মায়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের এ দেশে ঢুকতে না দেওয়ার নীতি ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সীমান্ত রাজ্যগুলিকে সতর্ক করে রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনে ‘পুশব্যাক’ করার নির্দেশও জারি করেছে দিল্লি। সেই নির্দেশ মেনে গত ১২ অক্টোবর স্বরূপনগর সীমান্তে ১৬ জন রোহিঙ্গার একটি দলকে ‘পুশব্যাক’ করেছে বিএসএফ। সেই দলে ৯ জন শিশু ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত সেই রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুরা ফের অন্য পথে ভারতে ঢুকে পড়েছে কি না তা অবশ্য বিএসএফ বা অন্য নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির অজানা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, গত ১০ অক্টোবর উত্তর ২৪ পরগনার পানিতার এলাকা দিয়ে ১৬ জনের ওই দলটি এ দেশে ঢোকার চেষ্টা করতে থাকে। দলে ৭ জন পুরুষ এবং ৯ জন মহিলা ছিল। তাদের মধ্যে আবার ৯ জনের বয়স ২ থেকে ৪ বছরের মধ্যে। সে দিনই তাদের পানিতার থেকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপিও রোহিঙ্গাদের সে দেশ থেকে আবার এ দিকে পাঠিয়ে দেয়। নো ম্যানস ল্যান্ডে দু’এক দিন থেকে তারা বারবার বিভিন্ন এলাকা দিয়ে ফের ঢুকে পড়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বিএসএফ তাদের উপর নজর রাখছিল। ১২ অক্টোবর দেখা যায় স্বরূপনগরের গুণরাজপুর এলাকা দিয়ে তারা ফের ঢুকে পড়ে। বিএসএস তাদের আবার গ্রেফতার করে দ্বিতীয়বার ‘পুশব্যাক’ করে দেয়। তার পর থেকে ওই দলটির আর কোনও খোঁজ মেলেনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘অগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে হায়দরাবাদে এক রোহিঙ্গা ধরা পড়েছিল। সে-ও পশ্চিমবঙ্গ সীমান্ত দিয়েই ভারতে এসেছিল। জেরায় জানা গিয়েছিল, অসম বা বাংলা সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গারা ঢুকে হায়দরাবাদ বা জম্মুতে চলে যাওয়ার চেষ্টা করে।’’ অগস্ট মাসে রাখাইনে মায়ানমার সেনা অভিযানে প্রায় ৬ লক্ষ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু নতুন করে ঘরছাড়া হয়েছে। তাদের সকলেই প্রায় বাংলাদেশের কক্সবাজার এলাকায় অস্থায়ী ঘাঁটি গেড়েছে। ভারতের আশঙ্কা বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে এ দেশেও ঢুকতে পারে রোহিঙ্গাদের একাংশ। সরকারি হিসাবে এখন দেশে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছে। তাদের সিংহভাগের ঠিকানা জম্মু।
স্বরাষ্ট্র কর্তারা জানাচ্ছেন, ১০-১২ অক্টোবর ৭-৮ জন রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু নেতা নেপালের বীরতামোড়ে কয়েক জন ধর্মীয় নেতার সঙ্গে দেখা করে। নেপালের আরও কয়েকটি স্থানেও তারা যায়। ২৩ সেপ্টেম্বর নেপালের রক্সৌল-বীরগঞ্জ সীমান্তেও কয়েক জন রোহিঙ্গা ধরা পড়ে। রোহিঙ্গাদের নতুন পথের সন্ধান পেয়ে নয়াদিল্লি নেপালকেও সতর্ক করে। নেপাল সরকার ভারত সীমান্তের ঝাপা, মোরাং, সনসারি, ইলম, বীরগঞ্জেও বিশেষ নজরদারি শুরু করেছে।
একই নজরদারি চালাচ্ছিল বিএসএফও। সেই সময়ই ধরা পড়ে ১৬ জনের দলটি। যাদের পুশব্যাক করা হয়েছে। রাজ্যের হোমগুলিতে অবশ্য এখনও জনা চল্লিশ রোহিঙ্গা মহিলা ও শিশু রয়েছে। মাঝেমধ্যেই তাদের বিক্ষোভে জেরবার হতে হচ্ছে প্রশাসনকে। তবে ভারত সরকার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের জন্য ৩০০০ টন ত্রাণ সামগ্রী পাঠালেও এ দেশে তাদের আশ্রয়ের প্রশ্নে কঠোর নীতিই বজায় রাখছে।