তাস খেলা দেখতে ভিড় উৎসাহীদের। সোমবার, ডালহৌসিতে। নিজস্ব চিত্র
ফের ব্রিজ খেলা শুরু করলে কেমন হয়? এমনটাই মনে করছেন ওঁরা। ওঁরা মানে বিমানবন্দর এলাকার শুভায়ু মুখোপাধ্যায়, ব্যারাকপুরের রাহুল দত্ত বা শোভাবাজারের অচিন্ত্য রায়।
অফিস ছুটির পরে বন্ধুদের সঙ্গে ব্রিজ খেলতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে প্রায় কথা বন্ধ হতে বসেছিল শুভায়ুর। বাধ্য হয়ে সেই শখে দাঁড়ি টানতে হয় তাঁকে। ব্যারাকপুর থেকে লোকাল ট্রেনে কলকাতায় কর্মস্থলে আসার পথে ভিড়ের মধ্যেই তিন সহকর্মীর সঙ্গে তাস খেলতে মত্ত থাকতেন ব্যারাকপুরের রাহুল। ট্রেনে ভিড়ের মধ্যে তাস খেলায় কেউ কেউ বিরক্ত হতেন, অনেকে ব্যঙ্গ করতেন। নিরুপায় হয়ে ট্রেনে তাস খেলাই ছেড়ে দেন রাহুল ও তাঁর বন্ধুরা। সন্ধ্যায় শোভাবাজারের রোয়াকে বসে কম আলোয় তাস খেলতে গিয়ে চশমা নিতে হয়েছিল মধ্য চল্লিশের অচিন্ত্যকে। শেষে বাড়ির লোকের বকুনির চোটে বিদায় জানিয়েছেন তাসকে। সদ্য সমাপ্ত এশিয়াডে সেই ব্রিজ খেলাতেই দুই প্রবীণ বাঙালি সোনা জেতার পরে শুভায়ু-রাহুল-অচিন্ত্যদের আফসোস, সব বাধা উড়িয়ে যদি মন দিয়ে খেলাটা চালিয়ে যেতে পারতেন!
কলকাতার ওয়েস্ট বেঙ্গল ব্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের আশা, তাস খেলা মানেই সময় নষ্ট, সোনা জয়ের পরে সেই ধারণা হয়তো খানিকটা হলেও সিংহভাগ বাঙালির মন থেকে ঘুচবে। সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট কল্যাণ চৌধুরী বলছেন, ‘‘ভবানীপুর কার্ড ক্লাব, কলকাতা ইউনিয়ন ক্লাব— শহরে কত ভাল ভাল ব্রিজ খেলার ক্লাব ছিল। অধিকাংশই এখন স্পনসরের অভাবে ধুঁকছে। জাকার্তায় দুই বাঙালি সোনা জেতার পরে আশা করব, এ বার ব্রিজ খেলায় একটু জোয়ার আসবে।’’ যদিও কারও কারও মতে, এশিয়াডে দুই প্রবীণ সোনা জিতেছেন কনট্র্যাক্ট ব্রিজ খেলে। কিন্তু রামি, ফিশ, টোয়েন্টি নাইন বা তিনপাত্তির মতো খেলা যা পাড়ায় পাড়ায় দেখা যায়, তাস খেলার অতি উৎসাহে না সেগুলি আরও বেশি করে জাঁকিয়ে বসে!
ব্রিজপ্রেমীদের কথায়, একটা সময়ে কলকাতার ব্রিজ খেলোয়াড়েরা দল তৈরি করে দেশের বিভিন্ন শহরে ঘুরে এই খেলা খেলতেন। ভিন্ রাজ্যে গিয়ে ব্রিজ খেলেও পুরস্কার পেয়েছেন অনেকে। এখন আর সেই উন্মাদনা নেই। তাঁরা জানাচ্ছেন, সচিন তেন্ডুলকরের শ্বশুর আনন্দ মেটা নামী ব্রিজ খেলোয়াড়। তিনি মুম্বইয়ে প্রতি বছর একটি ব্রিজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। সেখানেও সাফল্যের সঙ্গে খেলে এসেছেন কলকাতার অনেক বাঙালি।
ব্রিজ দু’ধরনের হয়— অকশন ব্রিজ ও কনট্র্যাক্ট ব্রিজ। প্রতিযোগিতাগুলিতে সাধারণত খেলা হয় কনট্র্যাক্ট ব্রিজ। কল্যাণবাবু বলেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের স্মৃতিশক্তি ও মনোযোগ বাড়ানোর জন্য ইউরোপ ও আমেরিকার বেশ কিছু স্কুলে কনট্র্যাক্ট ব্রিজ শেখানো হয়। এ শহরের স্কুলগুলিতেও কনট্র্যাক্ট ব্রিজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে অনেক ভাল খেলোয়াড় উঠে আসতে পারে।’’ তাঁর মতে, ময়দানে বেশ কিছু ক্লাবের তাঁবু এমনিই পড়ে আছে। সেগুলিতে যাতে নিয়মিত ব্রিজ খেলার ব্যবস্থা করা যায়, সে ব্যাপারে সরকারেরও উদ্যোগী হওয়া উচিত।