taliban

Taliban: ‘বারণ শোনেনি, কাবুলে ফিরেই খুন হয় দিদি’

নয় নয় করে কেটে গিয়েছে আট-আটটা বছর। তবু পরিবর্তিত পরিস্থিতি টেনে আনে সুস্মিতার স্মৃতি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২১ ০৭:০৯
Share:

সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

‘‘আর ফিরে যাস না। তালিবান কি কখনও শোধরাতে পারে? আফগানিস্তানে কি কখনও মেয়েদের অবস্থা ভাল হতে পারে?’’— দিদিকে বলেছিলেন ভাই। দিদি শোনেননি। এক রকম জোর করেই চলে গিয়েছিলেন আফগানিস্তানে। এবং যাওয়ার কয়েক মাস পরেই খুন হয়ে যান তিনি। ভাইয়ের অভিযোগ, তালিবানই তাঁর দিদিকে বাড়ি থেকে রাতের অন্ধকারে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল।

Advertisement

বুধবার বাগুইআটি জোড়ামন্দিরের নিজের অফিসে ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ’-এর লেখিকা সুস্মিতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, “আফগানিস্তানের এই অশান্ত পরিবেশ, কাবুল বিমানবন্দরে অসহায় মানুষের বিমানে চাপার আকুতি দেখে বার বার মনে পড়ছে দিদির কথা। বার বার ওকে বারণ করেছিলাম। বলেছিলাম, তোর মতো স্বাধীনচেতা মেয়েকে তালিবান কিন্তু ছাড়বে না। আমার মনে কু ডাকছে। যাস না।”

নয় নয় করে কেটে গিয়েছে আট-আটটা বছর। তবু পরিবর্তিত পরিস্থিতি টেনে আনে সুস্মিতার স্মৃতি। এখন আর আফগানিস্তানের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই গোপালের। সুস্মিতার স্বামী জানবাজ খানও ফিরে গিয়েছেন নিজের শহর কাবুলে। কয়েক বছর ধরে তাঁর সঙ্গেও কোনও যোগাযোগ নেই। তবু আফগানিস্তানের বর্তমান উপদ্রুত পরিস্থিতিতে জানবাজের কথাই মনে পড়ছে গোপালের।

Advertisement

গোপাল জানান, আফগানিস্তানের বাসিন্দা, কাবুলিওয়ালা জানবাজকে তাঁর দিদি বিয়ে করেছিলেন ১৯৮৮ সালে। জানবাজের হাত ধরে সুস্মিতা চলে গিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়ি, কাবুল থেকে ১৮ ঘণ্টার পথ পেরিয়ে গজনি এলাকার শারনা শহরে। আফগানিস্তানের একটি হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীর কাজ করতেন সুস্মিতা। সেখানে তিনি নিজের চোখে দেখেছিলেন তালিবানের উত্থান ও অত্যাচার। ১৯৯৫ সালে শ্বশুরবাড়ি থেকে পাকিস্তান পর্যন্ত পালিয়ে গিয়েও ধরা পড়ায় তাঁকে ফিরতে হয় পতিগৃহে। কয়েক দিন পরে রাতের অন্ধকারে বাড়ির পাঁচিলে সুড়ঙ্গ
কেটে কোনও ভাবে পালিয়ে যান সুস্মিতা। ফের পড়েন তালিবানের মুখে। সেখান থেকে পালিয়ে কোনও রকমে দিল্লি পৌঁছে যান। কলকাতায় পৌঁছে তাঁর এই সব অভিজ্ঞতা নিয়েই লেখেন বই ‘কাবুলিওয়ালার বাঙালি বউ’। তাঁর এই অভিজ্ঞতা নিয়ে হিন্দি ছবিও হয়েছিল ‘এসকেপ ফ্রম তালিবান’।

গোপাল জানান, কলকাতায় সবই তো ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে কেন যে ফের কাবুলে যাওয়ার ভূত চাপল সুস্মিতার মাথায়! গোপাল বলেন, “দিদি তখন বার বার বলছিল, এখন নাকি আফগানিস্তানের পরিস্থিতি আগের থেকে ভাল হয়েছে। মেয়েদের অবস্থার কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে।”

ভাইয়ের অভিযোগ, তাঁর দিদি যে-সব কথা লিখেছিলেন এবং সেই বৃত্তান্ত নিয়ে পরে যে-হেতু ছবি হয়েছিল, তার শোধ তুলতেই ২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর সুস্মিতাকে খুন করে তালিবান। “দিদির দেহটাও দেশে আনতে পারিনি। তার আগেই ওরা কবর দিয়ে দেয়,” বলেন গোপাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন