আয়োজক জেলা নেতৃত্বই। তবে রাজ্য নেতৃত্বের প্রায় সকলেই ওই দিনের সভায় থাকবেন।” সুভাষবাবু জানান, এ বছর বোলপুরে হলেও আগামী বছর থেকে তাঁরা শেখ রহিম মঞ্চ গড়ে শহিদ দিবস পালন করবেন কানুরে। শহিদ দিবসে যোগ দিতে দিল্লি থেকে উড়ে আসছেন আসানসোলের তারকা সাংসদ বাবুলও। তিনি বলেন, “রাজ্য জুড়ে যে সন্ত্রাসের ছায়া পড়েছে তা মুছে দিতেই ওই স্মরণ-মঞ্চ।”

শহিদ দিবস পালন এবং নিহত দলীয় কর্মীর নামেই মঞ্চ গড়ার এই ভাবনা এল কোথা থেকে?

বিজেপি সূত্রের খবর, শেখ রহিম খুনের পরে দলের জেলা কমিটির বৈঠকে প্রস্তাবটা প্রথম দেন ইলামবাজার জেলা বিজেপি সম্পাদক তথা ইলামবাজার ব্লক পর্যবেক্ষক চিত্তরঞ্জন সিংহ। চিত্তরঞ্জনবাবু বলেন, “নিচুতলার কর্মী ছিলেন রহিম। কোনও সংস্কার নেই, স্বচ্ছ মন, সদালাপী এবং প্রচণ্ড উদ্যমী। ওঁর অপরাধ, বিজেপি করা। দল একজন খাঁটি কর্মীকে হারিয়েছে।” তিনি প্রস্তাব দেন, শহিদ দিবসে মঞ্চ গড়া হোক ওই দলীয় কর্মীর নামে। সর্বসম্মতিক্রমেই পাশ হয় তাঁর প্রস্তাব।

বিজেপি-র অভিযোগ, গত ৭ জুন ঘুড়িষা পঞ্চায়েত এলাকায় গ্রামে তাঁর নিজের বাড়িতে খেতে বসেছিলেন রহিম। সেই সময়ে জাফারুল ইসলামের নির্দেশে স্থানীয় তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য, নেতা-কর্মী এবং তাঁদের আশ্রিত বেশ কয়েক জন পরিচিত দুষ্কৃতী তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। বাড়ির কাছেই ল্যাম্প পোস্টে বেঁধে ফেলা হয়। নিমেষে কুপিয়ে খুন করা হয় তাঁকে। কেন?

বিজেপি-র অভিযোগ, লোকসভা নির্বাচনে ইলামবাজার ব্লকে বিজেপি ২০ শতাংশেরও বেশি ভোট পেয়েছিল। নির্বাচন-পর্ব মিটতেই তাই শাসকদলের ‘লক্ষ্য’ হয়ে পড়েন রহিম। ১৫ জুন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ঘুরে গিয়েছেন কানুর। দলে ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি বলবীর পুঞ্জ, সাংসদ কীর্তি আজাদ, সংখ্যালঘু মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি আব্দুল রশিদ আনসারি। ফিরে গিয়ে তাঁরা রিপোর্ট দেন প্রধানমন্ত্রীকেও। যদিও বিজেপির অভিযোগ, হামলা থামেনি। নিয়মিত চলছে শাসানি ও ভাঙচুর।

এ দিন রহিমের পরিবারকেও মঞ্চে নিয়ে আসছে জেলা বিজেপি। জেলা নেতারা জানান, সভায় ভুক্তভোগীরা নিজেরাই জানাবেন তাঁদের ‘সন্ত্রস্ত দিনযাপনের’ কথা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement