EZCC Durga Puja

‘বাঙালিয়ানা’ চাপে পড়েছে পদ্ম! দু’বছর পরে আবার পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে ফিরছে বিজেপির দুর্গোৎসব, খুঁটিপুজো রবিবারই

২০২০ সালে ইজ়েডসিসি-তে প্রথম বার দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছিল বিজেপি।বিধানসভা নির্বাচনে স্বপ্নপূরণ না হওয়ায় ২০২১ সালে কোনও রকমে পুজো সারা হয়। এর পর ২০২২ সালে নমো-নমো করে তৃতীয় বার পুজো করে দুর্গোৎসব আয়োজনের পাট চোকায় বিজেপি। সেই থেকে আর ইজ়েডসিসিতে পুজো হয়নি।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২৫ ০০:১৫
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

আবার দুর্গেৎসবের আয়োজনে বঙ্গ বিজেপির নেতৃত্ব। গত ১৮ জুলাই দুর্গাপুরে সভামঞ্চ থেকে ‘জয় মা কালী, জয় মা দুর্গা’ স্লোগান তুলেছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাঙালি ভাবাবেগের প্রতি ‘বিশেষ যত্নশীল’ হয়ে হিন্দুত্বে বাঙালিয়ানা মেশানোয় বিজেপি জোর দিয়েছে বলে চর্চা শুরু হয়েছিল। তৃণমূল তা নিয়ে কটাক্ষও ছুড়েছিল বিজেপির দিকে। কিন্তু বঙ্গ বিজেপি যে আপাতত সে সব কটাক্ষে কর্ণপাত না করে লক্ষ্যে অবিচল থাকতে চায়, তারই ইঙ্গিত মিলল পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতি কেন্দ্রে (ইজ়েডসিসি) খুঁটিপুজোর ঘোষণায়। রবিবার রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের উপস্থিতিতে দুর্গোৎসবের খুঁটিপুজো হচ্ছে ইজ়েডসিসিতে।

Advertisement

২০২০ সালে ইজ়েডসিসি-তে প্রথম বার দুর্গাপুজোর আয়োজন করেছিল বিজেপি। তার আগের বছরই বিজেপি বাংলা থেকে ১৮ টি লোকসভা আসন জিতেছিল। আবার ২০২১ সালে ছিল বিধানসভা নির্বাচন। দলীয় উদ্যোগে দুর্গাপুজোর আয়োজনের নেপথ্যে সেটাও অন‍্যতম কারণ ছিল বলে এখনও মনে করেন অনেকে। তবে এই পুজোর শুরুটা হয়েছিল তৃণমূল থেকে আসা এক নেতার হাত ধরে। তখন বিজেপিতে ‘প্রভাবশালী’ ছিলেন মুকুল রায়। মূলত তাঁরই পরামর্শে ইজ়েডসিসি-তে দুর্গাপুজো শুরু করেছিল বিজেপি। অবশ্য বিধানসভা ভোটের পর পরই তৃণমূলে ফিরে যান মুকুল। পুজোর আর এক উদ্যোক্তা ছিলেন তখন বিজেপিতে থাকা সব্যসাচী দত্ত। রাজ্য বিজেপির তৎকালীন পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় ওই দুই নেতাকে পুজো করার ছাড়পত্র দিয়েছিলেন।

যে বছর ইজ়েডসিসি-তে বিজেপির দুর্গাপুজো শুরু হয়, তখন দলের রাজ্য সভাপতি ছিলেন দিলীপ ঘোষ। সেই আবহে কলকাতায় কতগুলি দুর্গাপুজোর উপর বিজেপির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, তা দেখতে চান কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। প্রয়োজনে সে সব পুজোর উদ্বোধনে তাঁরা আসবেন বলেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে বার কলকাতায় বিজেপির নেতাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পুজো প্রায় খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই পরিস্থিতিতে মূলত মুকুলের পরামর্শেই ইজ়েডসিসি-তে দলীয় উদ্যোগে দুর্গাপুজো করা হবে বলে স্থির হয়। যদিও দিলীপ শুরু থেকেই দলীয় উদ্যোগে দুর্গাপুজোর বিরোধী ছিলেন। তাঁর মত ছিল, দলের নেতা-কর্মীরা ব‍্যক্তিগত ভাবে পুজো করতে পারেন কিংবা কমিটিতে যুক্ত থাকতে পারেন, কিন্তু পুজো করা রাজনৈতিক দলের কাজ নয়।

Advertisement

তা সত্ত্বেও প্রথম বারের পুজো ঘিরে বিজেপির উত্তেজনা ছিল চরমে। সে বার ভার্চুয়াল মাধ্যমে এই পুজোর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনে স্বপ্নপূরণ না হওয়ায় ২০২১ সালে কোনও রকমে পুজো সারে বিজেপি। পরের বছর পুজো নিয়ে আরও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। তা ছাড়া, প্রথম বছর পুজোর পরেই বিতর্ক শুরু হয়ে গিয়েছিল দলের অন্দরে। কিন্তু দুর্গাপুজো এক বার করলে অন্তত তিন বার করতে হয়, হিন্দু লোকাচারের এমনই রীতি। ফলে ২০২২ সালে নমো-নমো করে তৃতীয় বার পুজো করে দুর্গোৎসব আয়োজনের পাট চোকানো হয়।

তার পর ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে ইজ়েডসিসিতে আর পুজো হয়নি। তবে ২০২৩ সালে ইজ়েডসিসির ঠিক বিপরীতে ঐকতান চত্বরে বিজেপির নেতা-কর্মীরা নিজেদের উদ‍্যোগে পুজোর আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু গত বছর হয়নি সেই পুজোও। এ বার শমীক সভাপতি হতেই চলতি বছরে স্বমহিমায় ফিরছে ইজ়েডসিসির পুজো! পুজো হচ্ছে বিজেপির সাংস্কৃতিক সেলের উদ্যোগে, যে সেলের প্রধান রুদ্রনীল ঘোষ।

দু’বছর পর ফের দলীয় উদ্যোগে পুজো নিয়ে কী বলছেন দিলীপ? এর মধ্যে কি মত পাল্টেছে তাঁর? এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে দিলীপ আনন্দবাজার ডট কম-কে বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। আমি আপনার কাছ থেকেই জানলাম। সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার মধ্যে আমি ছিলাম না। তবে দল যদি এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে, ভাল। পুজো হোক।’’ রাজ‍্য বিজেপির সাংস্কৃতিক সেলের প্রধান রুদ্রনীল অবশ্য যথাসম্ভব গা বাঁচিয়ে এবং ‘বিতর্ক’ এড়িয়েই এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘সরাসরি দলের কিংবা দলের সাংস্কৃতিক শাখার উদ‍্যোগে পুজো হচ্ছে, এমনটা বলা যাবে না। মূলত পশ্চিমবঙ্গ সংস্কৃতি মঞ্চ নামে এক সংগঠনের উদ্যোগে পুজো হচ্ছে। আমরা সকলে সেখানে রয়েছি।’’ রুদ্রনীল আরও বলেন, ‘‘আমরা যাঁরা একসঙ্গে দল করি, পুজোর সময়ে তাঁদের নিজেদের মধ্যে একটা মিলমিশ, আড্ডা এবং লেনদেনের জন‍্যই এই উদ্যোগ। নিজেদের কর্মসূচি বাদ দিয়ে যে যখন সময় পাব, এখানে এসে নিজেদের মধ‍্যে আড্ডা মেরে সময় কাটাব। সেখানে কবিতা, গান, নাটক সবই থাকবে। তাই এই আয়োজন।’’ রুদ্রনীলের দাবি, ওই এলাকার দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা চাইছিলেন, পুজোটা হোক। এলাকার প্রবীণ এবং সম্মানীয় মানুষজনও চাইছিলেন ইজ়েডসিসিতেই আবার পুজো হোক। সে কারণেই এ বছরের আয়োজন।

প্রসঙ্গত, সাম্রতিক অতীতে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ‘বাঙালি হিন্দুত্ব’-এর দিকে ঝুঁকতে দেখা গিয়েছে বিজেপিকে। এমনকি, শমীককে রাজ্য সভাপতি ঘোষণা করার দিনও মঞ্চের পিছনে শ্রীরামচন্দ্রের বদলে দেখা গিয়েছিল কালীঘাট মন্দিরের বিগ্রহের ছবি। শ্রীরামের পাশাপাশি মা কালীর নামেও জয়ধ্বনি দিতে শোনা গিয়েছিল বিজেপির নেতাদের। হিন্দুত্বের চেনা আঙ্গিকে ‘বাঙালিয়ানা’-কে জুড়তে চাওয়া নিয়ে শাসক দল তৃণমূলের কটাক্ষও কম শুনতে হয়নি বিজেপিকে। কিন্তু সে সবে কান না দিয়ে এ বার বাঙালির অন্যতম ধর্মীয় উৎসব আয়োজনে বিজেপি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement