ধৃত পরিচারক নির্মল সিংহ।
ইংরেজবাজারের ব্যবসায়ী রামরতন অগ্রবাল, তাঁর স্ত্রী ও পরিচারককে খুনের অভিযোগে ওই পরিবারের পুরনো কাজের লোককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। রবিবার রাতে পুরাতন মালদহের মালিগ্রাম থেকে ধৃত ওই ২৮ বছর বয়সী ওই যুবকের নাম নির্মল সিংহ। তার বাড়ির থেকে ২ কিলোমিটার দূরে একটি কচুবন থেকে উদ্ধার হয়েছে লুঠ হওয়া প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার সোনার গয়না। আদতে কাটিহারের বাসিন্দা নির্মল বেশ কিছুদিন ধরে মালিগ্রামের বাসিন্দা। তিনি রামরতনবাবুর বাড়িতে দীর্ঘ দিন পরিচারকের কাজ করেছেন। কিন্তু, চুরির দায়ে দুবার তাঁকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রথমবার ছাড়ানোর পরে রামরতনবাবুর স্ত্রী মঞ্জু দেবীর অনুরোধে নির্মলকে কাজে রাখা হয়। পরে ফের চুরি করায় তাঁকে মাস তিনেক আগে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়। এর পরেই রাতারাতি ধনী হওয়ার লোভে ওই পরিবারের গয়না, টাকা হাতাতে নির্মল খুনের ছক কষে বলে পুলিশের সন্দেহ।
জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, ঠাণ্ডা মাথায় তিন জনকে খুনের পরে দেহগুলি চাদর দিয়ে ঢেকে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে ঘরের আলমারি, ড্রয়ার খুলে প্রায় আড়াই কেডি সোনার গয়না নেয় নির্মল। মঞ্জু দেবীর শরীরের গয়না অধিকাংশ যে নকল সোনার সেটা নির্মল জানত বলেই তা নেয়নি। ওই পুলিশ কর্তা জানান, ধৃত জেরার মুখে সবই কবুল করেছে। ধৃতকে সোমবার মালদহের এসিজেএমের এজলাসে তোলা হয়. আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, বিচারক ধৃতকে ... দিনের জন্য পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে শহরের বিবেকানন্দ পল্লিতে নিজের বাড়িতেই এক পরিচারক সহ সস্ত্রীক খুন হন রামরতনবাবু। পরদিন সকালে বিষয়টি জানাজানি হয়. একই বাড়িতে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটায় শহর জুড়ে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এর পাশাপাশি ক্ষোভও ছড়ায়। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে। শহরে ৪৮ ঘন্টার ব্যবসা বনধেরও ডাক দেওয়া হয়। খুনের ঘটনার কিনারা হওয়ার পরে সকলেই কিছুটা হলেও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন।
আরও পড়ুন: মমতার কথাতেও নড়েনি টনক, দার্জিলিঙে বহুতল ধসে মৃত ৭
পুলিশ জানিয়েছে, খুনের ঘটনার তদন্তে নেমে ঘটনাস্থলের লাগোয়া একটি বাড়ির বাইরে লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশ পায়। সেখানে চাদর মুড়ি দিয়ে এক ব্যক্তিকে রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ রামরতনবাবুর বাড়ির গেটে দেখা যায়। সে সময় ওই ব্যক্তি ঢোকেনি। দ্বিতীয় দফায় সওয়া ১১টা নাগাদ ওই ব্যক্তিকে গেট দিয়ে ঢুকতে দেখা যায়। এর পরেই পুলিশ তদন্তে নেমে রামরতনবাবুর ইটভাটার দুই শ্রমিককে জেরা করে। ইতিমধ্যে পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে নির্মলের হদিস পায় পুলিশ। পুলিশ নির্মলকে ঢেকে জেরা করে। সে সময়ে নির্মলের মাথা ন্যাড়া দেখে পুলিশের সন্দেহ বাড়ে। পুলিশ জানতে পারে, নির্মল শুক্রবার মাথা ন্যাড়া করেছে। পুলিশ ঘটনার পুনর্মাণের জন্য নির্মলকে বাড়ির গেটে নিয়ে যায়। সিসি ক্যামেরায় তা রেকর্ড করে আগের ফুটেজে পাওয়া ব্যক্তির চলাফেরার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে। এর পরে নির্মলের স্ত্রী, মাকে পুলিশ জেরা করে জানতে পারে, ঘটনার রাতে নির্মল রাত ১০টা থেকে আড়াইটে পর্যন্ত বাড়িতে ছিল না। সেই রাতে বাড়ি থেকে ২ কিলোমিটার দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতেও নির্মল গিয়েছিল বলে জানতে পারে। লাগাতার জেরার মুখে নির্মল ভেঙে পড়ে খুনের কথা কবুল করে। পরে পুলিশ গিয়ে গয়না উদ্ধার করে।
পুলিশ জানায়, নির্মল গেট খুলে ঢুকে প্রথমে ৫৫ বছর বয়সী পরিচারক গমেশ রামের মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করে। এর পরে চপার দিয়ে গলার নলি কেটে খুন করে তাঁকে। শব্দ শুনে মঞ্জু দেবী দোতলা থেকে নেমে এলে তাঁকেও একই ভাবে খুন করে সে। কিছুক্ষণ পরে কাজ সেরে রামরতনবাবু বাড়ি ফেরেন। তখন দরজা খুলে আড়ালে দাঁড়িয়ে একই কায়দায় তাঁকে খুন করে বলে পুলিশের দাবি।