‘শতবর্ষের পুরস্কার নয়, হল বিদায়’

২০১৮-র এপ্রিলে কারখানা বন্ধের বিজ্ঞপ্তি পড়ে। ওই বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে সঙ্গে কারখানার শ্রমিক-কর্মীদের ভবিষ্যৎও ঠিক হয়ে যায়। এক সময়ের দক্ষ শ্রমিকের পরিচয় হয়, বন্ধ কারখানার শ্রমিক হিসেবে। তবে ওই বিজ্ঞপ্তির পরে গত চার মাস আনাগোনা বন্ধ হয়নি শ্রমিক-কর্মীদের

Advertisement

সুশান্ত বণিক

বার্নপুর শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫৫
Share:

পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হল বার্নপুর বার্ন স্ট্যান্ডার্ডে। ফলে, কারখানার সঙ্গে সব সম্পর্ক একরকম চুকল, মনে করছেন শ্রমিকেরা। ছবি: পাপন চৌধুরী

কারখানা বন্ধের বিজ্ঞপ্তি ঝুলে গিয়েছিল কয়েক মাস আগেই। তার পরে এই দিনটা আসবে, তা জানা ছিল শ্রমিক-কর্মী, সকলেরই। শেষমেশ শুক্রবার স্থায়ী শ্রমিকদের পাওনা মেটানোর সঙ্গে সঙ্গেই শ্রমিক-শূন্য হল বার্ন স্ট্যান্ডার্ডের বার্নপুর কারখানা। আর তা হল, কারখানা শতবর্ষ পেরনোর পরের বছরেই।

Advertisement

২০১৮-র এপ্রিলে কারখানা বন্ধের বিজ্ঞপ্তি পড়ে। ওই বিজ্ঞপ্তির সঙ্গে সঙ্গে কারখানার শ্রমিক-কর্মীদের ভবিষ্যৎও ঠিক হয়ে যায়। এক সময়ের দক্ষ শ্রমিকের পরিচয় হয়, বন্ধ কারখানার শ্রমিক হিসেবে। তবে ওই বিজ্ঞপ্তির পরে গত চার মাস আনাগোনা বন্ধ হয়নি শ্রমিক-কর্মীদের। তবে তা আর অতীতের মতো কাজ করতে নয়, পাওনা-গণ্ডা বুঝে নিতে। শুক্রবার সমস্ত শ্রমিক কর্মীর হাতে শেষ পাওনা তুলে দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

তবে যার সঙ্গে এত দিনের ঘরবসত, সেই কারখানার গেটে শেষ বার দাঁড়িয়েও শোনা গিয়েছে শ্রমিকদের আক্ষেপ, হতাশা। দিলবাগ সিংহ নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘‘১৯১৮ সালে তৈরি কারখানার শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আমাদের পুরস্কার পাওয়ার কথা ছিল এ বছর। কিন্তু পুরস্কার নয়, হল কারখানা থেকে চিক বিদায়।’’ পাওনার সমস্যা যে পুরোপুরি মিটল, এমনটা মনে করছেন না শ্রমিকেরা। কারণ কারখানার ১৫০ ঠিকা শ্রমিক বা অস্থায়ী কর্মীরা টাকাপয়সা পাননি। গোপাল বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক ঠিকাকর্মীর কথায়, ‘‘গত ১২ জুলাই আমাদের কাজ শেষ হয়েছে। এই কয়েক দিন সময় পেলেই কারখানার গেটে গিয়েছি। ভেবেছি, যদি কখনও কারখানা খোলে তবে ভিতরে কাজ করতে ঢুকব। কিন্তু এ দিনের পরে সব আশা শেষ। এখন পেট চালাতে দিনমজুরি করতে হচ্ছে।’’

Advertisement

হাতাশার সুর সংস্থার আবাসন এলাকাতেও। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবাসন এলাকায় জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহ দেবে সংস্থা। তার পরেই কেটে দেওয়া হবে জল, বিদ্যুতের সংযোগ। শ্রমিকেরা অবশ্য আর্জি জানাচ্ছেন পুজোর মরসুম পর্যন্ত আবাসন এলাকায় জল ও বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য। এই পরিস্থিতিতে আবাসন-‘ভিটে’ হারিয়ে কোথায় ঠাঁই হবে জানেন না আবাসনের বর্তমান বাসিন্দারা। তেমনই এক জন, দশম শ্রেণির ছাত্রী দোলা সেনগুপ্ত বলে, ‘‘সামনের ফেব্রুয়ারিতে মাধ্যমিক পরীক্ষা। বাবার চাকরি চলে গিয়েছে। এর পরে আবাসন ছাড়়তে হবে। পরীক্ষার মুখে এত সব সামলে পড়াশোনা চালানোটাই সমস্যার।’’ যদিও সংস্থার বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী মুকবিন্দর সিংহ জানান, কারখানার বিদ্যুৎ সরবরাহ এখনই ছিন্ন হচ্ছে না।

এই পরিস্থিতিতে শহরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোরও। আসানসোলের সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে বলেছিলেন, ‘‘লোকসানে চলা সংস্থার পিছনে জনগণের টাকা ব্যয় না করে সেটি বন্ধ করা কেন্দ্রের সাহসী পদক্ষেপ।’’ এ দিন সেই মন্তব্য নিয়েও সরব হয়েছেন শ্রমিক-কর্মীদের একাংশ। তবে বিএমএস নেতা অনিল সিংহের কথায়, ‘‘আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু বাঁচানো গেল না কারখানা।’’ আইএনটিইউসি নেতা হরজিৎ সিংহের দাবি, ‘‘ইউপিএ জামানায় কারখানার অবস্থা ভাল হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি এই কারখানার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিল।’’ কেন্দ্রীয় সরকারের শিল্পনীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিটু নেতা বংশগোপাল চৌধুরী, তৃণমূলের জেলা সভাপতি ভি শিবদাসনেরাও।

একটা সময় আবাসন চত্বরে নিয়মিত আড্ডা, অনুষ্ঠান, সবই হতো। তবে এখন সে সবই অতীত। এ বার কী কারখানার বিশ্বকর্মা পুজোটা হবে? শ্রমিকদের একাংশ জানিয়ে দিলেন, কারখানায় ঢোকার রাস্তাটাই তো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবুও তাঁরা আশা ছাড়ছেন না, যদি পুজোটা করা যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন