শুনতে পেলাম পোস্তা নেই পোস্তাতেই

পোস্তা গিয়ে এখন আর পরিচিতের মেয়ের বিয়ের খবরই বিশেষ পাওয়া যাচ্ছে না। গঙ্গারামকে পাত্র হিসেবে খাড়া করা তো দূরের কথা! পোস্তা জুড়ে এখন শুধু মালপত্র কম আসার আক্ষেপ আর আফসোস। মালপত্র মানে যে-সব জিনিস ছাড়া হেঁশেলের উনুনে হাঁড়ি-কড়া উঠবে না।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:২৩
Share:

মালপত্র কিছু আছে। পোস্তায় নেই শুধু খদ্দের। — নিজস্ব চিত্র

পোস্তা গিয়ে এখন আর পরিচিতের মেয়ের বিয়ের খবরই বিশেষ পাওয়া যাচ্ছে না। গঙ্গারামকে পাত্র হিসেবে খাড়া করা তো দূরের কথা! পোস্তা জুড়ে এখন শুধু মালপত্র কম আসার আক্ষেপ আর আফসোস। মালপত্র মানে যে-সব জিনিস ছাড়া হেঁশেলের উনুনে হাঁড়ি-কড়া উঠবে না। আটা, ময়দা, ডাল, তেল, জিরে, পোস্ত, হরেক কিসিমের মশলা...।

Advertisement

পাঁচশো আর হাজার টাকার পুরনো নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে ২৫টা দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু পঁচিশ দিন আগেকার সেই পোস্তা এখন কোথায়? কোথায় সেই সদাব্যস্ত ভিড়? কোথায় এলোমেলো যানজট? শ্রমিকদের হাঁকডাক, বিক্রেতা-খদ্দেরের দরাদরি ভোজবাজির মতো উধাও! পোস্তা এখন যেন সেই পোস্তার কঙ্কাল!!

কী করছেন পোস্তার কুশীলবেরা?

Advertisement

ব্যবসায়ী-দোকানদার এবং তাঁদের কর্মীরা ঝিমোচ্ছেন। মুটে-মজদুরেরা ঘুমোচ্ছেন। গদির পর গদি সুনসান। কাজ কোথায়? স্ট্র্যান্ড রোডের যেখানে আগে লরি, ছোট ট্রাকের জটে পায়ে হাঁটাও দুষ্কর হয়ে পড়ত, সেখানে শনিবার হাতে গোনা ছ’টি মাত্র লরি। পণ্যবাহী লরি যেমন ভর্তি হয়ে ভিন্‌ রাজ্য থেকে পোস্তায় ঢোকে, তেমনই পোস্তা থেকে মালপত্র বোঝাই হয়ে লরি যায় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু নোট বাতিলের ধাক্কায় সেই নিরন্তর যাতায়াত মাথায় উঠেছে। পোস্তার বেশির ভাগ ব্যবসা হয় নগদে। সেই নগদ-লক্ষ্মী নির্দয় হওয়ায় পণ্যের জোগান কম। খদ্দেরের স্রোতে ভাটা। ব্যবসায়ীদের মুখ চুন, কপালে ভাঁজ।

এমনিতে মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান থেকে নানা ধরনের ডালশস্য নিয়ে রোজ গড়ে ৫০টি লরি ঢোকে পোস্তায়। প্রতিটি লরিতে থাকে ২০ টন ডাল। মূল্য প্রায় ১৬ লক্ষ টাকা। এখন সেই জায়গায় মেরেকেটে ঢুকছে ১৫টি লরি। অর্থাৎ সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার ডাল কম ঢুকছে রোজ। ডাল নিয়ে টানাটানি চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। নোটের চোট সেই সঙ্কট বাড়িয়ে চলেছে। উপভোক্তারা সমস্যায়।

একই ভাবে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ থেকে রোজ ১৫০ লরি বোঝাই হয়ে ভোজ্য তেল ঢুকত পোস্তায়। এখন সেই লরির সংখ্যা কমে হয়েছে ৫০। প্রতিটি লরিতে থাকে ১০ টন তেল। যার দাম প্রায় সাত লক্ষ টাকা। বিহার, উত্তরপ্রদেশ থেকে রোজ ৫০ লরি আটা ও ময়দা পোস্তায় ঢুকত। এক-একটি লরিতে থাকত ২০ টন পণ্য। যার দাম প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। সেই লরির সংখ্যা কমে হয়েছে ১৫।

পোস্তা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ অগ্রবাল জানান, ভিন্‌ রাজ্যে লরিতে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা। তার আগে কৃষকদের কাছ থেকে নগদে কাঁচামাল কিনে মজুত করতে থাকেন তাঁরা। এখন সেই পণ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়াটাই ব্যাহত হচ্ছে ভীষণ ভাবে। কারণ এখন নগদ টাকারই বেজায় অভাব। তাই ওই ব্যবসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে কাঁচামাল কিনতে পারছেন না, লরিতে মালপত্র তোলার মজুরিও দিতে পারছেন না মুটেদের। সাধারণ ভাবে প্রতিদিন পোস্তায় যত লরি আসার কথা, এখন তা মোটেই আসছে না। কিংবা যে-ক’টি আসছে, মহানগরী-সহ তামাম বাংলার প্রয়োজন মেটানোর পক্ষে তা যথেষ্ট নয়।

তবে পণ্য-সঙ্কট এখনও তেমন তৈরি হয়নি। কারণ, প্রথমত, এই ধরনের পণ্য তাড়াতাড়ি নষ্ট হয় না বলে কিছুটা মজুত করা আছে। সেই মজুত পণ্যও অবশ্য স্বাভাবিক চাহিদা অনুসারে বিক্রি হচ্ছে না। নোট-সঙ্কটই তার কারণ। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন জেলার যে-সব ব্যবসায়ী পোস্তার পাইকারি ক্রেতা, তাঁদের অনেকেই নগদ-সঙ্কটে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কেনাকাটা কমিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

‘‘আগে মাসের শুরুতে পোস্তায় অন্তত ৪০ হাজার টাকার কেনাকাটা করতে আসতাম। কিন্তু এ বার কুড়ি হাজার টাকা নিয়ে বাজারে এসেছি,’’ হতাশ গলায় বললেন উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদের মুদি-দোকানের মালিক খোকন গাজি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন