গন্ধ শুঁকে রোগ নির্ণয়।
সোমবার দুপুর। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সেমিনার রুম। চারপাশে ভিড় করে রয়েছেন বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ ও ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের গবেষক এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের চিকিৎসকেরা। তাঁদের সামনেই একের পর এক লোকের নিঃশ্বাসের গন্ধ শুঁকে তাঁরা ডায়াবেটিক কিনা তা নির্ণয় করে ফেলছে যন্ত্র!
আঙুলের ডগায় সূঁচ ফুটিয়ে রক্ত নিয়ে ডায়াবেটিসের পরীক্ষার বদলে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ডায়াবেটিস পরীক্ষার এই প্রক্রিয়ায় শুরু বছরখানেক আগে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগ ও ভারত সরকারের আওতাধীন ‘সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড অ্যাডভান্স কমপিউটিং’ (সি-ড্যাক) যৌথভাবে এই যন্ত্র তৈরি করেছে। এ ব্যাপারে মেডিক্যাল কলেজের এথিক্যাল কমিটি তাদের অনুমতি দেয় গত বছর ২৩ মার্চ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০১৬-র এপ্রিল থেকে চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত মেডিসিন বিভাগের আউটডোরে আসা ১ হাজার রোগীর নিঃশ্বাস পরীক্ষা করেছে এই ‘ইন্টেলিজেন্ট ডায়াবেটিক অলফ্যাক্টরি ডিভাইস’ বা ‘আই-ডল’ যন্ত্র। এ দিন চিকিৎসক-বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সামনে যন্ত্রের কাজ দেখানো হল।
আরও পড়ুন: ঘুম নেই তো শরীরও নেই
প্রকল্পের অন্যতম গবেষক অরুণাংশু তালুকদার জানালেন, প্রত্যেক রোগের এক এক রকম গন্ধ থাকে। মানুষের নাকে সবসময়ে ধরা পড়ে না। তবে চিকিৎসাশাস্ত্রেই রয়েছে, ফুসফুসে সংক্রমণ হলে রোগীর নিঃশ্বাস থেকে পচা মাংসের গন্ধ বার হয়। যকৃতে সংক্রমণ হলে তা হয় পচা বাঁধাকপির মতো। ডায়াবেটিসের রোগীর নিঃশ্বাসে মিষ্টি আপেল বা মিষ্টি ফলের গন্ধ বার হয়। সেই গন্ধই নতুন যন্ত্রে ধরা পড়ছে।
কলকাতার সি-ড্যাক সেন্টারের নবারুণ ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এই যন্ত্রে প্রতি তিন মিনিটে এক জনের শরীরে শর্করার পরিমাণ মাপা যাচ্ছে।’’ কিছু দিনের মধ্যেই সব সরকারি হাসপাতালে এই যন্ত্রের মাধ্যমে রোগীদের দেহে শর্করা মাপার কথা ভাবছে স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘এই যন্ত্রের সব দিক খতিয়ে দেখছি।’’