সিএজি রিপোর্টে সময়ে ট্রেন চালানোয় জোর।
এক লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে গোটা দেশের রেল স্টেশন উন্নয়নের পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিল সিএজি-র সাম্প্রতিকতম রিপোর্ট।
রেলের প্রথম ও প্রধান দু’টি কাজ হল সময়সূচি মেনে ট্রেন চালানো আর যাত্রী-সুরক্ষা। এই বিষয়ে রেলের প্রাক্তন ও বর্তমান কর্তা বা বিশেষজ্ঞ এবং যাত্রিসাধারণের মধ্যে মতভেদ নেই। আর সেই মূল ও প্রাথমিক কাজে রেলের ঘাটতি বিষয়টিই তুলে ধরা হয়েছে কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)-এর রিপোর্টে।
সম্প্রতি প্রকাশিত ওই রিপোর্টে অভিযোগ করা হয়েছে, স্টেশন ভবনের বাহ্যিক সাজসজ্জা নিয়ে রেল মন্ত্রক যতটা চিন্তিত, সময় মেনে ট্রেন চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে ততটা নয়। সময়ে ট্রেন চালানোর জন্য বিভিন্ন স্টেশনে সাধারণ পরিকাঠামোর অভাব কেন, তোলা হয়েছে সেই প্রশ্নও। রেলকর্তাদের একাংশ সিএজি-র অভিযোগ অস্বীকার তো করছেনই না। বরং সিএজি-র সুরেই প্রশ্ন তুলছেন পরিষেবা নিয়ে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক কর্তা বলেন, “সময়ে ট্রেন চালাতে না-পারলে স্টেশন সাজিয়ে কী হবে? গত তিন বছরের মধ্যে ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে সময়ানুবর্তিতায় সব চেয়ে খারাপ ফল হয়েছে রেলের।”
সিএজি-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, সারা দেশে তথাকথিত প্রথম সারির অনেক স্টেশনের সব প্ল্যাটফর্মে ২৪ কামরার মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন দাঁড়ানোর পরিকাঠামো নেই। অনেক ক্ষেত্রেই প্ল্যাটফর্মের মাপ ছোট। ২৪ কামরার ট্রেন থামার মতো দীর্ঘ প্ল্যাটফর্মের সংখ্যা খুবই কম। ফলে উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম খালি পাওয়ার জন্য ওই ধরনের অনেক ট্রেনকে স্টেশনে ঢোকার মুখে অপেক্ষা করতে হয়।
যাত্রাশেষে ট্রেন সাফাইয়ে দায়সারা মনোভাব ছাড়াও দু’টি যাত্রার অন্তর্বর্তী সময়ে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় ‘স্টেবেলিং’ লাইনের অভাব আছে বলেও জানাচ্ছে সিএজি-র রিপোর্ট। তার ফলে প্ল্যাটফর্মে ঢুকতে-বেরোতে সময় নষ্ট হয় বেশির ভাগ ট্রেনের।
সিএজি-র তরফে সম্প্রতি পটনা, মোগলসরাই, নয়াদিল্লি, কানপুর, ইলাহাবাদ, মথুরা, হাওড়া, জয়পুর, ভোপাল, আমদাবাদ, চেন্নাই, বিজয়ওয়াড়া-সহ ১৫টি স্টেশনে সমীক্ষা চালানো হয়। তাতে দেখা যায়, ওই সব স্টেশন দিয়ে ২৬৪৯টি ট্রেন যাতায়াত করে। কিন্তু ১৬৪টি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে মাত্র ১০০টিতে ২৪ কামরার ট্রেন দাঁড়াতে পারে।
হাওড়া-শিয়ালদহের মতো স্টেশনেও সব প্ল্যাটফর্মে ২৪ কামরার ট্রেন থামার মতো দৈর্ঘ্য নেই। হাওড়ায় নিউ এবং ওল্ড কমপ্লেক্স মিলিয়ে ২৩টি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে। ওল্ড কমপ্লেক্সে নয় থেকে ১৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ার জন্য ব্যবহৃত হয়। শিয়ালদহে ২০টি প্ল্যাটফর্ম থাকলেও মেল এবং এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়ার জন্য ব্যবহৃত হয় মূলত ৯এ এবং ৯বি প্ল্যাটফর্ম। ট্রেনের জন্য যাত্রীরা রেল স্টেশনে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকাটাও পছন্দ করেন না বলে জানানো হয়েছে সিএজি-র রিপোর্টে। তাতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, স্টেশনের সাজসজ্জা বৃদ্ধি, ক্যাফেটারিয়া, ওয়াইফাইয়ের মতো বিষয়ের বদলে ট্রেন চলাচলের মূল সমস্যাগুলিকে চিহ্নিত করে সেগুলির সুরাহার ব্যবস্থা করা হোক।