বিধায়কের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ বিজেপির, আক্রান্ত পুলিশও

রবিবার সেই উত্তেজনাই চরমে পৌঁছল খেজুরিতে। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল এলাকায় ঢুকতে বাধা পেলেন। নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের কায়দায় রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে আটকানো হল পথ। ভাঙচুর চলল পুলিশের গাড়িতেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

খেজুরি শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৯ ০৪:৫০
Share:

তৃণমূল বিধায়কের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ, ঘটনাস্থলে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।

দফায় দফায় অশান্তি চলছিলই। কখনও বিজেপির মঞ্চ ভাঙার অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের বিরুদ্ধে, কখনও তৃণমূল নেতার বাড়িতে জোর করে বিজেপির পতাকা লাগানো নিয়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল।

Advertisement

রবিবার সেই উত্তেজনাই চরমে পৌঁছল খেজুরিতে। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল এলাকায় ঢুকতে বাধা পেলেন। নন্দীগ্রামে জমি আন্দোলনের কায়দায় রাস্তায় গাছের গুঁড়ি ফেলে আটকানো হল পথ। ভাঙচুর চলল পুলিশের গাড়িতেও। ইটের ঘায়ে মাথা ফেটেছে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের। পরিস্থিতি সামলাতে নামাতে হয়েছে কমব্যাট ফোর্স।

গোলমালের জেরে ফিরতে হয় তৃণমূল বিধায়ককে। তিনি বলেন, ‘‘আমি এলাকার জনপ্রতিনিধি। তাই শান্তি-শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং গ্রামবাসীর দাবি-দাওয়া শুনতে এলাকায় গিয়েছিলাম। কিন্তু বিজেপি কর্মীরা গায়ের জোরে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাইছে।’’ বিজেপির খেজুরি-১ মণ্ডল সভাপতি সুমন দাসের বক্তব্য, ‘‘আমাদের একটাই দাবি— বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের যারা মারধর করেছে, তাদের গ্রেফতার করতে হবে। তা না হলে আন্দোলন চলবে।’’ কাঁথির এসডিপিও সৈয়দ মহম্মদ মামদোদুল হোসেন জানান, এ দিনের ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের
করবে পুলিশ।

Advertisement

গত দু’দিন ধরে তৃণমূল-বিজেপি গোলমাল চলছিল খেজুরির কণ্ঠীবাড়িতে। এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ সেই এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার পথেই রণজিতের পথ আটকানো হয়। নতুন বাজারের কাছে বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা হাতে লাঠি, বাটাম নিয়ে বিধায়কের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করে। তাঁকে ফিরে যেতে বলা হয়। শনিবার বিজেপি নেতা সনৎ মাইতিকে মারধরে অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত পুলিশ-প্রশাসনের কাউকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। পরে পথ আটকাতে নতুন বাজার এবং বীর বন্দরবাজারের রাস্তায় ইট, গাছের গুঁড়ি ফেলে দেওয়া হয়।

খবর পেয়ে বিশাল পুলিশ বাহিনী নতুন বাজারে পৌঁছয়। পুলিশকে দেখে বিক্ষোভকারী আরও তেতে ওঠে। ধস্তাধস্তি শুরু হয়। চন্দন বারিক ও বচ্চন জানা নামে দুই বিক্ষোভকারীকে পুলিশ আটক করলে আগুনে ঘি পড়ে। তৃণমূল বিধায়ক এলাকায় অশান্তি সৃষ্টি করতে এসেছেন, এই অভিযোগে সরব হয় বিজেপি। পরিস্থিতি দেখে বিধায়কের কথা মতো আটক দুই বিজেপি কর্মীকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। তারপর কোনওরকমে ওই এলাকা থেকে বেরিয়ে রণজিৎ বীরবন্দর বাজারের দিকে রওনা দেন। সেখানে ফের অবরোধের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। পুলিশ অবরোধকারীদের বোঝানোর চেষ্টা করলে পুলিশের গাড়ি লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। পুলিশের একটি গাড়ির কাচ ভাঙে। ইটের ঘায়ে এক সিভিক ভলান্টিয়ারের মাথা ফাটে। তাঁকে কামারদা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। এখান থেকেই ফিরতে হয় বিধায়ককে।

জমি-আন্দোলন পর্বে শিরোনামে উঠে আসা নন্দীগ্রাম-খেজুরি গত এক দশকেরও বেশি তৃণমূলের ঘাঁটি। গত কয়েকটি নির্বাচনে এখানে বিরোধীদের আতসকাচে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সদ্য সমাপ্ত লোকসভা ভোটে অবশ্য খেজুরি বিধানসভায় তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও কিছু এলাকা মাথা তুলেছে পদ্ম। খেজুরি বিধানসভায়
তৃণমূলের লিড দাঁড়িয়েছে সাকুল্যে সাড়ে সাত হাজার। এই পরিস্থিতিতে শুরু হয়েছে দুই ফুলের সংঘাত। তৃণমূলের পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সভাপতি শিশির অধিকারীর দাবি, ‘‘বিজেপি শান্ত খেজুরিকে অশান্ত করতে চাইছে।’’ আর বিজেপি-র জেলা সভাপতি তপন মাইতি বলছেন, ‘‘গ্রামের মানুষ জেগেছেন। এটা জনরোষ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন