নিমাইদের সভায় এ বার মুস্তফাও

চার্জশিটে তাঁরই নাম রয়েছে সবার প্রথমে। ওই তালিকায় রয়েছে তাঁর ছেলের নামও। সিবিআই সংক্রান্ত মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করে হৃদয় ঘোষ তৃণমূলেও নাম লেখালেও নিম্ন আদালতে তাঁর উপর শাস্তির খাঁড়া এখনও ঝুলছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

পাড়ুই শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৫ ০০:৪২
Share:

গলায় গলায়। সোমবার দুপুরে পাড়ুইয়ের কসবায় নিমাইয়ের সঙ্গে মুস্তফা। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

চার্জশিটে তাঁরই নাম রয়েছে সবার প্রথমে। ওই তালিকায় রয়েছে তাঁর ছেলের নামও। সিবিআই সংক্রান্ত মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করে হৃদয় ঘোষ তৃণমূলেও নাম লেখালেও নিম্ন আদালতে তাঁর উপর শাস্তির খাঁড়া এখনও ঝুলছে। দু’দিন আগেও তাঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে গাল পাড়তেন। এমন এক পরিস্থিতিতে সেই হৃদয়ের দলবলের সঙ্গেই গলা মিলিয়ে সভায় যোগ দিতে দেখা গেল সাগর ঘোষ হত্যায় অভিযুক্ত তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল সম্পাদক শেখ মুস্তফাকে। সোমবার দুপুরে এমনই এক রাজনৈতিক ‘বোঝাপড়া’র সাক্ষী থাকল পাড়ুই থানার কসবা।

Advertisement

একদা ‘বিক্ষুব্ধ’ তৃণমূল থেকে বিজেপি হয়ে যাওয়া হৃদয় এবং নিমাই দাস গোষ্ঠীর আনুষ্ঠানিক ‘ঘরওয়াপসি’র আট দিনের মাথায় এলাকার তৃণমূল স্তরের বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থক এবং অনুগামীদেরও এ দিন দলে ফেরাল তৃণমূল। শুধু তাই নয়, কসবা পঞ্চায়েতের এক বিজেপি সদস্যা এবং তাঁর অনুগামীদের হাতেও তৃণমূলের দলীয় পতাকা তুলে দিলেন এলাকার নেতা নিমাই দাস। আর তার পরেই এত দিন বিক্ষুব্ধদের হাতে থাকা কসবা পঞ্চায়েত আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলের হাতে আসা কেবল সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অসুস্থতার কারণে হৃদয় অবশ্য এ দিনের সভায় যোগ দিতে পারেননি।

গত ১৬ অগস্ট পাড়ুইয়ের বাঁধ নবগ্রামে (নিহত সাগরবাবুর বাড়ি এই গ্রামেই) কর্মী-সমর্থকদের কথা বলে তৃণমূলে যোগ দেন সাগরবাবুর ছেলে হৃদয় ঘোষ এবং তাঁর সতীর্থ নিমাই দাস। তৃণমূলের বোলপুর কার্যালয়ে গিয়ে দলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের উপস্থিতিতে তাঁরা আনুষ্ঠানিক ভাবে শাসকদলে নামও লিখিয়েছিলেন।

Advertisement

এ দিন কসবায় সভা করে পঞ্চায়েতের বিজেপি সদস্যা, বিদ্যাধরপুরের কমলি কিস্কু এবং তাঁর শতাধিক অনুগামীদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন নিমাই। সভার শুরুর কিছু ক্ষণের মধ্যেই সভাস্থলে হাজির হন মুস্তফা। সভার তখনকার বক্তাকে থামিয়ে খানিকটা জবাবদিহির সুরেই মাইক হাতে নিয়ে এলাকার আর এক নেতা নারায়ণচন্দ্র ভাণ্ডারীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমাদের আমন্ত্রণে মুস্তফা ভাই সভায় এসেছেন। আমাদের মধ্যে এখন আর কোনও বিবাদ নেই, কোনও বিরোধ নেই।’’ উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের অনেককেই তখন চোখ চাওয়াচায়ি করতে দেখা যায়। অবশ্য সে দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মুস্তফাকে জড়িয়ে ধরে পাশের চেয়ারে বসিয়ে সভার বাকি কাজ চালিয়ে যান নিমাই। পরে সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুস্তফা বলেন, “নিমাই ভাইয়ের সঙ্গে আমি এলাকার একটি খুনের ঘটনায় জেল খেটেছি। ও আমার ভাই। ওর বাড়িতে ভাতও খেয়েছি। কিছু বিরোধ ছিল। মিটে গিয়েছে। আমরা সকলে তৃণমূলের সৈনিক। আমরা এক সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন যজ্ঞে সামিল হলাম।”

ঘটনা হল, সাম্প্রতিক অতীতে মুস্তফাকে এই এলাকায় বিশেষ দেখা যায়নি। হৃদয়-নিমাইয়ের দলবলের ভয়েই তিনি ওই এলাকায় পা মাড়াতেন বলে বিরোধীদের দাবি। তবে, এ দিন তাঁকে একাই কসবা এলাকায় আসতে দেখা যায়। পরে নিমাই বলেন, “খুব ভাল লাগছে শেখ মুস্তফা সভায় এসেছেন। বিজেপি সদস্য কমলি কিস্কু এবং তাঁর অনুগামীদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়েছি। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর পাড়ুই মাঠে কসবা পঞ্চায়েতের বিজেপি প্রধান-সহ বাকিরাও আমাদের দলে যোগ দেবেন।” গোটা সভায় বিজেপি জেলায় নেই দাবি জানিয়ে নিজেদের মধ্যে অতীতের সমস্ত বিবাদ আর বিভেদ ভুলে আগামী দিনে সিপিএমের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার কথা জানান উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের জানান বক্তারা।

গোটা বিষয়টিকে ‘টাকাপয়সার খেল’ হিসেবেই দেখছে বিজেপি আর সিপিএম। সব শুনে বিজেপি-র জেলা আহ্বায়ক অর্জুন সাহা বলছেন, “আর কত নাটক দেখব! বিধানসভা পর্যন্ত শুধু নাটকই করে যাবে ওরা। নিজেদেরই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দিয়ে দাবি করছে, বিজেপি থেকে না কি হাজার হাজার লোক ওদের দলে যোগ দিয়েছে। এক মাস আগেও ওরা একে অপরের বিরুদ্ধে কত তোপ দাগত। আজ গলায় গলায় কত ভাব!’’ টাকাপয়সা দিয়ে নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়া করে শাসকদল এই ‘নাটক’ করছে বলে অর্জুনবাবুর দাবি। এখন বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন, মুস্তফা কি তা হলে নির্দোষ? কোনও মন্তব্য করতে চাননি হৃদয়।

তবে, দলবদলের সময় বাবার খুনের নেপথ্যে সিপিএমের হাত দেখেছিলেন হৃদয়। যার প্রতিক্রিয়ায় সিপিএমের এক জেলা নেতা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘যদি সাগরবাবুর খুনে সিপিএমই জড়িত থাকে, তা হলে সিট-এর তদন্তে সন্তুষ্ট বলে জানিয়ে হৃদয়রা সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করলেন কোন যুক্তিতে?’’ উত্তরে নিশ্চুপ হৃদয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন