ভাঁওতা দিয়ে বাঁচার মরিয়া চেষ্টা: মমতা

এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটকে বিজেপি সরকারের ‘মরার আগে মরিয়া চেষ্টা’ বলে বর্ণনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা 

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০২:২৯
Share:

কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। শুক্রবার বিধানসভায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

এ বারের কেন্দ্রীয় বাজেটকে বিজেপি সরকারের ‘মরার আগে মরিয়া চেষ্টা’ বলে বর্ণনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুরোটাই ভাঁওতা। এদের মেয়াদ তো আর একমাস। কী ভাবে এবং কখন এই বাজেট বাস্তবায়িত হবে? দেশের আর্থিক অবস্থা কেমন, তা কেউ জানে না! কোথা থেকে টাকা আসবে? পরে নতুন সরকার এসে সব খতিয়ে দেখবে। তাই এখন এই বাজেট পেশের কোনও নৈতিক এক্তিয়ার নেই।’’

Advertisement

শুক্রবারই রাজ্য বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন শুরু হয়। রাজ্যপালের ভাষণের পরে সভা মুলতবি হলে মমতা কেন্দ্রীয় বাজেটের প্রতিক্রিয়া জানাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সঙ্গে ছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়ায় নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কটাক্ষ ছিল তীব্র। তিনি বলেন, ‘‘এই বাজেট দেখে মনে হচ্ছে যেন রোগীর মৃত্যুর পরে ডাক্তার ডাকা হয়েছে!’’ বিজেপি যে ক্ষমতায় ফিরবে না, সে ব্যাপারে নিশ্চিত দাবি করে মমতা বলেন, ‘‘যে সরকার কার্যত মৃত, তাদের এখন এই রকম পূর্ণাঙ্গ বাজেট দেওয়ার অর্থ কী? এই সময়ে ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করাই উচিত ছিল। পরে নতুন সরকার এসে দেশের অর্থনৈতিক হাল বিবেচনা করে পূর্ণাঙ্গ বাজেট করত।’’ এই সূত্রেই মমতার মন্তব্য, ‘‘আয়করের উর্ধসীমা বাড়ানোর মতো অনেক চমকপ্রদ ঘোষণা বাজেটে আছে। শুনতে ভাল। কার্যকর হলে খুশি হব। কিন্তু কার্যকর হবে কী করে, তা নির্ভর করছে দেশের আর্থিক পরিস্থিতির উপর।’’

তিনি বলেন, ‘‘ওরা ক্ষমতায় ফিরবে না জেনেই মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। গরিব মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হয়েছে। ১০০ দিনের কাজে মানুষ টাকা পাচ্ছে না। কর্মসংস্থানে বরাদ্দ কমেছে। এই সরকারের আমলে ২কোটি চাকরি হয়নি। তফসিলিদের জন্য, শিল্পের জন্য বরাদ্দ কমেছে।’’

Advertisement

কৃষকদের বার্ষিক শস্য বিমার যে ঘোষণা কেন্দ্র এ দিন করেছে, তা পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্পের ‘নকল’ বলে মমতার অভিযোগ। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কৃষি বিমার প্রিমিয়াম নিজেরা দিয়ে দিচ্ছি। কেন্দ্রের টাকা নিচ্ছি না। একর প্রতি পাঁচ হাজার টাকা শস্যবিমাও দিচ্ছি। সেটা নকল করে কেন্দ্র দুই একর পিছু ছ’হাজার টাকা করে দেবে বলছে। এত দিন মনে ছিল না এই ধরনের প্রকল্পের কথা! আগে যদি কেন্দ্র এ ধরনের প্রকল্প করত, তা হলে খুশি হতাম।’’

কেন্দ্রীয় বাজেটের সমালোচনা করতে গিয়ে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র দাবি করেন, ‘‘৫৯ মিনিটের মধ্যে ক্ষুদ্র শিল্প প্রকল্পে ঋণ পাওয়া যাবে বলে যা বলা হয়েছে, তা কী ভাবে সম্ভব? এটাই এই সরকারের সবথেকে বড় কেলেঙ্কারি হবে! যাদের উপকারের কথা বোঝানো হচ্ছে, তা আদতে হবে না। আসলে গুজরাতের একটি সংস্থাকে পাইয়ে দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে এর মাধ্যমে। সেই সংস্থা এক বছরের এবং প্রথম বছরে তারা ক্ষতি দেখিয়েছে ৩৮ হাজার টাকা। এমন একটি সংস্থাকে নাগরিকদের ব্যক্তিগত সব তথ্য তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হল কেন? এই কেলেঙ্কারি নজিরবিহীন।’’

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রও এই বাজেটের বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘অন্তর্বর্তী বাজেটের নামে যা হয়েছে, তা নির্বাচনী ইস্তাহার। লোকসভা ভোটের আগে মোদী সরকারের এই সব প্রতিশ্রুতি পালনের জন্য অর্থের সংস্থানের দিশা নেই। কেন্দ্রের রাজস্ব আয়ে ঘাটতি থাকায় রাজ্যেও তার প্রভাব পড়বে।’’ বামেদের দাবি, দেশ জুড়ে কৃষক আন্দোলন এবং সাম্প্রতিক সাধারণ ধর্মঘটের চাপে মোদী সরকার মুখে হলেও কৃষকদের জন্য আর্থিক সাহায্য এবং অসংগঠিত শ্রমিকদের পেনশন ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন