রামনবমী, হনুমান জয়ন্তী, বিবেক উৎসবের পরে এ বার ভারতমাতা পুজো! সৌজন্যে বিজেপি। তা নিয়েও যথারীতি শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক।
গৈরিক পতাকা হাতে সিংহবাহিনী দুর্গা। অখণ্ড ভারতের মানচিত্রের উপর দুর্গার এই কল্পচিত্রই বিজেপির ‘ভারতমাতা’। আগামী ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসে গোটা রাজ্য জুড়ে সেই ‘ভারতমাতা’র পূজনেই এ বার বাড়তি নজর বিজেপির। সংগঠন আর জনসংযোগ বাড়াতে, তৃণমূলকে টক্কর দিতে বিজেপির ‘ভারতমাতা’ই এ বার নতুন হাতিয়ার।
সে জন্য দলীয় পদ্ম-পতাকার বাইরে ভারতমাতার কল্পচিত্র নিয়ে পাড়ায় পাড়ায়, বুথে বুথে, মণ্ডলে মণ্ডলে এ বার মিছিল করবে বিজেপির সব শাখা সংগঠন। দিনভর হবে দেশাত্মবোধক গান-নাচের অনুষ্ঠান। কিন্তু সনাতন ভারতীয় চিন্তনে ভারতমাতার কল্পচিত্র তো চিত্রশিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টি! সেখানে গৈরিক বসনার এক হাতে বই, এক হাতে ধানের ছড়া, এক হাতে বস্ত্র, অন্য হাতে জপমালা। সাধিকাবেশী ওই গৈরিক বসনাকে ‘ভারতমাতা’ মানতে নারাজ গেরুয়া শিবির। তারা তাদের নিজস্ব কল্পচিত্রকেই বাংলার মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে চায়। আর তাতেই চর্চা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক শিবিরে। অন্যান্য বারের মতো দিনভর কুচকাওয়াজ, শোভাযাত্রা, দেশাত্মবোধক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই ওই দিন জনসংযোগে নজর দিচ্ছে তৃণমূল। আপাতত বিজেপির ‘ভারতমাতা পূজন’-এর পাল্টা কোনও কর্মসূচি শাসক দলের নেই।
বিজেপির কর্মসূচির কথা শুনে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্য, ‘‘ওদের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে লোকই তো নেই! আর ভারতমাতা তো মানুষের হৃদয়ে। ওরা কী চেনাবে? ওরা তো খালি সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি দিতে পারে।’’ জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘কালী, দুর্গাকে কে দেখেছে! সবই তো কাল্পনিক। তাই ভারতমাতার এই ছবি দিয়ে মানুষকে আকর্ষণ করতে চাই। দেশপ্রেমে ও উৎসাহে দলের কর্মীরা নিজেরাই ওই দিন এলাকায় এলাকায় মানুষের কাছে পৌঁছবে।’’ পাল্টা যুক্তি দিয়ে বলা হচ্ছে, দেবদেবীদের মূর্তি কাল্পনিক নয়। কারণ, ধ্যান-মন্ত্রেই তাঁদের রূপের বর্ণনা থাকে। ভারতমাতার ক্ষেত্রে তা নেই।
ভারতমাতার লড়াইয়ে না থাকলেও তার আগে ২৩ জানুয়ারি নেতাজিকে নিয়ে নেমে পড়ছে বাম ও তৃণমূল। ২৩ জানুয়ারি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মদিন নিয়ে অবশ্য নির্দিষ্ট দাবি আছে তৃণমূলের। তারা ওই দিনে জাতীয় ছুটি চায়। এ নিয়ে কেন্দ্রের কাছে রাজ্যের তরফে দরবারও করা হয়েছে। ওই দিনটিকে ‘দেশপ্রেম দিবস’ হিসেবে পালনের অনুরোধ জানিয়ে বৃহস্পতিবার বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেন। তাঁর বক্তব্য, ২০০৯ সাল থেকে বামফ্রন্ট সরকার ২৩ জানুয়ারি দেশপ্রেম দিবস হিসেবেই পালন করত। মুখ্যমন্ত্রীও যেন সরকারি ভাবে দেশপ্রেম দিবস হিসেবেই দিনটি উদ্যাপন করেন।