মুকুল রায়।
দিন তিনেক আগে মারধরে জখম হয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের এক বিজেপি কর্মী। অভিযোগের তির ছিল তৃণমূলের দিকে। রবিবার রাতে কলকাতার হাসপাতালে বিপিন দাস (৩৬) নামে ওই বিজেপি কর্মীর মৃত্যু হয়। এর পরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে নতুন করে সরব হয়েছে গেরুয়া শিবির।
নিহত বিপিনের দেহ সোমবার কলকাতায় বিজেপি-র রাজ্য দফতরে আনা হয়। সেখানে দলের নেতা-কর্মীরা তাঁর মরদেহে মালা দেন। বিপিনকে খুনের প্রতিবাদে এ দিন বিজেপি-র রাজ্য দফতর লাগোয়া চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ কিছু ক্ষণ অবরোধও করেন দলের কর্মীরা। আজ, মঙ্গলবার দাঁতন বন্ধ ডেকেছে বিজেপি। বিপিনের মরদেহ নিয়ে মুকুল রায়, বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরিসহ বিজেপি নেতা-কর্মীরা আজ দাঁতনে যাবেন। সেখানেই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। বিপিনকে খুনের অভিযোগে চার তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
তাৎপর্যপূর্ণ হল, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পশ্চিমবঙ্গে যখন পরিবর্তনপন্থী আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল, তখনও ঠিক এই রকমই মৃতদেহের রাজনীতি দেখেছিল রাজ্য। তখন জেলায় জেলায় তৃণমূলের কর্মী খুন হলেই নাম জড়াত সিপিএম কর্মীদের। সেই সময় নিহতদের দেহ নিয়ে কলকাতায় এসে বিরাট হইচই করত তৃণমূল। যার নেতৃত্বে থাকতেন তৎকালীন তৃণমূল নেতা মুকুলবাবুই। এখন যিনি সেই দায়িত্বই পালন করছেন বিজেপি-তে এসে।
ঘটনার সূত্রপাত গত ৩০ নভেম্বর। দাঁতন ব্লক অফিসে মিছিল করে গিয়ে স্মারকলিপি দেন বিজেপি কর্মীরা। সেখানে বিপিনও ছিলেন। তার পরই ১ ডিসেম্বর রাতে দাঁতনের আলিকষা পঞ্চায়েতের কাঁটাপাল গ্রামে তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ বাধে। অভিযোগ, ওই সময় তৃণমূল কর্মীরা বিপিনের বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে লোহার রড দিয়ে মারধর করে। দাঁতন ও মেদিনীপুরের হাসপাতাল ঘুরে ওই বিজেপি কর্মীকে কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মারধরে স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিচিত্র সাহু জখম হয়েছেন বলেও অভিযোগ ওঠে। ২ ডিসেম্বর বিজেপি-তৃণমূল দু’পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করে। পুলিশ তড়িঘড়ি তিন বিজেপি কর্মীকে গ্রেফতারও করে। আর রবিবার বিপিনের মৃত্যুর পরে খুনের মামলা রুজু করে সুবল ধাউরিয়া, সমীর ধাউরিয়া, বিনয় দাস ও চন্দন দাস নামে চার তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বিজেপি মূল অভিযুক্ত বিচিত্রকে গ্রেফতারের দাবি তুলেছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরেরই সবংয়ে আসন্ন উপনির্বাচনে দাঁতনের এই ঘটনাকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার চেষ্টা করছে বিজেপি। তবে তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির দাবি, “গ্রাম্য বিবাদের জেরে দাঁতনের ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূল কোথাও সন্ত্রাস চালাচ্ছে না। আর সবং উপনির্বাচনে এ সব প্রভাব ফেলবে না। বিজেপিকে চতুর্থ স্থানে থাকতে হবে।’’