Calcutta High Court

‘পড়ুয়া না থাকলে শিক্ষক পুষে লাভ নেই’! বদলি মামলায় মন্তব্য বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর

দিল্লি যদি মডেল স্কুল করে দেখাতে পারে, পশ্চিমবঙ্গ কেন নয়? প্রয়োজনে অর্থ (ফান্ড) জোগাড় করতে হবে। স্কুলে শিক্ষক বদলি সংক্রান্ত এক মামলার পর্যবেক্ষণে এমনই উল্লেখ করল কলকাতা হাই কোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১২:২৮
Share:

শুক্রবার শিক্ষক বদলির একটি মামলায় বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর পর্যবেক্ষণ, পড়ুয়াহীন স্কুল তুলে দেওয়া হোক। গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।

পড়ুয়া না থাকলে শিক্ষক পুষে লাভ নেই। তুলে দেওয়া হোক পড়ুয়াহীন স্কুল। দিল্লি যদি মডেল স্কুল করে দেখাতে পারে, পশ্চিমবঙ্গ কেন নয়? প্রয়োজনে অর্থ (ফান্ড) জোগাড় করতে হবে। স্কুলে শিক্ষক বদলি সংক্রান্ত এক মামলার পর্যবেক্ষণে এমনই উল্লেখ করল কলকাতা হাই কোর্ট। শুক্রবার রাজ্যের শিক্ষা দফতরকে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘‘পড়ুয়া অত্যন্ত কম থাকলে স্কুলের অনুমোদন প্রত্যাহার করে নিন। অযথা শিক্ষক পুষে লাভ নেই। যেখানে ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে, সেখানে শিক্ষকদের পাঠান।’’

Advertisement

শিক্ষক বদলি সংক্রান্ত একটি মামলায় হাওড়ার একটি স্কুলের উদাহরণ তুলে ধরা হয়। যেখানে মাত্র ১৩ জন পড়ুয়ার জন্য পাঁচ জন শিক্ষক রয়েছেন। আবার ওই জেলারই রাসপুর গার্লস হাই স্কুলে ৫৫০ জন ছাত্রীর জন্য মাত্র আট জন শিক্ষক রয়েছেন। ওই স্কুলে ইতিহাস, অঙ্ক-সহ কয়েকটি বিষয়ে শিক্ষকের অভাব রয়েছে। ছাত্র এবং শিক্ষকের এমন অনুপাত দেখে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি বসু। তার পরই তিনি পড়ুয়াহীন স্কুলের অনুমোদন তুলে দেওয়ার পরামর্শ দেন।

বিচারপতির এই পরামর্শ শুনে শিক্ষা দফতরের আইনজীবী জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপ করলে সমস্যা হতে পারে। রাজনৈতিক চাপ আসতে পারে। বিচারপতি বসু পাল্টা বলেন, ‘‘রাজনৈতিক চাপ ভুলে যান। স্কুলের এই অবস্থা চলতে পারে না। স্কুলের হাল ফেরাতে হবে। আমরা কেন মডেল স্কুলের আশা করতে পারি না? মেয়েদের একটি স্কুলে শিক্ষক, শৌচালয়, নিরাপত্তা কর্মী নেই। এর পরও চুপ করে থাকতে হবে!’’

Advertisement

বিচারপতি এ-ও বলেন, ‘‘শিক্ষক বদলির নতুন নিয়ম ঠিক ভাবে পালন করুন। বদলির নিয়ম না মানলে পরের মাস থেকে বেতন বন্ধ করে দেব।’’ তাঁর কথায়, ‘‘শিক্ষকের পরিবর্তে পড়ুয়াদের কথা ভাবতে হবে। এই অচলায়তন ভাঙতে গেলে সময় লাগবে। কিন্তু আমরা করে ছাড়ব।’’ এর পরেই বিচারপতি বসু নির্দেশ দেন যে, রাসপুর গার্লস হাই স্কুলে এক জন সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা যায় কি না, হাওড়ার পুলিশ সুপারকে তা বিবেচনা করতে হবে।

হাওড়ার রাসপুর গার্লস হাই স্কুলের ইতিহাসের শিক্ষিকা বাসবী সামন্ত বাড়ির সামনের স্কুলে বদলি চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। স্কুলটি কেমন চলছে, তা নিয়ে প্রধানশিক্ষিকা তনিমা পাত্র দাসের কাছে রিপোর্ট তলব করে হাই কোর্ট। রিপোর্ট অনুযায়ী, রাসপুর গার্লস হাই স্কুলে মোট ছাত্রীর সংখ্যা ৫৮৫ জন। এর জন্য কমপক্ষে ১৫ জন শিক্ষক থাকার কথা। এখন সেখানে রয়েছেন ৮ জন শিক্ষক। ওই স্কুলে ৭ জন শিক্ষকের পদ খালি রয়েছে। এই রিপোর্ট দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি বসু।

হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, ওই স্কুলে অঙ্ক, জীবনবিজ্ঞান বিষয়ে কোনও স্থায়ী শিক্ষক নেই। এই শিক্ষিকা বদলি হলে সেখানে আর ইতিহাসের কোনও শিক্ষক বা শিক্ষিকা থাকবেন না। এর পরেই ক্ষোভপ্রকাশ করে বিচারপতি বসু বলেন, ‘‘ভাবতে অবাক লাগে এই স্কুলের ছাত্রীদের ইতিহাস পড়াবেন কে, তা নিয়ে কেউ চিন্তিত নন। সম্প্রতি এই স্কুল থেকে চার জন শিক্ষিকা বদলি নিয়ে অন্য স্কুলে গিয়েছেন। আর তা মঞ্জুর করেছেন প্রধানশিক্ষিকা এবং শিক্ষা দফতর। এটা কি জঙ্গলের আইন? বিষয়টি নিয়ে তদন্তও হতে পারে।’’ এর পর প্রধানশিক্ষিকার কাছে স্কুলের পরিকাঠামো নিয়ে রিপোর্ট চায় হাই কোর্ট। সেখানেও অনেক খামতি দেখা যায়। দেখা যায়, স্কুলে পানীয় জল এবং শৌচালয়ে সমস্যা রয়েছে। তার পরেই শুক্রবার হাওড়ার ওই স্কুলের হাল ফেরানোর বিষয়ে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি বসু। তিনি জানিয়েছেন, এ বার পড়ুয়াদের কথা ভাবতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন