উরমা রেল স্টেশন। ছবি: সুজিত মাহাতো।
বোমা ফেটেছিল নাকি অন্য কিছু?
রবিবার রাতে পুরুলিয়ার উরমা স্টেশনের ঘটনা ঘিরে ক্রমেই দানা বাঁধছে রহস্য। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের আদ্রা ডিভিশনের উরমা স্টেশনের দক্ষিণ কেবিনের গেটম্যানেরা রবিবার গভীর রাতে বিস্ফোরণের মতো শব্দ শোনেন। কিন্তু সাহস করে তাঁরা বেরোতে পারেননি। কারণ, অতীতে এখানে বামপন্থী কর্মী খুন, লাইনে বিস্ফোরণ, স্টেশন ম্যানেজারকে অপহরণ-সহ নানা মাওবাদী হামলা হয়েছে।
রেল সূত্রে খবর, রবিবার রাতে ওই কেবিনে ডিউটিতে ছিলেন নিরঞ্জন মাহাতো ও রাধানাথ মাহাতো। নিরঞ্জনবাবুর কথায়, ‘‘হঠাৎই বিস্ফোরণের মতো শব্দ পেলাম। আমরা ভয়ে কেবিনের দরজা-জানলা বন্ধ করে দিই, আর বেরোইনি।’’ তাঁদের থেকে খবর পেয়ে উরমার স্টেশন ম্যানেজার রতন কেরকেট্টা ওই কেবিনে পৌঁছন। পুরুলিয়ায় রেলপুলিশকে সব জানান। খবর যায় বলরামপুর ও আড়শা থানাতেও। ঝুঁকি নিতে চাননি রেল কর্তৃপক্ষ। পুলিশ, আরপিএফ পৌঁছনোর আগেই ওই রেল লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
ঘটনাস্থলে যান পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার। তল্লাশিতে মালগাড়িকে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সন্দেহজনক কিছু না মেলায় দু’টি এক্সপ্রেস ট্রেনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ সুপার সোমবার বলেন, ‘‘এলাকায় তল্লাশি করে কিছুই পাওয়া যায়নি।’’ রাজ্য পুলিশের আইজি (পশ্চিমাঞ্চল) সিদ্ধিনাথ গুপ্ত বলেন, ‘‘বিস্ফোরণ হলে তার কিছু চিহ্ন থাকত। পুলিশের তল্লাশিকে সে রকম কিছুই মেলেনি। তবে আমরা সতর্ক রয়েছি। নজর রাখছি।’’
তবে রাতের ঘটনায় দুশ্চিন্তা বেড়েছে পুলিশ-প্রশাসনের। এলাকাটি বলরামপুর হওয়ায় উদ্বেগ আরও বেশি। জঙ্গলমহলে ফের মাওবাদীদের আনাগোনা নিয়ে সম্প্রতি বৈঠকে বসেছিল রাজ্যে সক্রিয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয় কমিটি। সেই বৈঠকে পেশ হওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি রিপোর্টে বলা হয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পুরুলিয়ার কয়েকটি স্থানে নিয়মিত মাওবাদী আনাগোনা শুরু করেছে। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, সরকারের কাজকর্মে জঙ্গলমহলের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাঁদেরই একাংশ এখন মাওবাদীদের দিকে ঝুঁকছে। বর্ষায় জঙ্গল ঘন হয়ে উঠলেই মাওবাদীদের তৎপরতা বাড়তে পারে। উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে জঙ্গলমহলের তিন জেলা বাঁকুড়া-পুরুলিয়া-পশ্চিম মেদিনীপুর।