জটে দার্জিলিং
বন্ধ কেন চলছে, এই প্রশ্ন তুলে মঙ্গলবার সকালে ক্ষোভ জানাল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। আর তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মিরিকে মোর্চার ডাকা সর্বদল বৈঠকে সিদ্ধান্ত হল, বন্ধ এখনই তুলে নেওয়ার প্রশ্ন নেই। বরং সমতলে মিছিল, আমরণ অনশনের মাধ্যমে আন্দোলনের সুর আরও চড়ানো হবে।
চার বছর আগেই পাহাড়ের বন্ধ বেআইনি ঘোষণা করেছিল হাইকোর্ট। সেখানকার স্বাভাবিক জনজীবন যাতে বিপর্যস্ত না হয়, সেই ব্যাপারে রাজ্যকে নির্দেশও দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি। তার পরেও এ বারে পাহাড়ে ২৬ দিন ধরে বন্ধ চলছে। এই নিয়ে ক্ষুব্ধ ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে এ দিন বলেন, ‘‘বন্ধ আটকাতে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই!’’ এ বিষয়ে ডিভিশন বেঞ্চের আর এক বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘পাহাড়ের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।’’
পাহাড়ের একাংশের বক্তব্য, চড়া সুরে আন্দোলন চালানোর দাবি রয়েছে পাহাড়ের কট্টরপন্থীদের মধ্যেই। তবে হাইকোর্টের এ দিনের উষ্মা নিয়েও তাঁরা চিন্তিত। হাইকোর্ট এ দিন মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলার প্রসঙ্গও তুলেছে। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রের প্রশ্ন, এই মামলায় সিবিআই কী করছে? তারা অভিযুক্তদের কলকাতায় নিয়ে আসার ব্যবস্থা করছে না কেন?
মারমুখী: মিরিকে খুকরি হাতে মোর্চার মিছিল। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
শিশুদের নিয়ে মিছিল করার মামলায় এ দিনই আবার শিশু সুরক্ষা কমিশন বিমল গুরুঙ্গের নামে দ্বিতীয় বার সমন পাঠিয়েছে। এই মামলায় ৩১ জুলাই গুরুঙ্গকে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। না এলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: পাহাড়ে দ্রুত শান্তি ফিরবে, বার্তা মমতার
পাহাড়ের অন্য একটি অংশ অবশ্য মনে করছে, এই পরিস্থিতিতে কড়া অবস্থান রাখা ছাড়া উপায় নেই। কারণ, সে ক্ষেত্রে রাজ্য ও কেন্দ্রের সঙ্গে দর কষাকষিতে সুবিধা হবে বলে মোর্চার একাংশের বিশ্বাস। বিশেষ করে কেন্দ্র, রাজ্য যখন বারবার শান্তি ও আলোচনার বার্তা দিচ্ছে। এ দিনও দিঘায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘পাহাড়ে অচিরেই শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে।’’
পাহাড়ের দাবি
বন্ধ চলবে। ১৫ জুলাই থেকে সব দলের প্রথম সারির নেতাদের আমরণ অনশন
পাহাড়ে গুলি চালানোয় মৃত্যু-সহ সব হিংসাত্মক ঘটনার সিবিআই তদন্ত করতে হবে।
সব উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানদের ইস্তফা দিতে হবে ১৪ জুলাইয়ের মধ্যে।
হাইকোর্টের মন্তব্য
বন্ধ আটকাতে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই। কেন্দ্রে ও রাজ্যে আলাদা শাসক। তাই দুর্ভোগ পোহাতে হবে সাধারণ মানুষকে!
এ দিন হাইকোর্টের শুনানিতে পাহাড়ে আধাসেনা মোতায়েনের প্রসঙ্গও ওঠে। সে ক্ষেত্রেও কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে কেন এখনও বোঝাপড়ার অভাব রয়েছে, এই বিষয়টি সামনে এসে পড়ে। তখন বিচারপতি মাত্রে বলেন, ‘‘কারণ, কেন্দ্রে ও রাজ্যে আলাদা শাসক। আর এর জন্য দুর্ভোগ হবে পাহাড়ের সাধারণ মানুষের!’’ শেষে ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, এই মামলায় সিবিআইকেও যুক্ত করতে হবে। আর ১০ জুলাই, সোমবার কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে কী আলোচনা হয়েছে, দু’পক্ষকেই তা হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে।